নিজস্ব প্রতিবেদক
সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২১
১২:২৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট : সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২১
০২:০৬ পূর্বাহ্ন
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও গণপরিষদের সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান এক বর্ণাঢ্য জীবন পার করে গেছেন। ১৯৪০ সালের ৮ ডিসেম্বর সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার ৩নং পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নের বড়হাজীপুর গ্রামে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। সিলেট নগরের আম্বরখানা বড়বাজার এলাকায় নিজ বাসায় তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।
সিলেটের প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শুরু নিজ গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ভর্তি হন মৌলভীবাজার জেলার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। শিক্ষা জীবনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন এই রাজনীতিবিদ। ১৯৫৯ সালে গণিতে লেটার মার্কসহ মাধ্যমিক পরীক্ষায় (মেট্রিকুলেশন) উত্তীর্ণ হন।
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারি চাঁদ কলেজে (এমসি কলেজ) সে বছরই একাদশ শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে আইএসসি ও বিসএসসি পরীক্ষায় পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং এলএলবি পাশ করে সিলেট জেলা বারে আইন পেশায় যোগদান করেন।
আইনপেশায় যুক্ত হলেও রাজনীতি থেকে কখনও নিজেকে বিচ্ছিন্ন করেননি তিনি। ১৯৬২ সালে আরও কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে সিলেট জেলা ছাত্রলীগ পুনঃগঠন করেন। ১৯৬২ সালে তাঁর নেতৃত্বে ছাত্রলীগ আইয়ূব খান বিরোধী আন্দোলন শুরু করে। একই বছর হামিদুর রহমানের শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি। ১৯৬৩ সালের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে সিলেট থেকে তাঁর নেতৃত্বে ১০ জন কাউন্সিলার অংশ নেন। পুরান ঢাকার পাকিস্তান মাঠে ছাত্রলীগের সেই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তখন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা আন্দোলনেও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন লুৎফুর রহমান। সামরিক সরকারের দশটি বেত্রাঘাতের ঝুঁকির মুখে ছয় দফার পুস্তিকা বিতরণ করেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে আন্দোলনেও অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত সে আন্দোলন চালিয়ে যান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালে তাঁকে প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন দেন এবং আওয়ামীলীগের প্রার্থী হয়ে তিনি বালাগঞ্জ থানা এবং ফেঞ্চুগঞ্জ থানা নিয়ে গঠিত নির্বাচনী এলাকা নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
পরবর্তী সময়ে সকল আন্দোলনে যোগদান এবং মুক্তিযুদ্ধে সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনিসহ সিলেটের আরও কয়েকজন এমপিএ আসামের করিমগঞ্জ শহরে অবস্থান নেন এবং মুকিযুদ্ধাদের সংগঠিত করতে থাকেন। করিমগঞ্জে টাউন হলে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়া তরুণ-যুবকদের জমায়েত হন। সেখানে টাউন হলের দায়িত্বে ছিলেন তিনি এবং আব্দুল লাতিফ এম.পি.এ । তারা এসব তরুণ-যুবকদের খাবার ও কাপড়ের ব্যবস্থা করে দিতেন। এই ক্যাম্প থেকে প্রতি সপ্তাহে গেরিলা ট্রেনিং নেওয়ার জন্য যুবকদের ট্রেনিং কেন্দ্রে পাঠানোর বিষয়টি সমন্বয় করতেন। দেওয়ান ফরিদ গাজী এম.এন.এ সঙ্গে তিনিও ৩ নং এবং ৪ নং সেক্টরে সিভিল অ্যাফেয়ার্স সাহায্যকারী হিসাবে কাজ করেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হলে পুনর্বাসন কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৭২ সালে তিনি গণপরিষদের সদস্য হন এবং বাংলাদেশের প্রথম হাতে লেখা সংবিধানে স্বাক্ষরদাতাদের একজন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। সংবিধান পাশ করায় অংশগ্রহণ ছিল তাঁর।
বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পরে তাঁকে আটক করে নির্যাতন করা হয়। তবুও তিনি সিলেট জেলা আওয়ামীলীগ সংগঠনের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকেন। তৎকালীন জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন লুৎফুর রহমান। পরবর্তী সময়ে তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পরে সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে তৎকালীন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুজ জহির চৌধুরী ছুফিয়ান মারা গেলে তিনি ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান। এরপর ২০২১ সালে নতুন জেলা কমিটি ঘোষিত হলে তিনি জেলা সভাপতি নির্বাচিত হন।
অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান ২০১৫ সালে সিলেট জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুজ জহির চৌধুরী ছুফিয়ান মৃত্যুবরণ করলে তিনি পরিষদের চেয়ারম্যান হন। পরের বছর নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। আমৃত্যু তিনি সেই দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
এএফ/০৪