সিলেটে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে ৬ পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুন ০২, ২০২১
০২:৫৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ০২, ২০২১
০৩:১৬ পূর্বাহ্ন



সিলেটে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে ৬ পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ঘন ঘন ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত সম্পর্কিত ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে ছয়টি পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।   

মঙ্গলবার (১ জুুন) সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ে সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। 

সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সরকারের যুগ্ম সচিব বিধায়ক রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। 

ভূমিকম্পের আশঙ্কায় সিলেট সিটি করপোরেশন দুর্যোগ মোকাবেলা এবং ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসের লক্ষ্যে সভায় বিশেষজ্ঞ বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক ভিসি ও ইউএসটিসির উপাচার্য্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম, জিওটেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমদ আনসারী এবং শাবিপ্রবির অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম। 

এসময় তারা ছয়টি পরামর্শ দেন। পরামর্শগুলো হলো- ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিতকরণ ও ঝুঁকিমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ, উদ্ধারকর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুত করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভূমিকম্প হলে করণীয় বিষয়ে নিয়মিত মহড়া আয়োজন, ভূমিকম্পে করণীয় বিষয়ে প্রচার অব্যাহত রাখা, ইমারত নির্মান আইন অনুযায়ী ভবন নির্মাণ হচ্ছে কি না তা তদারকি করা এবং সিলেটে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধি।

সভায় প্রধান অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, নাগরিকদের সচেতন করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে হবে। নাগরিকরা যাতে আতঙ্কিত না হয় সেজন্য প্রচার প্রচারনা চালাতে হবে। ভূমিকম্পে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তালিকায় সিলেট আছে উল্লেখ্য করে মন্ত্রী বলেন, সিলেট এজন্য আগে টিনের এক তলা বাড়ি বেশি ছিল। এখন প্রয়োজনে বহুতল ভবন হচ্ছে, ঝুঁকিও বাড়ছে। তবে, এবারের ভূমিকম্প পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয়ের দ্রুত উদ্যোগকে স্বাগত জানান তিনি। প্রাকৃতিক এই অনিশ্চিত ঝুঁকি মোকাবেলা ও ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে সরকার সোচ্ছার রয়েছে বলেও জানান তিনি। 

বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আমহদ বলেন, সিলেট ভূমিকম্পের রেড জোনে রয়েছে। তাই সেদিক বিবেচানায় রেখে এখানকার প্রস্তুতিটাও নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতামত– এ অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে। এজন্য আগাম প্রস্তুতিমূলক এই বিশেষজ্ঞ মতামত সভা অত্যন্ত সময়োপযোগী। 

তিনি বলেন, ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবেলায় এ অঞ্চলে উদ্ধারকর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুত করতে হবে। সিলেটে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও আঞ্চলিক কার্যালয় করতে হবে। যেখানে উদ্ধার কাজের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি– সরঞ্জাম মজুদ থাকবে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভূমিকম্প হলে করণীয় বিষয়ে নিয়মিত মহড়া আয়োজন, ইমারত নির্মান আইন অনুযায়ী ভবন নির্মাণ হচ্ছে কি না তা তদারকি বাড়ানোর জন্য সিসিকের প্রতি আহবান জানান তিনি। 

তিনি বলেন, সিলেট শহরে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। সার্ফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্ভর পানি চাহিদা পূরণের দিকে যেতে হবে সিলেট সিটি করপোরেশনকে। 

ভূমিকম্পের আশঙ্কায় সিলেট সিটি করপোরেশন দুর্যোগ মোকাবেলা এবং ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসকরণের লক্ষ্যে সভায় বিশেষজ্ঞ বক্তা হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। 

তিনি বলেন,  ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রণয়ন ও হালনাগা অত্যন্ত জরুরী। এছাড়া এ অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে দুর্যোগ কবলিত মানুষের উদ্ধারে বেশি নজর দিতে হবে। সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের রানওয়ের সক্ষমতা এবং দুর্যোগে ত্রান কিংবা চিকিৎসা নিয়ে আসা বিমান/হেলিকাপ্টার কতোটি নামতে পারবে সে তথ্যও পরিকল্পনায় রাখতে হবে। 

চুয়েটের সাবেক ভিসি ও ইউএসটিসির উপাচার্য্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ধারণা করা হয় ডাউকি চ্যুতিতে কম্পন হলে সেটি ৮ মাত্রার হতে পারে। সেক্ষেত্রে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে এখনই উদ্যোগ নিলে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কমিয়ে আনা সম্ভব। এজন্য সিলেট সিটি করপোরেশনসহ সকল দপ্তর ও শাখাকে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রনীত গাইড লাইন অনুসরণ করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নগরের সকল ভবন এসেসমেন্ট করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে হবে। সে অনুযায়ী ভবনগুলোকে ঝুঁকি মুক্ত করার উদ্যেগ নিতে হবে।

বুয়েটের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমদ আনসারী বলেন, এখনও সময় আছে। চাইলে ৬ মাসের মধ্যেই সিলেট নগরের সকল ভবন এসেসমেন্ট করে ফেলা সম্ভব। ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে হলে নগরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন কমাতে হবে-এর কোনো বিকল্প নেই। 

শাবিপ্রবি’র অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম সভার শুরুতে সিলেট নগরে ভূমিকম্প চ্যুতি ও এই শহরের পানির স্থর নেমে যাওয়ার উপর আলোচনা ও মতামত ব্যক্ত করেন। 

ভার্চুয়াল সভায় যুক্ত থেকে আলোচনায় অংশ নেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খলিলুর রহমান, সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ ও সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম।   

অন্যান্যোর মধ্যে সভায় উপস্থিত ছিলেন সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. নূর আজিজুর রহমান, সচিব ফাহিমা ইয়াসমিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম, ফায়ার সার্ভিস সিলেটের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক আনিসুর রহমান, সিসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আব্দুল আজিজ, নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুল হক পাঠোয়ারী, নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. হানিফুর রহমান, সহকারী প্রকৌশলী জয়দেব বিশ্বাস, মেয়রের সহকারী একান্ত সচিব সোহেল আহমদ, জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল আলিম শাহ প্রমুখ।

বিএ-১৩