নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ০৭, ২০২১
১২:৩৮ অপরাহ্ন
আপডেট : নভেম্বর ০৭, ২০২১
১২:৩৮ অপরাহ্ন
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ডাকা ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় কার, মাইক্রোবাস আর অটোরিকশাই এখন ভরসা। এই সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া আদায় করছেন চালকরা।
অপরদিকে ধর্মঘটের কারণে চাপ বেড়েছে রেলপথে। দেখা দিয়েছে টিকেট সংকট। অনলাইন বা সরাসরি স্টেশনেও টিকেট পাচ্ছেন না যাত্রীরা। সকাল সাড়ে দশটায় নগরের কদমতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মৌলভীবাজার যাওয়ার উদ্দেশে যানবাহনের অপেক্ষা করছিলেন ষাটোর্ধ্ব শাহবাজ আলী। অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও যেতে পারেননি তিনি।
শাহবাজ আলী সিলেট মিররকে বলেন, ‘চিকিৎসার কাজে বৃহস্পতিবার সিলেটে এসেছি। এখানে দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছি। শুক্রবার ধর্মঘটের কারণে বাড়ি যেতে পারিনি। আজ স্ট্যান্ডে এসে দেখি বাস নেই। কার-মাইক্রোবাস জনপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দাবি করছে। কিন্তু সিলেট থেকে মৌলভীবাজার যেতে বাস ভাড়া মাত্র ৯০ টাকা।’ তিনি আরও বলেন, ‘ধর্মঘটকে পুঁজি করে এরা যাত্রীদের জিম্মি করছে। সাধারণ সময় থেকে তিন-চারগুণ বেশি ভাড়া দাবি করছে। কিন্তু এ সব দেখার কেই নেই।’
নগরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রায় সব যাত্রীর অবস্থা ছিল একই। বাস বন্ধ থাকায় বিপাকে ছিলেন যাত্রীরা। ট্রেনের টিকেট না পাওয়ায় বিকল্প হিসেবে কার-মাইক্রোবাস ব্যবহার করতে হয় তাদের। এই সুযোগে চালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন। যদিও চালকদের দাবি তারা ন্যায্য ভাড়াই নিচ্ছেন।
ধর্মঘটের কারণে সিলেট থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। একইভাবে সিলেটেও কোনো বাস প্রবেশ করেনি। যদিও বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে যাত্রীরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আসেন। কেউ কেউ অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে কার-মাইক্রোবাসে গন্তব্যের উদ্দেশ ছুটেন। আর কেউ কেউ দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে পূর্বের গন্তব্যে ফিরে যান।
চট্টগ্রামের গাড়ি খুঁজতে থাকা রফিক মিয়া সিলেট মিররকে বলেন, ‘মা অসুস্থ থাকায় ছুটি নিয়ে সিলেট এসেছিলাম। রবিবার থেকে অফিস করতে হবে। কিন্তু এখানে এসে চট্টগ্রামের কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। কার-মাইক্রোবাস পেলেও একা রিজার্ভ নিতে হবে। এছাড়া এগুলোর ভাড়াও অনেক বেশি।’
যদিও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কোনো অভিযোগ পাননি বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল মুহিম। তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ আমাদের কেউ করেনি। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ধর্মঘটের কারণে ট্রেনের টিকিটের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে জানিয়ে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক খলিলুর রহমান বলেন, ‘দুইদিন ধরে ট্রেনে যাত্রীর চাপ অনেক বেশি। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী টিকেটের সরবরাহ নেই। কারণ আসন ছাড়া আমরা ট্রেনে যাত্রী তুলছি না।’
সরেজমিন দেখা যায়, সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে যাত্রী পরিবহনকারী বাসগুলো রাখা রয়েছে। সেগুলো ধোয়া-মোছা করছেন পরিবহনশ্রমিকেরা। টার্মিনালে যাত্রীদের তেমন একটা উপস্থিতি নেই। তবে হুমায়ূন রশীদ চত্বর এলাকায় মাইক্রোবাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক, মোটরসাইকেলচালক, লেগুনাচালকদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো ছিল। সেখান থেকেই গন্তব্যে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা ভিড় করছিলেন।
এদিকে, ধর্মঘটের প্রথম দিন পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের রাস্তায় তেমন দেখা না গেলেও সরব ছিলেন ট্রাক-কাভার্ডভ্যান শ্রমিকরা। সকাল থেকেই সিলেটের প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান নেন তারা। পণ্যবাহী ট্রাক সিলেট নগরে প্রবেশের পথে আটকে দেন তারা। সিলেট থেকেও কোনো পণ্যবাহী ট্রাক বের হতে দেননি।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশব্যাপী প্রথমে শুধু পণ্যপরিবহন ধর্মঘট ডাকা হলেও পরে পণ্য ও গণপরিবহন ধর্মঘট ঘোষণা করা হয়। তবে সিলেটে ৪৮ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। এর মধ্যে ডিজেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য যান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে পরিবহন নেতারা জানান। একই দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত শুক্রবার থেকে সিলেটে অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্যপরিবহন ধর্মঘট পালন করছে সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি জানিয়েছে, আজ রবিবার সকালে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় কেন্দ্রীয় সভার নির্দেশনার আলোকে পরিবর্তী কর্মসূচি পালন করা হবে। তবে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি জানিয়েছে, জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করা না পর্যন্ত তাদের ধর্মঘট চলমান থাকবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. জিয়াউল কবির পলাশ সিলেট মিররকে বলেন, ‘রবিবার সকাল ১১টায় ঢাকায় একটি সভা শুরু হয়েছে। সেখান থেকে যে নির্দেশনা আসবে সিলেটেও আমরা তা পালন করব। এর পূর্ব পর্যন্ত সিলেটে বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।’
সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শাব্বীর আহমদ ফয়েজ বলেন, ‘আমরা ভাড়া বাড়ানোর আন্দোলন করছি না। আমাদের দাবি জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার। এই দাবিতে আমাদের ধর্মঘট চলতে থাকবে। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত এলে সে অনুসারে সিলেটেও কর্মসূচি পালন করা হবে।’
এছাড়া সিলেটের বিভিন্ন ব্রিজের টোল আদায় বন্ধের দাবিতে আগামী ৯ ও ১০ নভেম্বর পণ্য পরিবহন ধর্মঘট পালিত হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এনএইচ/আরসি-০৯