দাবি আদায়ের নামে জনভোগান্তি আর কত?

নিজস্ব প্রতিবেদক


সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২
০৮:৪২ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২
০৮:৪২ অপরাহ্ন



দাবি আদায়ের নামে জনভোগান্তি আর কত?
পরিবহন শ্রমিকদের নৈরাজ্য

দাবি আদায়ের নামে কিছুদিন পরপরই ধর্মঘট ও অবরোধের মতো কর্মসূচি ডাকেন সিলেটের পরিবহন শ্রমিক নেতারা। নিজেদের স্বার্থের জন্য ডাকা এসব কর্মসূচিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সিলেটবাসী। তবে প্রতিবারই প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে শেষ করা হয় কর্মসূচি। মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলা নেতাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয় না কোনো ব্যবস্থা। তাই সিলেটবাসীর মনে এখন প্রশ্ন এই জনভোগান্তি আর কতদিন চলবে? তবে পুলিশ বলছে, চলমান এসএসসি পরীক্ষা ও শারদীয় দুর্গাপূজার পর কঠোর হবে পুলিশ। 

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় সিলেট নগরের ক্বিনব্রিজে আটকা থাকতে দেখা যায় অসংখ্য রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল। কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে দেখা যায় ক্বিনব্রিজের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এর কিছুক্ষণ পরই সিলেটের সব প্রবেশ মুখ, নগরের গুরুত্বপূর্ণ সব পয়েন্ট ও উপজেলাগুলোর সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। কোনো পরিবহনই ছাড়তে নারাজ তারা। বিভিন্ন জায়গায় আটকা পড়ে রোগীবাহী গাড়িও। প্রায় সাড়ে তিনঘণ্টা ভোগান্তির পর প্রশাসনের আশ্বাসে শেষ হয় অবরোধ কর্মসূচি। 

এর আগে গত ১৩ অক্টোবর দিনব্যাপী ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করেন পরিবহন শ্রমিকরা। কর্মবিরতির ঘোষণা দিলেও এ দিন নগরের মোড়ে মোড়ে লাঠি, বাঁশ হাতে যানচলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে দেখা যায় শ্রমিকদের। রাতে প্রশাসনের সঙ্গে সভা শেষে দাবি আদায়ের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। এই কর্মসূচি পালনকালেও শ্রমিকদের কোনো বাধায় পড়তে হয়নি। কারণ কর্মসূচি চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের রাস্তায় দেখা যায়নি। 

এই ধর্মঘটের প্রধান দাবি ছিল যানবাহন রেকার বন্ধ, মহানগর পুলিশ কমিশনার ও উপকমিশনারের প্রত্যাহার। আর বৃহস্পতিবার রাতের অবরোধ ছিল শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে। যদিও মামলা দায়ের করেছে শ্রমিকদের বিবদমান দুই গ্রæপ। 

এ অবস্থায় সিলেটের সাধারণ মানুষ বলছেন, অন্যায্য ও অনৈতিক দাবিকে কেন্দ্র করে মানুষকে জিম্মি করছেন পরিবহন শ্রমিক নেতারা। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। 

নগরের সুবিদবাজার এলাকার বাসিন্দা, বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা সোবহান চৌধুরী সিলেট মিররকে বলেন, ‘সাধারণত রাজনৈতিক কর্মসূচি চলাকালে সড়ক বন্ধ থাকলেও জরুরি কাজে বের হলে রাস্তা ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকরা এতোটাই উগ্র যে, তাদের সঙ্গে কথা বললেই বাজে ব্যবহার করেন। গায়ে হাত তুলতেও ছাড়েন না তারা।’

সিলেটের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষক এনাম খান বলেন, ‘কিছুদিন পরপর শ্রমিকরা রাস্তা বন্ধ করে দেন। অনেকটা স্বাধীনভাবে তারা মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলেন। মনে হয় তারাই যেন এই শহরের হর্তাকর্তা। এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনের কঠোরতা প্রয়োজন। যা আমাদের নজরে আসে না।’

প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে ব্যবসায়ী শফিক উদ্দিন বলেন, ‘শ্রমিকরা যখন রাস্তায় ভোগান্তি সৃষ্টি করে তখন প্রশাসনকে একেবারে নীরব দেখা যায়। এই নীরবতার কারণ কী আমরা জানতে চাই। মনে হচ্ছে সিলেটের সাধারণ মানুষকেই এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদের প্রতিরোধ করতে হবে।’

তবে শ্রমিক নেতারা বলছেন তারা ন্যায্য দাবিতেই আন্দোলন করে থাকেন। সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম সিলেট মিররকে বলেন, ‘শ্রমিক নেতারা কী রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর করবে। এমন মিথ্যা অপবাদে যখন মামলা হয় তখন আমরা পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে যাই। তখন তিনি তো কোনো আশ্বাস দেননি, উল্টো বলেন আরও মামলা দেওয়া হবে। এর প্রতিবাদেই বৃহস্পতিবার সাধারণ শ্রমিকরা সড়কে নামে।’

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যানবাহনের কাগজপত্র না থাকলে ট্রাফিক বিভাগ আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। আর তাতেই শ্রমিক নেতারা শ্রমিকদের মাঠে নামিয়ে দেন। এ অবস্থায় জনভোগান্তি কমাতে পুলিশকে নমনীয় থাকতে হয়। 

সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ সিলেট মিররকে বলেন, ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আমরা সব সময়ই আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তবে চলমান এসএসসি পরীক্ষা ও পূজা সামনে থাকায় আমরা সবকিছু বিবেচনা করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এই দুটি ইভেন্ট শেষ হলেই কঠোর হবে পুলিশ।’


এএফ/০৭