নাবিল হোসেন
মে ৩০, ২০২১
০৫:১৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মে ৩০, ২০২১
০৫:২০ পূর্বাহ্ন
বৃষ্টির শহর সিলেট। কিন্তু এ বছর সিলেটে বৃষ্টির খুব একটা দেখা মিলছে না। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মে মাস পর্যন্ত বছরে যে পরিমান বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল তা থেকে ৫২ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে এবার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই বৃষ্টি কম হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বছরের এপ্রিলে সিলেটে ১৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অথচ এই সময়ে ৫০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হবার কথা ছিল। আর মে মাসে সিলেটে ৫৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হবার কথা থাকলেও গতকাল ২৮ মে পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ২৪৬ মিলিমিটার। আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট সূত্র আরও জানায়, চলতি বছর সিলেটে ৪ হাজার ১৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হবার কথা থাকলেও মে মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৫৩৭ মিলিমিটার।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাইদ আহদ চৌধুরী সিলেট মিররকে বলেন, ‘সিলেটে প্রাক বর্ষা মৌসুমে গত কয়েকবছর ধরে বৃষ্টিপাত বেশি হয়। ফলে পুরো বছরের বৃষ্টিপাতের মধ্যে মার্চ-এপ্রিল-মে মাসে বৃষ্টিপাত হয় ২৬ শতাংশ। তবে এ বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ শতাংশের নিচে। অন্যদিকে জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত যে বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ছিল তা থেকে প্রায় ৫২ শতাংশ বৃষ্টিপাত কম হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৭ সালে প্রাক বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৩২ দশমিক ৩ শতাংশ বৃষ্টিপাত হয়েছিল। গত বছরেরও এই বৃষ্টিপাত ছিল ২৮ শতাংশ। কিন্তু এ বছর তা কমে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এই বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য উদ্বেগজনক।’
অন্যদিকে, ক্রমাগত বৃষ্টি কম হওয়ার ফলে সিলেটে বেড়েছে গড় তাপমাত্রা। গত ১৫ এপ্রিল বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসা বিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল সায়েন্স ডিরেক্ট ‘সার্ফেস আরবান হিট আইসল্যান্ড ইনটেনসিটি ইন ফাইভ মেজর সিটিস অব বাংলাদেশ: প্যাটার্নস, ড্রাইভার্স অ্যান্ড ট্রোন্ডস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয় গত ২০ বছরে সিলেটের তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর রাতে তাপমাত্রা বেড়েছে দশমিক ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এ বিষয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি নির্মাণ ও পরিবেশগত প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তরিকুল ইসলাম সিলেট মিররকে বলেন, ‘শুধু সিলেটে নয় সারাদেশেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমছে। দিন যতই যাচ্ছে ততই বৃষ্টি কম হচ্ছে। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনটি হচ্ছে। এর বাইরে অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ন, ধোয়া নিয়ন্ত্রণ ও বর্জ্য অব্যবস্থাপনাসহ নানা কারণে তাপমাত্রা বেড়েছে। একই সঙ্গে জীব বৈচিত্র হুমকির মুখে পড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের আকাশে এখন মিথেন গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। যা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য খুবই খারাপ। এর ফলে তাপমাত্রা আরও বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। অথচ এর জন্য দায়ী অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণকারী উন্নত দেশগুলো। তাই একা বাংলাদেশের পক্ষে এই সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব নয়, এর জন্য পুরো বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে। তবে আমাদের দেশে সামাজিক বনায়ন বাড়াতে হবে। জীব বৈচিত্রকে রক্ষা করতে হবে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সিলেটে গতকাল শুক্রবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ৫ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ শনিবার দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। তবে রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে।’
আগামী ৩১ মে থেকে সিলেটে টানা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ সাইদ আহমদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে স্বাভাবিকভাবে বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল। তার প্রভাবে গরমও কমার কথা। কিন্তু দেশব্যাপী বৃষ্টি হলেও সিলেটে বৃষ্টি হয়নি, ফলে গরমও কমেনি। তবে আগামী ৩১ মে থেকে টানা ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।’
আরসি-০১