সিলেট মিরর ডেস্ক
জুন ১৭, ২০২৩
০৩:৪৪ অপরাহ্ন
আপডেট : জুন ১৭, ২০২৩
০৩:৪৪ অপরাহ্ন
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শুক্রবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, সকাল ১১টা ৪৬ মিনিটে হালকা এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪.৫ আর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের গোলাপগঞ্জ। তবে এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানায়, গতকালের ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভূমির ১০ কিলোমিটার গভীরে। এর আগে গত ৫ মে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় ৪.৩ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উৎপত্তিস্থল বিবেচনায় গতকালের ভূমিকম্পটি ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয় অংশে সংঘটিত হয়েছে। মাত্রা বিবেচনায় এটি হালকা ধরনের হলেও উৎপত্তির স্থান ও ধরন বিবেচনায় এটি ভবিষ্যতে বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দেয়।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ভূমিকম্পবিষয়ক গবেষক সৈয়দ হুমায়ুন আখতারবলেন, ‘গতকালের ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট শহরের খুব কাছে। বাংলাদেশ তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। আমাদের গবেষণায় আমরা দেখেছি, ভূমিকম্পের আমাদের দুটি প্রধান উৎস আছে। একটা ডাউকি ফল্ট, আরেকটা সিলেট থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চল।
এটাকে আমরা বলি সাবডাকশন জোন। একটা প্লেট আরেকটা প্লেটের নিচে যে অংশে তলিয়ে যায় সেটাকে বলে সাবডাকশন জোন।’
সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘গতকালের ভূমিকম্পটি সাবডাকশন জোনে হয়েছে। সিলেট থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সাবডাকশন জোনে গত ৮০০ থেকে এক হাজার বছরের মধ্যে বড় ভূমিকম্পের কোনো ইতিহাস নেই।’ তিনি বলেন, এই সাবডাকশন জোনে ৮ মাত্রার বেশি পরিমাণ শক্তি জমা হয়ে আছে।
এখানে যেকোনো সময় বড় ভূমিকম্প হতে পারে।
ডাউকি ফল্টের পূর্ব প্রান্তেও বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান হুমায়ুন আখতার। তিনি বলেন, ডাউকি ফল্টের পশ্চিম প্রান্তে এর আগে অনেক ভূমিকম্প হয়ে ওই অঞ্চলের শক্তিটা বের করে দিয়েছে। কিন্তু পূর্ব প্রান্তে সুনামগঞ্জ থেকে জৈন্তিয়াপুর—এই অংশে গত ৪০০ থেকে ৫০০ বছরে বড় কোনো ভূমিকম্পের ইতিহাস নেই। ফলে এখানে যে শক্তি সঞ্চিত আছে তা যেকোনো সময় বের হয়ে আসতে পারে।
ভূমিকম্প গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, গতকালের ভূমিকম্পটি ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয় একটি অংশে সংঘটিত হয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে সক্রিয় ফাটলরেখা ডাউকি ফল্ট এই ভূমিকম্পের কাছাকাছি অবস্থিত। এর উৎসস্থল থেকে আরেকটু দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে (শ্রীমঙ্গল) ১৯১৮ সালে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। আবার যেখানে ভূমিকম্পটি সংঘটিত হয়েছে সেটা হলো বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাবডাকশন জোনে। অর্থাৎ যেখানে ইন্ডিয়ান প্লেট ও ইউরেশিয়ান প্লেট একটি আরেকটির নিচে চলে যাচ্ছে, সেই সাবডাকশন জোনের একটি ছোট ফাটলরেখায় এই ভূমিকম্প হয়েছে।
মাকসুদ কামাল বলেন, ‘ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয় এই ধরনের কোনো জায়গায় যদি ভূমিকম্প হয় সেটা প্রমাণ করে ওই জায়গার ভূ-অভ্যন্তরে শক্তি সঞ্চয় হচ্ছে। ১৮৯৭ ও ১৯১৮ সালের পর এই অঞ্চলে আর কোনো বড় ভূমিকম্প হয়নি। কিন্তু ভূ-অভ্যন্তরে শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে। এই ধরনের অবস্থাকে বলা হয় সিসমিক গ্যাপ। সিসমিক গ্যাপে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা থাকে। যেহেতু এখানে শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে, ভবিষ্যতে বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত আমরা এই ভূমিকম্প থেকে পাচ্ছি।’
সূত্র: কালের কণ্ঠ
এএফ/০২