সিলেট থেকে পণ্য রপ্তানিতে বড় বাধা ‘ওয়্যারহাউজ’

শুয়াইব হাসান


আগস্ট ২৭, ২০২১
০৪:০১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ২৭, ২০২১
০৪:৪৪ অপরাহ্ন



সিলেট থেকে পণ্য রপ্তানিতে বড় বাধা ‘ওয়্যারহাউজ’

দীর্ঘ ১০ বছর বন্ধ থাকার পর ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি বিদেশে পণ্য রপ্তানি শুরু হয়েছে। কার্গো কমপ্লেক্স নির্মাণ ও স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন করায় বাধা অনেকটা কাটলেও ওয়্যারহাউজ (গুদাম) না থাকায় পণ্য রপ্তানিতে গতি আসছে না।  

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পণ্য রপ্তানির জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে ঢাকার শ্যামপুরে একটি সেন্ট্রাল ওয়্যারহাউজ রয়েছে। যেখান থেকে ইউরোপে পণ্য রপ্তানি হয়। কিন্তু সিলেটে ওয়্যারহাউজ না থাকায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ইউরোপে পণ্য রপ্তানি করতে পারছেন না তারা। ঢাকার শ্যামপুরে নিয়ে প্যাকেটজাত করতে হয় বলে রপ্তানিকারকরা বিড়ম্বনায় পড়ছেন। 

সিলেট থেকে সরাসরি ফ্লাইট চালু হওয়ায় যুক্তরাজ্যের বাজার ধরার সুবর্ণ সুযোগ দেখছেন ব্যবসায়ীরা। করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে তাই যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি শাক-সবজি, ফলমূল, গার্মেন্টস, কৃষি ও কুটিরশিল্প সামগ্রী পাঠানোর প্রস্তুতি তাদের। রপ্তানি পুরোদমে শুরু হলে স্থানীয় ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প পুনরুজ্জীবিত হবে বলে মনে করছেন তারা। 

এ জন্য সিলেটে জরুরিভিত্তিতে ওয়্যারহাউজ নির্মাণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রপ্তানি বাড়াতে ও বিড়ম্বনা রোধে শ্যামপুরের মতো সিলেটেও ওয়্যারহাউজ নির্মাণের জন্য চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের কাছে চিঠি দিয়েছেন সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি। 

চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো কমপ্লেক্স ও স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে সিলেট থেকে পণ্য রপ্তানির সুবর্ণ সুযোগ। পণ্য রপ্তানির জন্য সিলেটে ওয়্যারহাউজ নির্মাণ জরুরি। এটা নির্মিত হলে সিলেট থেকে আরও বেশি পরিমাণে রপ্তানি সম্ভব হবে।’

তবে, ওয়্যারহাউজ নির্মাণে কতটা অগ্রগতি তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। সিলেট চেম্বারের সভাপতি এটিএম শোয়েব এ ব্যাপারে আশাব্যাঞ্জক কোনো তথ্য জানাতে পারেননি। 

সিলেট বিমানবন্দরের ম্যানেজার হাফিজ আহমদ বলেন, ‘আগে সিলেট থেকে রপ্তানির জন্য বিমানবন্দরে কার্গো কমপ্লেক্স ছিল না। এখন আমরা নির্মাণ করে দিয়েছি। ব্যবসায়ীরা চাইলেই সিলেট থেকে সরাসরি পণ্য পাঠাতে পারবেন ইউরোপে।’ তবে, ওয়ারহাউজ নির্মাণের বিষয়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কিছুই জানে না বলে জানান তিনি। 

সিলেটের ব্যবসায়ীরা জানান, যুক্তরাজ্যে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মণিপুরি শাড়ি, সাতকরা, জারা লেবু, পান, বিন্নি চাল, বেতের আসবাবের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সিলেট থেকে সরাসরি রপ্তানি পুরোদমে শুরু হলে এখানকার ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প নতুন প্রাণ পাবে। লাভবান হবে দেশের অর্থনীতি। সিলেট থেকে পণ্য রপ্তানির জন্য উড়োজাহাজেরও কোনো সমস্যা নেই।’

