প্রধানমন্ত্রীকে পেয়ে আপ্লুত চা শ্রমিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক


সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২২
০৯:৫২ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২২
১০:১১ অপরাহ্ন



প্রধানমন্ত্রীকে পেয়ে আপ্লুত চা শ্রমিকরা

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন চা শ্রমিকরা। অনেকে কথা বলতে গিয়ে আবেগে কান্না ধরে রাখতে পারছেন না। নিজেদের অভাব-অভিযোগের কথা প্রধানমন্ত্রীকে তারা তুলে ধরছেন। প্রধানমন্ত্রীও তাদের কথা মনযোগ দিয়ে শুনছেন। তিনি তাদের আশ্বস্ত করেছেন সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার। 

আজ শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জসহ দেশের চা বাগানগুলোর শ্রমিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল মাধ্যমে সরাসরি যুক্ত হয়ে মতবিনিময় শুরু করেন। 

শুরুতে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের পাত্রখোলা চা বাগান দলই ক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানস্থল থেকে সরাসরি কথা বলেন দুই নারী চা শ্রমিক। তারা হলেন রিতা পানিতা ও সোনমানি রাজ হংসিমান।

প্র্রধানমন্ত্রী সামনে নিজেদের সুখ দুঃখের কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এ দুই নারী। ধরা কণ্ঠে চোখের জল ফেলে প্রধানমন্ত্রী এভাবে সরাসরি কথা বলায় তাঁর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তারা। এছাড়াও রিতা পানিতা কমলগঞ্জের বাগানে প্রধানমন্ত্রীকে চায়ের দাওয়াত দেন। 

দুই নারী চা শ্রমিকের বক্তৃতা শেষে স্থানীয় চা শ্রমিকদের গাওয়া রেকর্ডেড দুটি গান পরিবেশন করে প্রধানমন্ত্রীকে শুনানো হয়। 

এদিকে বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগান এলাকার গলফ মাঠ থেকে চা শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে মতবিনিময় শুরু করেন। 

এর আগে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য  ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ পিপিএম, জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ, সিলেট জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন, সিলেট মহানগর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিবসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। 

 এ নিয়ে গতকাল থেকেই সিলেটের চা শ্রমিকদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। শ্রমিক নেতারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবিদাওয়া জানানোর বিষয় ঠিক করেন এবং এই আয়োজন সফল করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুপুরের মধ্যেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। 

অনুষ্ঠান প্রস্তুতির অংশ হিসেবে লাক্কাতুরা চা বাগানের গলফ মাঠে শামিয়ানা টানিয়ে অনুষ্ঠানস্থল সাজানো হয়। স্থানীয় অতিথিরা স্বাচ্ছন্দ্যে বসতে পারেন সে জন্য অনুষ্ঠানস্থলের চারদিকে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ফগার মিশিন দিয়ে মশকনিধন ওষুধ স্প্রে করা হয়েছে। এছাড়াও সিসিকের উদ্যোগে রাখা হয়েছে ‘ভ্রাম্যমাণ পাবলিক টয়লেট’। 

প্রসঙ্গত, দৈনিক মজুরি ১২০ থেকে ৩০০ টাকায় উন্নীতকরণের দাবিতে সিলেটসহ সারা দেশের চা শ্রমিকরা টানা ১৯ দিন আন্দোলন করেছেন। গত ৮ আগস্ট থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন তারা। ১৩ আগস্ট থেকে শুরু হয় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার আশ্বাসে গত ২২ আগস্ট শ্রমিকদের একাংশ আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে ফিরলেও আরেক অংশ আন্দোলন অব্যাহত রেখেছিলেন। চা শ্রমিকদের টানা ধর্মঘটে সারাদেশের বাগান থেকে চা-পাতা উত্তোলন, কারখানায় প্রক্রিয়াজাত ও উৎপাদন বন্ধ থাকে। এতে স্থবির হয়ে পড়ে দেশের চা শিল্প। এ অবস্থায় গত ২৭ আগস্ট শনিবার বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। এ বৈঠকে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি আনুপাতিক হারে তাদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বাড়ানো হবে। সবমিলিয়ে দৈনিক মজুরি হবে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা।

প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ১৭০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করে দেওয়ার পর ২৮ আগস্ট থেকে সিলেট বিভাগের সকল বাগানের চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন।  


এএফ/০২