ওসমানী হাসপাতালে বসছে নতুন অক্সিজেন প্ল্যান্ট ও লাইন

নাবিল হোসেন


আগস্ট ৩১, ২০২১
০৪:৪০ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ৩১, ২০২১
০৪:৪১ অপরাহ্ন



ওসমানী হাসপাতালে বসছে নতুন অক্সিজেন প্ল্যান্ট ও লাইন
# ব্যয় হচ্ছে পাঁচ কোটি ১৯ লাখ টাকা # অক্সিজেন লাইন স্থাপন করবে গণপূর্ত বিভাগ # অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করবে সিসিক

অবশেষে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ও প্ল্যান্ট স্থাপিত হচ্ছে। ৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। প্ল্যান্ট এবং লাইন স্থাপিত হলে ওসমানীতে প্রস্তাবিত ৪৫০ শয্যার করোনা ইউনিট চালুর বাধাও কেটে যাবে। 

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য সিলেট সিটি করপোরেশন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ২ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। কেন্দ্রীয় অক্সিজন লাইন স্থাপনের কাজ করবে গণপূর্ত বিভাগ। এ জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপনের জন্য গত ২৩ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করেছে গণপূর্ত বিভাগ। আর অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরির জন্য দু-একদিনের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করবে সিসিক। 

চলতি বছরের জুলাইয়ে সিলেটে করোনার সংক্রমণ ছিল চ‚ড়ায়। এ অবস্থায় চাপ বাড়ে সিলেট মহানগরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। রোগীর চাপে সিলেটের সব হাসপাতালের শয্যা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে একটি সাধারণ শয্যাও পাচ্ছিলেন না স্বজনরা। হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। 

ঠিক সেই সময়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় ৪৫০ শয্যা প্রস্তুত থাকলেও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা না থাকায় সেটি চালু করা যায়নি। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কয়েক মাসের ব্যবধানে মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চিঠি দিলেও কোনো সাড়া মেলেনি। 

এ অবস্থায় জুলাইয়ে ওসমানীর করোনা ইউনিট চালুর প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। পরে গত ৩ আগস্ট নগর ভবনে সিলেটের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী নেতাদের নিয়ে সভা করেন তিনি। সভায় উপস্থিত ছিলেন, সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে আব্দুল মোমেন। এ সময় তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও জানান। আর মেয়র জানিয়েছিলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুমতি দিলে সিসিকের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থার কাজ করা হবে। 

চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের প্রচেষ্ঠায় ওসমানী হাসপাতালের কেন্দ্রীয় অক্সিজেন কার্যক্রম বাস্তবায়নের সিলেট সিটি করপোরেশনকে ২ কোটি টাকা প্রদান করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এই অর্থ সিসিকের কাছে এরইমধ্যে পৌঁছে গেছে। 

এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান সিলেট মিররকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরির জন্য আমাদের কাছে ২ কোটি টাকা এসে পৌঁছেছে। কয়েকদিনের মধ্যে আমরা দরপত্র আহ্বান করব। পরে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হবে।’

ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হলে প্ল্যান্ট তৈরিতে দেড়মাস সময় লাগতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা প্ল্যান্ট তৈরি করে এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। যত দ্রুত কাজ শেষ করা যায় এই বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে।’

সিসিক প্ল্যান্ট স্থাপন করে দিলেও সেন্ট্রাল অক্সিজন লাইন ছাড়া রোগীদের সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে ওসমানী মেডিকেল কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৩ কোটি ১৯ টাকা বরাদ্দ দেয়।

এ বিষয়ে সিলেট ওসমানী হাসপাতালের কর্মকর্তরা বলছেন, ‘হাসপাতালের নতুন ভবনের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় চিকিৎসসেবা দেওয়ার জন্য অন্তত ৪৫০ শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। করোনা সংক্রমণ বাড়ায় এটাকে করোনা ইউনিট হিসেবে চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে, যেহেতু অক্সিজেন প্ল্যান্ট ও সেন্ট্রাল লাইন নেই, সে কারণে ইউনিটটি চালু করা যাচ্ছিল না।’

ওসমানী হাসপাতালের উপপরিচালক মাহবুবুল আলম সিলেট মিররকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় অক্সিজেন লাইনের কাজের দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জেলা গণপূর্ত কার্যালয়কে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে গণপূর্ত কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে হাসপাতালে করোনা রোগীদের চাপ কমেছে। তবে অক্টোবরের দিকে করোনার নতুন ঢেউ আসতে পারে। তাই, এর আগেই কাজ শেষ করতে হবে।’

জেলা গণপূর্ত কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রিপন কুমার রায় সিলেট মিররকে বলেন, ‘ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপনের জন্য ৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। গত ২৩ আগস্ট এই কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে এই দরপত্রের কাজ শেষ হবে। পরে আমরা ওয়ার্ক অর্ডার দেব। তারপর কাজ শুরু হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণত এই কাজের জন্য বিদেশ থেকে যেসব যন্ত্রপাতি আনতে হয় তাতে ৫ থেকে ৬ মাস সময় লাগে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত যন্ত্রপাতি আসবে, তারাই কাজটি করতে পারবে। সেই হিসেবে আমরা এই কাজের জন্য দুই মাস সময় রেখেছি। আশা করছি, আগামী দুই মাসের মধ্যে এই কাজটি শেষ হবে।’

গত জুলাই মাসে সিলেটে যখন করোনার সংক্রমণ তুঙ্গে তখন ওসমানীর নতুন করোনা ইউনিট নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। এ সময় অক্সিজেনের বিষয়টি সামনে এলেও কখনও বলা হয় অক্সিজন লাইন জরুরি, আবার বলা হয় অক্সিজেন সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। এক পর্যায়ে ওসমানী কর্তৃপক্ষ বলেছিল- কেবল সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করলে হবে না। এজন্য প্ল্যান্টও জরুরি। অবশেষে, দুটোই একসঙ্গে শুরু হচ্ছে। 

আরসি-০৬