সিলেটের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিপত্তির কথা জানিয়ে জালালাবাদ ভেজিটেবল অ্যান্ড ফ্রোজেন ফিশ এক্সপোর্ট গ্রুপের সভাপতি হিজকিল গুলজার বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যেসব পণ্য যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হয়, সেগুলো ঢাকার শ্যামপুরে অবস্থিত যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অনুমোদিত ওয়্যারহাউজের মাধ্যমে প্যাকেজিং করে কোয়ারেন্টাইন সার্টিফিকেট নিয়ে পাঠাতে হয়। এক্ষেত্রে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় সিলেটের রপ্তানিকারকদের। এছাড়া পচনশীল পণ্য ঢাকায় নিয়ে যেতেও সমস্যায় পড়তে হয়।’

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা আছে। নানা জটিলতার কারণে চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। সিলেটে ওয়্যারহাউজ স্থাপন করা হলে রপ্তানি বাড়বে। দেশীয় পণ্য বেশি পরিমাণে রপ্তানি করা যাবে।’

সিলেটের নতুন উদ্যোক্তা সুলতানা পারভীন জানান, তিনি বেতশিল্পের উদ্যোক্তা হিসেবে গত এক বছর ধরে ব্যবসা শুরু করেছেন। তার পণ্যের চাহিদা ইউরোপেও রয়েছে। আগে তিনি ঢাকা থেকে পণ্য পাঠাতেন। এতে অনেক বিড়ম্বনা আছে। সিলেট থেকে সরাসরি পণ্য পাঠানোর সুযোগ পেলে নতুন উদ্যোক্তারা আরও বেশি উপকৃত হবেন। 

সামগ্রিক প্রসঙ্গে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু তাহের শোয়েব বলেন, ‘সিলেট থেকে সরাসরি ফ্লাইট চালুর পর সিলেট চেম্বার রপ্তানিকারক, উৎপাদক ও ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। পণ্য রপ্তানির জন্য রপ্তানিকারকদের প্রস্তুতি আছে। ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সমন্বয় করা গেলে এবং ওয়্যারহাউজ নির্মিত হলে রপ্তানি জোরদারও সহজ হবে।’

জানা গেছে, ২০১১ সালে সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট চালু হয়। নানা জটিলতায় কিছুদিন পরই বন্ধ হয়ে যায় ফ্লাইট। দীর্ঘ বিরতি শেষে গত বছরের ৪ অক্টোবর ফের চালু হয় বিমানের সিলেট-লন্ডন ফ্লাইট। এখন সপ্তাহে দুদিন সিলেট থেকে সরাসরি ফ্লাইট যাচ্ছে লন্ডনে। ফ্লাইট চালুর সম্ভাবনা আছে ম্যানচেস্টারেও। লন্ডনে সরাসরি ফ্লাইট চালু হওয়ার পর সিলেটের ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকরা নতুন আশায় স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন। যুক্তরাজ্যে পণ্য রপ্তানির জন্য নানা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন তারা। 

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যে বসবাসকারীদের মধ্যে সিংহভাগই সিলেটের বাসিন্দা। বড় বড় সুপার শপ, রেস্টুরেন্ট, টেকওয়ে প্রভৃতির মালিকানায়ও সিলেটিদের নেতৃত্ব রয়েছে। ফলে সিলেট থেকে পণ্য রপ্তানি করা গেলে সেখানে বাজার ধরা সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকরা লন্ডনে ফ্রোজেন ফিশ, শাক-সবজি, ফলমূল, বেতের আসবাবপত্র, নকশিকাঁথা, পান, বিন্নি চাল, গার্মেন্টসামগ্রী রপ্তানির পরিকল্পনা করছেন।

আরসি-০১