সিলেট মিরর ডেস্ক
আগস্ট ২২, ২০২৩
০১:৪০ পূর্বাহ্ন
আপডেট : আগস্ট ২২, ২০২৩
০১:৪১ পূর্বাহ্ন
আর্ন্তজাতিক মানব পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে মোটা অংকের টাকা ও জীবন খুয়েছেন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার সৈয়দ মশাহিদ আলী নামের এক ব্যবসায়ী। ইরোপের দেশ ইতালি পাঠানোর নামে ওই ব্যবসায়ীকে লিবিয়া নিয়ে আটকে রেখে দফায় দফায় অমানবিক নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও কলে দেখিয়ে দেশে থাকা পরিবারের কাছ থেকে কয়েক দফায় ২২ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছে। সর্বশেষ গত জুন মাসে আরও ১৬ লাখ টাকা দাবি করে ওই চক্র। তাদের দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় তাকে হত্যা করে লাশ গুম করেছে তারা।
সোমবার সিলেট প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন দিরাই উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের সৈয়দ মশাহিদ আলীর স্ত্রী সানোয়ারা বেগম। তাঁর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভাগ্নে এম বেলাল আহমদ।
এ সময় তিনি লিখিত বক্তব্যে সানোয়ারা বেগম বলেন, তাঁর স্বামী একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। আর্থিক ও সামাজিক উন্নতির আশায় তিনি ইউরোপ যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। তখন জগন্নাথপুরের কলকলিয়া ইউনিয়নের পড়ারগাও গ্রামের শাহীন আহমদের স্ত্রী আমিনা বেগম তালুকদার জানায় তার স্বামী শাহীন আহমদ লিবিয়ায় থাকেন এবং তিনি লিবিয়া হয়ে ইউরোপের দেশ ইটালিতে পাঠাতে পারবে। এ সময় একই গ্রামের লাল মিয়ার পুত্র রোকন আহমদ, মৃত ইরশাদ আলীর পুত্র তোতা মিয়া ও ছন্দন মিয়া এবং রঙ্গুম উল্লাহর পুত্র হারুণ মিয়া ও ইসহাক আলীর পুত্র শাহজাহান আহমদ তার সাথে ছিলেন এবং তারাও শাহীনের স্ত্রী আমিনার সাথে মিলে লিবিয়া হয়ে ইউরোপে লোক পাঠান বলে নিশ্চিত করেন।
লিখিত বক্তব্যে সানোয়ারা জানান, আমিনা বেগম তালুকদারসহ তারা সবাই মিলে মশাহিদ আলীকে ইতালি পাঠানোর বিনিময়ে আমাদের কাছ থেকে নগদ ৭ লাখ টাকা গ্রহণের চুক্তি করে। তখন শাহীনের স্ত্রী ও তার সহযোগী রোকন আহমদ, তোতা মিয়া ও ছন্দন মিয়া, শাহজাহান এবং হারুণ মিয়া মিলে রোকন মিয়ার মাধ্যমে মশাহিদ আলীর পাসপোর্ট (বি কিউ ০৪৪৫২৮৬) ও প্রথম দফায় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করে।
সানোয়ারা অভিযোগ করে বলেন, আমিনা বেগম তালুকদার ও তার সহযোগীরা ২০২০ সালে ২৯ নভেম্বর তার স্বামীকে প্রথমে আরব আমিরাতের দুবাই পাঠায়। দুবাই থেকে লিবিয়ায় নিয়ে পরে আরো ৩ লাখ টাকা গ্রহণ করে। লিবিয়ায় নেওয়ার পর মানবপাচার চক্র তার স্বামী সৈয়দ মশাহিদ আলীকে জিম্মি করে ও বারবার শারীরিক নির্যাতন করে। মোশাহিদের লাশ সমূদ্রে ফেলে দেওয়ার ও গুম করার ভয় দেখিয়ে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত দফায় দফায় তাদের কাছ থেকে মোট ২২ লাখ মুক্তিপণ আদায় করে। কিন্তু তাকে মুক্তি না দিয়ে কিংবা ইতালি না পাঠিয়ে মশাহিদ আলীকে গুম করে রাখে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, একপর্যায়ে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি লিবিয়ায় জিম্মি থাকাবস্থায় আমিনা বেগম তালুকদারসহ উরফে (আকলিমা) তার সহযোগী রোকন আহমদ, তোতা মিয়া, ছন্দন মিয়া ও হারুণ মিয়ার কথায় আমিনার স্বামী শাহীন ও তার অজ্ঞাত সহযোগীরা অমানবিক নির্যাতন করে তার স্বামীকে হত্যা করে লাশ গুম করে রেখেছে। সানোয়ার অভিযোগ করেন এ বিষয়ে শাহীনের স্ত্রী আমিনা বেগম ও তার সহযোগীদের কাছে মশাহিদ আলীকে জীবিত অথবা মৃত ফেরত চাইলে তারা উল্টো সন্তানাদিসহ তাকে অপহরণ ও খুন গুম করার হুমকি দেয়। এ অবস্থায় সানোয়ারা বেগম তাঁর স্বামী সৈয়দ মশাহিদ আলীকে (জীবিত অথবা মৃত) উদ্ধার এবং হাতিয়ে নেওয়া ২২ লাখ টাকা ফেরত পেতে এবং এই ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজিপি ও র্যাবের মহাপরিচালকসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ও সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ মশাহিদ আলীর বৃদ্ধ পিতা সৈয়দ আশহাদ আলী, চাচাতো ভাই সৈয়দ আকবর আলী, সৈয়দ মুজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এএন/০৭