জৈন্তাপুর প্রতিনিধি
আগস্ট ২৫, ২০২২
০৪:৫৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট : আগস্ট ২৬, ২০২২
০২:১৬ পূর্বাহ্ন
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, বৃহত্তর জৈন্তিয়ার ১৭ পরগনা সালিশ সমন্বয় কমিটির সাবেক সভাপতি, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবী আলহাজ্ব সিরাজ উদ্দিন আহমেদ ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাহির রাজিউন)
বুধবার (২৪ আগস্ট ) যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের নিজ বাসায় বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে নয়টায় তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাহার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি স্ত্রী চার ছেলে, দুই মেয়ে ছাড়াও আত্মীয় স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
সিরাজ উদ্দিন আহমদ ১৯৪৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা সদর নিজপাট চুনাহাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম আব্দুর রশিদ, মাতা মরহুমা হামিদা খাতুন।
জৈন্তাপুর এম. ই স্কুলে (বর্তমান জৈন্তাপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়) শিক্ষা জীবন শুরু করেন। পরে হরিপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে দশম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ১৯৬৪ সালে সেন্ট্রাল জৈন্তা হাইস্কুলের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে সিলেট পলিটেকনিকেল কলেজে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য ভর্তি হন।
কলেজ জীবনে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে সক্রিয় ভাবে জড়িয়ে পড়েন । ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় থাকায় তাকে কয়েকদিন জেল খাটতে হয়৷ শিক্ষা জীবন অসমাপ্ত করে পালিয়ে ঢাকায় চলে যান। ঢাকায় তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে জুনিয়র কমিশন পদে যোগ দেন। পশ্চিম পাকিস্তানী প্রশিক্ষকদের বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদ করায় বাঙ্গালী প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে তাদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। ১৯৭০ সালে সরকারী শ্রম অধিদপ্তরে চাকুরী নিয়ে নতুন কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি বগুড়ার গাইবান্ধা জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। ১৯৮০ সালে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ডেপুটিশন বিভাগে বদলি হন। এ সময় নানা চাপের মুখে তিনি চাকুরী হতে অব্যাহতি নেন ।
১৯৮৩ সালে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন । তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ১৮দফা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি হিসাবে জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত হন ।
১৯৮৫ সালে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচনে অংশগ্রহন করে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জৈন্তার শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন ৷ এলাকার ছাত্র ও যুব সমাজকে নিয়ে ১৯৭৫ সালে পল্লী মঙ্গল যুবসংঘ গঠন করে জৈন্তাপুরের আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
তিনি বৃহত্তর জৈন্তিয়া ১৭ পরগনা সালিশ সমন্বয় কমিটির সভাপতি ৷ বিগত ২০০৩ সালে সিলেট-তামাবিল জাফলং মহাসড়কে বিআরটিসি বাস আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আলহাজ্ব সিরাজ উদ্দিন আহমেদ ১৯৭০ সালে রংপুর গাইবান্ধা শহরের বাসিন্দা মরহুম আব্দুস সত্তারের কন্যা শামসুন নাহারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। শামসুর নাহারই জৈন্তাপুর উপজেলার প্রথম মহিলা শিক্ষিকা ৷ শাসসুন নাহার পাকড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। শামসুন নাহার মানসিক অসুস্থ্য থাকায় পরবর্তীতে সিরাজ উদ্দিন আহমদ গোয়াইনঘাট উপজেলার লাফনাউট গ্রামের মরহুম শামসুল হকের কন্যা রেহানা বেগমকে বিয়ে করেন। তিনি ছয় সন্তানের জনক, দুই মেয়ে, চার পুত্র সন্তান রয়েছেন।
তিনি জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দাতা সদস্যসহ এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷ তিনি ১৯৯৮ সালে হজ্ব পালন করেন ।
মৃত্যুর আগে বেশ কয়েক বছর হতে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান শহরে পরিবারের সদস্যদের সাথে বসবাস করছেন এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ্ ছিলেন।
বিভিন্ন মহল শোক: সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন আহমদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি, জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমদ, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বশির উদ্দিন, উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আল-বশিরুল ইসলাম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিপামিন দেবী, জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম দস্তগীর আহমেদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দরা ৷
তারা মরহুমের রুহের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
এএফ/০১