শেখ হাসিনার অধিনে কোনো নির্বাচন হবে না : সিলেটে গয়েশ্বর রায়

নিজস্ব প্রতিবেদক


সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩
০১:৩৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩
০৪:৪৬ অপরাহ্ন



শেখ হাসিনার অধিনে কোনো নির্বাচন হবে না : সিলেটে গয়েশ্বর রায়


বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন দিতে হবে। শেখ হাসিনার অধিনে দেশে কোন নির্বাচন হবে না, দেশের মানুষ হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামীলীগ লাখ লাখ কেটি টাকা বিদেশে পাচার করে ব্যাংক গোলিকে খালি করে দিয়েছে।’

আজ বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে সিলেট নগরের ঐতিহ্যবাহী সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বর্তমান সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ভৈরব থেকে সিলেট অভিমূখে শুরু হওয়ার তারণ্যের রোড মার্চ শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সূচিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন।

সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খছরু মাহমুদ চৌধুরী। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ, দেশনায়ক তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না। দেশে গণতন্ত্র নেই, মানুষ ভোট দিতে পারে না, দিনের ভোট রাতে হয়ে যায়, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। তাই মানুষ শেখ হাসিনাকে আর এক মুহুর্তও ক্ষমতা দেখতে চায় না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় আসার জন্য আন্দোলন করছি না। আমরা আন্দোলন করছি গণতন্ত্রের জন্য, ভোটাধিকারের জন্য। তাই পরিষ্কার কথা, সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন দিতে হবে। শেখ হাসিনার অধিনে দেশে কোন নির্বাচন হবে না, দেশের মানুষ হতে দেবে না।’

তিনি আরো বলেন, `যে দেশে গণতন্ত্র নেই, মানুষ ভোট দিতে পারে না, দিনের ভোট রাতে হয়, অর্থ পাচার হয়, তাই বিশ্ববাসী তাদের পক্ষে নেই। গোটা বিশ্ব অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়।' তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি, যা শেখ হাসিনা বুঝতে পারছেন না। এখন শক্ত কর্মসূচি দিতে হবে, আর তা হচ্ছে হরতাল। আমরা আওয়ামী লীগের মতো লগি বৈঠা দিয়ে মানুষ মারি নাই, লাশের উপর নিত্য করি নাই।’

গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘আমরা ৭১ সালে শহীদ জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার, সাম্য ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। এখন গণতন্ত্রের জন্য, বাক স্বাধীনতার জন্য এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে।’

সরকার গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘তারা সাংবাদিক সাগর ও রুনী হত্যাকাণ্ডের বিচার করে নাই।’ আওয়ামীলীগ লাখ লাখ কেটি টাকা বিদেশে পাচার করে ব্যাংকগুলোকে খালি করে দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ডলারের কারণে এলসি করা যাচ্ছে না। ভোট চোরকে মানুষ বিশ্বাস করে না। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ ভোট চুরি করে না ‘

প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির খছরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এক দফা এক দাবীতে এই রোডমার্চ, তা হলো ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ। এই সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে, নির্বাচন কমিশন ভেঙ্গে দিতে হবে, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, এই দাবীতে মানুষ জীবন বাজি রেখে রাস্তায় নেমেছে।’

দেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে বিদায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তারা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। দেশের মানুষের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেখ হাসিনার অধিনে নির্বাচন হলে কোন পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। কারণ তারা জানে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন পরিবেশ নাই। বিশ্ববাসী একটি গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য একটি নির্বাচন চায়।’ তিনি বলেন, ‘তাই সরকারের ভোট চুরি করার প্রকল্প ভেঙ্গে দিতে হবে, তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ভোট চোর ও তাদের সহযোগী সকলের তালিকা করতে হবে। তাই সরকারকে বিদায় করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পরে এটি সবচেয়ে বড় মুক্তির সংগ্রাম। এজন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।’

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, আরিফুল হক চৌধুরী ও ড. এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপির যুগ্ন মহাসচিব হাবিবুন্নবী খান সোহেল ও খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবন ও এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, সহ ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মিজানুর রহমান চৌধুরী ও হাদিয়া চৌধুরী মুন্নী।

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস.এম জিলানী, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।

সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি, অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য দেন, অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন, মামুনুর রশিদ মামুন, মিফতাহ সিদ্দিকী, রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, নজিবুর রহমান নজিব, হাসান আহমদ পাটোয়ারী রিপন, সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, শামীম আহমদ, সৈয়দ সাফেক মাহবুব, মকসুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট মুমিনুল ইসলাম মুমিন, শাহনেওয়াজ বক্ত তারেক, মির্জা সম্রাট হোসেন, মাহবুবুল হক চৌধুরী, শাকিল মোর্শেদ, আফসর খান, তাহসিন শারমিন তামান্না, নিগার সুলতানা ডেইজী, নিজাম উদ্দিন তরফদার, সুরমান আলী, জাহাঙ্গীর হোসেন জীবন, সুদীপ জ্যোতি এষ, দেলোয়ার হোসেন দিনার, ফজলে রাব্বি আহসান প্রমূখ।

এর আগে রোড মার্চকে বরণ করতে বিকেল তিনটা থেকেই আলিয়ার মাঠে জড়ো হতে থাকেন বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিকেল ৪টার আগেই মাঠ পূর্ণ  হয়ে যায়। এসময় বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা রোড মার্চ পৌছার অপেক্ষা করতে থাকেন। দীর্ঘ অপেক্ষার সময় নেতাকর্মীদের  উজ্জীবিত রাখতে মঞ্চ থেকে বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন জাসাস এর শিল্পীবৃন্দ।

সকালে ভৈরর শুরু হওয়া রোডমার্চ রাত পৌনে ৮টায় সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে এসে পৌঁছে। এসময় সমেবেত জনতা মুহুর্মুহু কড়তালি ও শ্লোগান দিয়ে রোডমার্চের গাড়ি বহরকে স্বাগত জানান।


এএফ/১২