ইসলামের মূল বাণী দেশব্যাপী পৌঁছাতেই মডেল মসজিদ: প্রধানমন্ত্রী

সিলেট মিরর ডেস্ক


এপ্রিল ১৭, ২০২৩
০৮:৫১ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ১৭, ২০২৩
০৮:৫১ অপরাহ্ন



ইসলামের মূল বাণী দেশব্যাপী পৌঁছাতেই মডেল মসজিদ: প্রধানমন্ত্রী
সিলেটের বিস্বনাথসিহ ৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন


ইসলাম একমাত্র শান্তির ধর্ম, এর মূল বাণী দেশব্যাপী পৌঁছে দিতেই সারাদেশে মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার (১৭ এপ্রিল) চতুর্থ পর্যায়ে ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে সরকারপ্রধান এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম ধর্মের প্রচার-প্রসার, ইসলামী শিক্ষা যাতে আরও উন্নতমানের হয় সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা ২০১৩ সালে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছি। কওমী মাদরাসায় দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমানের মর্যাদা আমরা এনে দিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম ধর্ম হলো একমাত্র শান্তির ধর্ম। যে ধর্মে নারীদের অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) যখন ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেছিলেন তখন ইসলাম ধর্ম প্রথম গ্রহণ করেন একজন নারী। তিনি ছিলেন তিনি ছিলেন বিবি খাদিজা (রা.)।

ইমাম-মুয়াজ্জিনদের কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬-২০০১ সালে যখন আমরা ক্ষমতায় ছিলাম তখন আমরা বিশেষ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে দেই এবং এই ট্রাস্ট ফান্ডে আমরা ‘সিড মানিও’ দিয়ে দেই। যাতে বৃদ্ধ বয়সে, অসুস্থ হলে যাতে করে তারা এই ট্রাস্ট থেকে সহযোগিতা পান সে লক্ষ্য নিয়েই কিন্তু আমরা এই ট্রাস্ট ফান্ড তৈরি করে দিয়েছি।

সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষ যাতে তার অধিকার পায়, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই লক্ষ্য নিয়েই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করেছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে দারিদ্রের হার আমরা কমাতে পেরেছি। অতি দরিদ্রের হার মাত্র ৫ দশমিক ৬ এ আমরা নামিয়ে এনেছি। আল্লাহর রহমতে দেশে কেউ অতিদরিদ্র থাকবে না, আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সততা নিয়ে কাজ করছি বলেই কিন্তু আল্লাহ আমাদের সহায়, যে কারণে আমরা অতি দরিদ্রের হার কমিয়ে আনতে পেরেছি।

উল্লেখ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটের বিস্বনাথসহ দেশজুড়ে আরো ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন। 

তিনি আজ তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে চতুর্থ ধাপে এসব মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। 

নতুন এসব মসজিদসহ প্রধানমন্ত্রী দেশজুড়ে ৯,৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য ৫৬৪টির মধ্যে এ পর্যন্ত ২শ’ মসজিদ উদ্বোধন করেছেন। 

এর আগে তিনি প্রথম দফায় ২০২১ সালের ১০ জুন ৫০টি মসজিদ, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় আরো ৫০টি এবং তৃতীয় দফায় ১৬ মার্চ আরো ৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করেন।

অবশিষ্ট মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ ২০২৪ সালের জুন নাগাদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। 

অনুষ্ঠানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান ও মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান বক্তব্য রাখেন। 

প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলা ও সিলেট জেলার বিশ^নাথ উপজেলাকে অনুষ্ঠানে যুক্ত করা হয় এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা, আলেম-উলামাসহ সাধারণ মানুষ এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। 

এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসমূহে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ ওজু ও নামাজের আলাদা জায়গা রয়েছে। 

এছাড়া হজযাত্রীদের জন্যে রেজিষ্ট্রেশান ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র ও ইসলামিক লাইব্রেরী, অটিজম কর্ণার, দাফন পূর্ব আনুষ্ঠানিকতা, গাড়ি পার্কিং সুবিধা, হিফজখানা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষা ব্যবস্থা, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও ইসলামের দাওয়াতের জন্যে সম্মেলন কেন্দ্র, ইসলামি বই বিক্রয় কেন্দ্র, মসজিদসহ দেশি বিদেশী অতিথিদের জন্যে থাকার সুবিধা থাকবে। 

ইসলামের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং দেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে শেখ হাসিনা দেশজুড়ে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। 

প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল ইসলামি ভ্রাতৃত্ব ও এর মূল্যবোধ এবং সেইসাথে চরমপন্থা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামের সারমর্ম প্রচার করা, কারণ ধর্ম কখনই এগুলোকে সমর্থন করে না।

এছাড়া এটি সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রচারের পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ ও নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতেও মনোনিবেশ ঘটাবে। 

ক্যাটাগরি এ এর আওতায় ৬৪টি জেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এলিভেটর সুবিধা ও ২,৩৬০.০৯ বর্গ মিটার ফ্লোর স্পেসহ ৬৯টি চারতলা মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। 

ক্যাটাগরি বি এর আওতায় প্রতিটির ১৬৮০.১৪ বর্গ মিটার ফ্লোরস্পেসহ ৪৭৫টি মসজিদ এবং ক্যাটাগির সি এর আওতায় উপকূলীয় এলাকায় প্রতিটির ২,০৫২.১২ বর্গ মিটার ফ্লোর স্পেসসহ ১৬টি মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে।


এসই/০৫