নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ৩০, ২০২১
০৩:২১ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মে ৩০, ২০২১
০৩:৪৭ অপরাহ্ন
আগামী জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত হবে সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে নির্বাচনী এলাকা। নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বরন্দ্বে থাকায় বিএনপির প্রার্থীরা প্রকাশ্যে নেই। তবে একা আওয়ামী লীগের প্রায় দুই ডজন প্রার্থীই মাঠ গরম করে রেখেছেন। এর বাইরে রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। কিন্তু সব ছাপিয়ে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন কে-সেটাই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এ আসনে নির্বাচন করতে লন্ডন থেকেও এসেছেন বেশ কয়েকজন।
সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা এবং বালাগঞ্জ উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসন। এই আসনের টানা তিনবারের সাংসদ মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী কয়েস করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ১১ মার্চ মারা যান। ১৫ মার্চ আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। নিয়মানুযায়ী মধ্য জুনের মধ্যে এই আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও করোনাজনিত পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আরও তিন মাস সময় বাড়ায়। গত ১৯ মে ইসির এক সভায় এই আসনের নির্বাচন জুলাই মাসে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। তবে নির্বাচনের তারিখ আগামী ২ জুন কমিশনের বৈঠকে নির্ধারণে করা হবে।
আসনটি শূন্য ঘোষণার পর থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের তৎপরতা শুরু করেন। ইতোমধ্যেই এলাকায় নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্তত ২৩ জন প্রার্থী এই আসনে মনোনয়ন পেতে তৎপর। আওয়ামী লীগের বাইরে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাও আছেন মাঠে। কেউ কেউ এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ঈদের সময় চালিয়েছেন ব্যাপক তৎপরতা। করোনাকালে অনেকে সাহায্য নিয়ে ছুটছেন নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার নির্বাচনী এলাকা ছাড়িয়ে সিলেট নগরেও সাটানো হচ্ছে।
সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের যেসব মনোনয়নপ্রত্যাশীর নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁরা হচ্ছেন প্রয়াত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর স্ত্রী ফারজানা চৌধুরী, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইনাম আহমেদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, ডাকসুর সাবেক সদস্য দেওয়ান গৌস সুলতান, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নিজাম উদ্দিন ও কোষাধ্যক্ষ শমসের জামাল, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শাহ মুজিবুর রহমান জকন, বালাগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকুর রহমান মফুর, দক্ষিণ সুরমার উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাহিদ, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য আব্দুর রকিব মন্টু ও যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এনাম উল ইসলাম।
এর বাইরে সিলেট-২ আসনের সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর নামও শোনা যাচ্ছে। গত দুটি নির্বাচনে মহাজোটের পার্টির জন্য নিজের আসন ছেড়ে দিতে হয়েছিল তাকে। এছাড়া বর্তমান সিলেট-৩ আসনের বালাগঞ্জ অংশ এক সময় তার নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ছিল। দলীয় নেতাকর্মীরা দাবি করছেন দলের স্বার্থে বার বার ত্যাগ শিকার করা এই নেতাকে যেন সিলেট-৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। আসনটি শূণ্য ঘোষনা করার পর পরই বালাগঞ্জে দলীয় অনুষ্ঠানে যাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছেন সাবেক এই সাংসদ।
শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, দলের প্রয়োজনে নেত্রী আমাকে যখন যে এলাকা থেকে নির্বাচন করতে বলবেন আমি করব। দলীয় নেতাকর্মীদের ভালোবাসা নিয়ে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবেই আজীবন কাজ করে যেতে চাই।
এছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবির উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল আলম রুহেল, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ সিলেট জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মো. ওবায়দুর রহমান, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাছিত টুটুল, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা সভাপতি সাইফুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক আ স ম মিসবাহ এবং যুক্তরাজ্য প্রবাসী মনির হোসাইন।
বিএনপি উপনির্বাচনে অংশ নেবে না বলে গত রবিবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম জানিয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে ধানের শীষের মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমেদ চৌধুরী, যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার এমএ সালাম ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালেক।
