জ্বর-সর্দিতে প্রেসক্রিপশন বহির্ভূত এন্টিবায়োটিক সেবন করছে দেশের ৭৬ শতাংশ শিশু

হাসান নাঈম, শাবিপ্রবি


জুলাই ৩১, ২০২৩
১১:৩৬ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০১, ২০২৩
০৯:০৩ অপরাহ্ন



জ্বর-সর্দিতে প্রেসক্রিপশন বহির্ভূত এন্টিবায়োটিক সেবন করছে দেশের ৭৬ শতাংশ শিশু
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় এমন তথ্য মিলেছে


বাংলাদেশে জ্বর কিংবা সর্দি হলে প্রেসক্রিপশন বহির্ভূত এন্টিবায়োটিক সেবন করানো হচ্ছে ৭৬ দশমিক ৩ শতাংশ শিশুদের। যাদের বয়স পাঁচ বছরের নিচে। এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের এ হার সর্বোচ্চ, বিশ্বজুড়ে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) গবেষকদের গবেষণায় এমন তথ্য উঠে আসে।

ডেমোগ্রাফি ও হেলথ সার্ভে (ডিএইচএস) এর ৫৯ টি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের ডেটা নিয়ে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়।

গবেষণার বিষয়ে আজ সোমবার (৩১ জুলাই) দুপুরে সিলেট মিরর-এর সঙ্গে কথা হয় গবেষণা দলের তত্ত্ববধায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জামাল উদ্দিনের সাথে।

এ দলে রয়েছেন, পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাব্বির হোসেন, মো. ফখরুল ইসলাম, প্রসেনজিৎ বসাক অর্ক, মাহফুজুর রহমান, তানভীর আহমেদ, মো. আব্দুল বাকের চৌধুরী এবং ভ‚গোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী তালহা শেখ আহমেদ।

গকেষণার বিষয়ে ড. মো. জামাল উদ্দিন সিলেট মিরর-কে বলেন, ‘সম্প্রতি ৫৯ টি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের ডেটা নিয়ে জ্বর বা সর্দিতে ঔষধ সেবন নিয়ে আমরা একটি গবেষণা পরিচালনা করি। এতে দেখা যায়, এসব দেশগুলোতে জ্বর বা সর্দির জন্য প্রতি চারজনে একজন শিশু প্রেসক্রিপশন বহির্ভূত এন্টিবায়োটিক ঔষধ সেবন করে থাকে। যাদের বয়স পাঁচ বছরের নিচে।’

সম্প্রতি 'দা ল্যানসেট ডিসকভারি সায়েন্স' এর অন্তর্ভুক্ত স্কোপাস ইনডেক্সড (ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর ১৭.০৩৩) কিউ-১ জার্নাল 'ই-ক্লিনিক্যালমেডিসিন' আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ গবেষক বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে পাঁচ বছরের নিচের বাচ্চাদের প্রেসক্রিপসন বহির্ভূত এন্টিবায়োটিক সেবনের সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন চিকিৎসক এবং সরকারি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের প্রেসক্রিপশন ব্যতীত অনুমোদনহীন এন্টিবায়োটিকের পরামর্শদাতাদেরকে (ফার্মেসি, ঔষধ বিক্রেতা, নার্স, পরিবার, পরিজন, বন্ধু ইত্যাদি) প্রেসক্রিপশন বহির্ভূত উৎস হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।’

গবেষণার প্রতিবেদনে উঠে আসে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে তানজানিয়া, বাংলাদেশ, কঙ্গো ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক, কঙ্গো, এবং চাঁদ দেশের শিশুরা ৫০ শতাংশের বেশি  প্রেসক্রিপশন বহির্ভূত এন্টিবায়োটিক সেবন করে থাকে। উপমহাদেশগুলোর মধ্যে এশিয়ার মহাদেশের শিশুরা সবচেয়ে বেশি প্রেসক্রিপশন বহির্ভূত এন্টিবায়োটিক সেবন করে। তবে সবচেয়ে কম সেবন করে ওশেনিয়া মহাদেশের শিশুরা। এছাড়া আয়ের দিক বিবেচনায়, নিম্ন আয়ের দেশের শিশুরা মধ্যম আয়ের দেশের শিশুদের থেকে অধিক প্রেসক্রিপসন বহির্ভূত এন্টিবায়োটিক সেবন করে থাকে।

গবেষণায় আরো উঠে আসে, মায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতার বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রেসক্রিপশন বহির্ভূত এন্টিবায়োটিক ঔষধ সেবনের হার কমছে। পরিবারের বাচ্চার সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রেসক্রিপসন বহির্ভূত এন্টিবায়োটিক সেবনের হারও বৃদ্ধি পায়। তবে পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে প্রেসক্রিপসন বহির্ভূত এন্টিবায়োটিক সেবনের তেমন তারতম্য পাওয়া যায়নি।

এ থেকে পরিত্রানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে প্রেসক্রিপশন বহির্ভূত এন্টিবায়োটিক বিক্রি ও বিতরণ রোধ করার জন্য দেশের আইন প্রয়োগ আরো জোরদার করা দরকার। বিশেষ করে, ফার্মেসি ও অন্যান্য ঔষধ বিক্রেতাদের দ্বারা প্রেসক্রিপশন বহির্ভূত এন্টিবায়োটিক বিক্রয় বন্ধের জন্য সরকার ও নীতিনির্ধারকদের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’

পাশাপাশি স্বাস্থ্যশিক্ষা প্রচারণা, বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও পরিষেবা এবং এন্টিবায়োটিক এর উৎসগুলো উন্নত করা উচিত। স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের দ্বারা যুক্তিসংগত এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রচার এবং বিকল্প স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রেসক্রিপশন বহির্ভূত এন্টিবায়োটিক এর চাহিদা অনেকাংশে কমানো সম্ভব বলেও জানান তিনি।


এএফ/১৬