রাইজ ও ইউরোকিডসের বার্ষিক সমাবর্তনে সিলেটের হারানো ঐতিহ্যের ছাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুন ২৫, ২০২৩
০৪:০৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ২৫, ২০২৩
০৪:০৭ পূর্বাহ্ন



রাইজ ও ইউরোকিডসের বার্ষিক সমাবর্তনে সিলেটের হারানো ঐতিহ্যের ছাপ


শিশু-কিশোরদের নাচ, গান ও নাটিকা পরিবেশন মঞ্চকে প্রাণবন্ত করে তোলে। তাদের পরিবেশনায় ছিল সিলেট তথা গ্রামবাংলার হারানো ইতিহাস-ঐতিহ্যের ছাপ। পুরোনো দিনের বিয়ের গানের সঙ্গে নাচ, পালকি বহন, বধূকে সামনে নিয়ে ধামাইল গান পরিবেশন ইত্যাদি দর্শকদের মন কাড়ে। এছাড়া ষড়ঋতু, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিখ্যাত খাবারের প্রতীকী পরিবেশনা ও বিভিন্ন নাটিকা উপস্থাপন করে শিশু-কিশোরেরা। 

গতকাল শনিবার রাইজ ও ইউরোকিডসের বার্ষিক সমাবর্তন অনুষ্ঠানটি কচিকাঁচার আসরে পরিণত হয়েছিল। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে এ অনুষ্ঠান হয়। সকাল ১০টায় কুরআন ও গীতা পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে জাতীয় সংগীত ও রাইজ সংগীত পরিবেশন করা হয়। 

দর্শকের হইহুল্লোড় আর উৎসাহ-উদ্দীপনায় শিশু-কিশোরদের পরিবেশনা আরও দুরন্ত গতি পায়। একের পর এক পরিবেশনা দর্শকদের উপহার দেন শিশু-কিশোররা। অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে উৎসবে পরিণত হয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানটি। এ সময় শিক্ষণীয়, ইতিহাস-ঐতিহ্য বিষয়ক নানা নাটিকা পরিবেশন করা হয়। বাংলা গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা নাচ পরিবেশন করেন। এতে শাবিপ্রবির কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। 

ইউরোকিডসের শিক্ষার্থী সমুদ্র দাস কাব্য বলেন, ‘মা আমাকে নিয়ে এসেছেন। অনুষ্ঠানে এসে খুব ভালো লাগছে। এ অনুষ্ঠান থেকে অনেককিছু শিখেছি। আনন্দও পেয়েছি খুব।’

শিক্ষার্থীর অভিভাবক পপি তালুকদার বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নানা পরিবেশনা ছিল উপভোগ করার মতো। যা যেকোনো মানুষকে উচ্ছ্বসিত করবে। এসব অনুষ্ঠান থেকে শিশু-কিশোরেরা অনেককিছু শিখতে পারবে। পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুদের সাংস্কৃতিক সম্পৃক্ততাও প্রয়োজন।’

শিক্ষার্থী ফাইনান চৌধুরী ইনায়া বলেন, ‘নাচ, গান ও নাটিকা পরিবেশন দেখে খুব আনন্দ পেয়েছি। পরিবেশনায় অংশ নিয়ে ভালো লেগেছে।’

অভিভাবক নাজমীন ইসলাম রুবি বলেন, ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শিশুদের মননশীল হতে ভূমিকা রাখে। শিশুদের সাংস্কৃতিক চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে ইউরোকিডসের ভূমিকা প্রশংসনীয়। তারা এর ধারা অব্যাহত রাখুক। তাদের জন্য শুভ কামনা।’

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন, ইউরোকিডসের কেন্দ্র প্রধান রুশিনা চৌধুরী। প্রধান অতিথি ছিলেন, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক। তিনি বলেন, ‘এখানে সারাদেশের ৬৪ জেলার শিক্ষক-শিক্ষার্থী আছেন। শিশুরা আজকে ভালো পরিবেশনা করেছে। ইউরোকিডস ও রাইজ একটি গ্লোবাল প্রতিষ্ঠান। যারা এই প্রতিষ্ঠান এনেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। রাইজ দশবছর আগে পদযাত্রা শুরু করেছে। তারা স্মার্ট বিষয়টাকে শুরু থেকেই গুরুত্ব দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এখন সব চ্যালেঞ্জ গ্লোবাল। আমরাও এর থেকে পৃথক নই। যার ফলে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থা দরকার। গ্লোবাল এডুকেশন ছাড়া গ্লোবাল সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। আজকে এখানে পরিবেশনার মাধ্যমে সিলেটের ইতিহাস, বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে। ইউরোকিডস ও রাইম গ্রাম ও গ্লোবাল, দুটোকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে। গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ছেলেমেয়েদের প্রস্তুত রাখতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিশুদের মানসিক বিকাশে খেলাধুলা ও সংস্কৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে শিশুদের খেলার মাঠ প্রয়োজন। সরকারের উচিত আনুষঙ্গিক বিষয়ে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা করা। যেমন খেলার মাঠ দিতে পারে সরকার। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারের পাশাপাশি রাইজ ও ইউরোকিডসের মতো প্রতিষ্ঠানকেও ভূমিকা রাখতে হবে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, সিলেট উইমেনস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতলের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শাহানা ফেরদৌস চৌধুরী, জজ ও জুডিশিয়াল ট্রেইনার আল আসাদ মো. মাহমুদুল হাসান, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাইরোজ তাসনিম, বোর্ড অব ডিরেক্টর ও সিলেট-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী, বোর্ড অব ডিরেক্টর ও বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী, বোর্ড অব ডিরেক্টর গোলাম রাব্বানী চৌধুরী, বোর্ড অব ডিরেক্টর ফাহিম আহমদ চৌধুরী। 

অনুষ্ঠানসূচির মধ্যে ছিল, ইউরোকিডসের পরিবেশনা, ইউরোসিনিয়র সমাবর্তন, রাইজ প্রাইমারি পরিবেশনা, গ্রেড ফাইভ সমাবর্তন, রাইজ মাধ্যমিক সমাবর্তন, রাইজ মাধ্যমিক পরিবেশনা, রাইজ সমাবর্তন। অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নাচ, গান ও নাটিকা পরিবেশন করেন। পরে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হাতে সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া বার্ষিক সেরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীর নাম ঘোষণা করা হয় এবং তাদের হাতে সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। 

অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন, রাইসের অধ্যক্ষ ইখলাসুর মো. রহমান। 


এএফ/০১