তবে উপনির্বাচনে দলের অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট-৩ আসনে ভোটের লড়াইয়ে মাঠে থাকছেন না বিএনপির কোনো প্রার্থী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এই আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি আমি তো নয়ই, আমার দলের কেউ নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবেও অংশ নেবেন না।
উপনির্বাচনে অংশ না নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিস্থিতি নেই। তবুও আমরা গণতন্ত্রের স্বার্থে বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। কিন্তু ইলেকশন কমিশন সরকারের প্রেসক্রিপশনে চলে। সুতরাং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো অর্থ নেই। তিনি বলেন, ‘এবার আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না। দল এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এখন দলের নির্দেশনা মেনে আগে গণতন্ত্র ফেরাতে হবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা জরুরি।’
সিলেট-৩ আসনটি এক সময় জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু পরে আসনটি ধরে রাখতে পারেনি জাপা। এবার আসনটি শরিক দল হিসেবে নিজেদের প্রার্থী চায় জাপা। এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক, জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব ওসমান আলী ও শিল্পপতি নজরুল ইসলাম বাবুলের নাম শোনা যাচ্ছে। জাতীয় পার্টির হয়ে এই আসনে ভোটের রাজনীতিতে এক সময় সরব ছিলেন আতিকুর রহমান আতিক। পরবর্তী সময়ে তিনি হবিগঞ্জে চলে যান। এখন আবার নিজ এলাকায় ফিরতে চাচ্ছেন আতিক। তবে গত ২৫ মে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ও সিলেটের নেতৃবৃন্দের এক বৈঠকে সিলেট-৩ আসনে উপ-নির্বাচনে দল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. নজরুল ইসলাম বাবুলকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
এ ছাড়া খেলাফত মজলিস সিলেট জেলার সহসাধারণ সম্পাদক দিলওয়ার হোসাইন প্রমুখ এখানে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচিত হচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের বাড়ি দক্ষিণ সুরমায়। গত নির্বাচনেও এই আসনে তিনি প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহর্তে সরে যান। গত কয়েকদিন ধরে প্রায় প্রতিদিনই তিনি সিলেট-৩ আসনে ছুটে যাচ্ছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি প্রচার চালাচ্ছেন।
ঈদের পর থেকে এলাকায় পুরোপুরি সক্রিয় রয়েছেন বিএমএর কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী। এর আগেও নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে প্রচারনা চালিয়েছেন তিনি। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশছেন।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব ২০০৮ সাল থেকে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে আসছেন কিন্তু পাননি। গত নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে গত নির্বাচনের পর থেকেই মাঠে ছিলেন তিনি। এবারও নিয়মিত গণসংযোগ-প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
ম্যানচেস্টার আওয়ামী লীগ সভাপতি এনাম উল ইসলাম ঈদের আগে থেকেই মাঠে রয়েছেন। গত রমজানে তিনি প্রতিদিনই সহায়তা নিয়ে মানুষের কাছে ছুটে গেছেন।
রমজান মাসে নিয়মিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শাহ মুজিবুর রহমান জকন। গত নির্বাচনেও এই আসনে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দলের মনোনয়ন পাননি।
অন্যদিকে প্রথমে নীরব থাকলেও শেষ পর্যন্ত স্বামীর আসনে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন প্রয়াত সাংসদ মাহমুদ উস সামাদের স্ত্রী ফারজানা সামাদ চৌধুরী। সম্প্রতি তিনি নেতাকর্মী ও সকল শ্রেণি-পেশার লোকজনের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেছেন। পরে এক বিবৃতিতে তিনি সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘স্বামী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী এমপির অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে ও নির্বাচনী এলাকার মানুষের পাশে থাকতে তিনি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী।’
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন,‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ওপর আস্থা রাখলে তিনি এ আসনে নৌকার প্রার্থী হতে চান। ইতোমধ্যে দলীয় নেতাকর্মী ও এলাকার মানুষ তার পক্ষে নির্বাচনে নেমেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, প্রয়াত এমপির অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে তিনি কাজ করবেন।
দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএমএ নেতা ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, ‘দীর্ঘদিন চিকিৎসাসেবার সঙ্গে জড়িত ছিলাম। সরকারি চাকুরি থেকে অবসর নিয়েছি। এখন আমি আমার এলাকার মানুষের সেবা করতে চাই। তাই নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইব। দল আমাকে উপযুক্ত মনে করলে এবং মনোনয়ন দিলে অবশ্যই নির্বাচন করব। কারণ এই আসনে এর আগে আমার মরহুম বড়ভাই ইনামুল হক চৌধুরী বীরবিক্রমও দুবার সংসদ সদস্য ছিলেন।
বিএ-১৫