শুয়াইব হাসান
মে ২৪, ২০২১
০৫:০৩ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মে ২৪, ২০২১
০৫:০৩ পূর্বাহ্ন
সিলেটে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। এ অঞ্চলে এবারের চাল উৎপাদন অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বেশি উৎপাদন হয়েছে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, সিলেট অঞ্চলে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। আবাদকৃত জমিতে চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ লাখ ৩৭ হাজার ৯৭৮ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছে ১৯ লাখ ৬৮ হাজার ১৭৫ মেট্রিক টন।
পরিমিত বৃষ্টি, কম শীত, উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান (হাইব্রিড) আবাদ বেশি হওয়ায় এবার ফলনও ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা নিশ্চিন্তে ধান কেটে গোলায় তুলেছেন। করোনা মহামারীর মধ্যেও এবার বোরো’র আশাতীত ফলনে কৃষকের মুখে এখন তৃপ্তির হাসি।
এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৪ লাখ ৮১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। হেক্টর প্রতি ৪ মেট্রিকটন গড়ে উৎপাদন হয় ১৯ লাখ ২৯ হাজার ২৩ মেট্রিক টন চাল। বিগত সময়ে এটিই ছিল চাল উৎপাদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর (২০১৯-২০) বোরো আবাদ হয় ৪ লাখ ৭৪ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় ১৮ লাখ ৬৪ হাজার মেট্রিক টন চাল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বোরোর আবাদ হয় ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৮৬৯ হেক্টর। চাল উৎপাদেনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ১০৫ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয় ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ৮১৪ মেট্রিক টন। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০৯ মেট্রিক টন বেশি।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ অঞ্চলে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হলেও আগাম ও আকষ্মিক বন্যায় অধিকাংশ হাওরের ফসল তলিয়ে যায়। সে বছর ১০ লাখ ৩২ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা) মো. কাজী মজিবর রহমান জানিয়েছেন, হাওরের ধান কাটা শতভাগ শেষ হয়েছে। নন হাওরে এরই মধ্যে ৯৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে।
এবার সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় এবার ১ লাখ ২৬ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিজ জাতীয় ধান আবাদ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ৭৬ গড়ে উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ১ হাজার ৭১১ মেট্রিক চাল।
উফসি জাতীয় ধান আবাদ হয়েছে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ২৮২ হেক্টর জমিতে। ৩ দশমিক ৮৭ গড়ে উৎপাদন হয়েছে ১৩ লাখ ৫১ হাজার ৭২১ মেট্রিক টন। স্থানীয় জাতের ৮ হাজার ১৩ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। ১ দশমিক ৮৪ গড়ে উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৭৪৩ মেট্রিক টন চাল।
সিলেট জেলায় এ বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮২ হাজার হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৮১ হাজার ৯শ হেক্টর জমি। আবাদকৃত জমিতে চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ লাখ ১৭ হাজার ৮২৯ মেট্রিক টন। এরই মধ্যে প্রায় শতভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৮১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয় এবং কর্তনকৃত জমিতে ৩ লাখ ১৯ হাজার ১২০ মেট্রিকটন চাল উৎপাদন হয়েছে বলে জানান জেলা কৃষি অফিসের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র সোম।
জেলায় উফসি ধানের আবাদ হয়েছে ৬৪ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে। ৩ দশমিক ৯০ গড়ে মোট উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার ৫৭ মেট্রিক টন চাল। হাইব্রিড জাতীয় ধান আবাদ হয়েছে ১২ হাজার ৭০০ হেক্টর। ৪ দশমিক ৭৩ উৎপাদন হয়েছে মোট ৬০ হাজার ৭১ মেট্রিক টন এবং স্থানীয় ৪ হাজার ৫৭০ হেক্টরে উৎপাদন হয়েছে ৪ হাজার ২৭১ মেট্রিক টন।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি অফিসের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মোস্তফা ইকবাল আজাদ জানান, সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২৩ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ৯ গড়ে চাল উৎপাদন হয়েছে ৯ লাখ ১৯ মেট্রিক টন চাল।
জেলায় ৫৬ হাজার হেক্টরে হাইব্রিজ জাতীয় বোরো ধান ফলানো হয়। ৪ দশমিক ৮৬ গড়ে চাল উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৭২ হাজার ১৬০ মেট্রিক টন। স্থানীয় জাতের ধান চাষ হয়েছে সবচেয়ে কম। ১২ হাজার হেক্টরে ১ দশমিক ৮২ গড়ে উৎপাদন হয়েছে ২১ হাজার ৮৪০ মেট্রিক টন। উফসি জাতের ধান উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে। ৩ দশমিক ৮২ গড়ে উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬০ মেট্রিক টন।
সুনামগঞ্জের ১৫৪টি ছোট-বড় হাওরে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। দেখার হাওর, করচার হাওর, শনির হাওরসহ ছোটবড় এসব হাওরে বোরো উৎসবে মেতেছিলেন কৃষকরা। আশাতীত ফলনে এসব কৃষকের ঘরে এখন ঈদের খুশি।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফরিদুল হাসান জানান, মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ফলন কিছুটা কম হলেও ফসল ঘরে তোলার সময় সবচেয়ে সুন্দর ও নিরাপদ পরিবেশ ছিল। এ জন্য কৃষকরা কাক্সিক্ষত ফসল ঘরে তুলতে পেরেছেন।
মৌলভীবাজারেও উৎপাদন ভালো হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা সামছুদ্দিন আহমেদ জানান, জেলার সাতটি উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৬ হাজার ৩৩০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৫৬ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন চাল। উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ৯৬১ মেট্রিক টন চাল।
জেলায় হাইব্রিজ জাতীয় ধান চাষ হয়েছে ৮ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে। হেক্টরপ্রতি ৪ দশমিক ৮৮ গড়ে ৩৯ হাজার ৭২৩ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়েছে। উফসি জাতীয় ধান আবাদ হয়েছে ৪৭ হাজার ৮৪৩ হেক্টর জমিতে। ৩ দশমিক ৯০ গড়ে উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৫৮৭ মেট্রিক টন। স্থানীয় জাতের ধান চাষ হয়েছে মাত্র ৩৬২ হেক্টরে। উৎপাদন হয়েছে হেক্টর প্রতি ৫৬১ মেট্রিক টন।
হবিগঞ্জ জেলা কৃষি অফিসের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মো. আশেক পারভেজ জানান, জেলায় বোরো আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ১৩০ হেক্টরে। আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ ১৮ হাজার ১৫১ মেট্রিক টন। সেখানেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
হবিগঞ্জে ৪ দশমিক ২৫ গড়ে উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ২১ হাজার ৪৯৫ মেট্রিক টন চাল। হাইব্রিজ ধানের আবাদ হয়েছে ৪৮ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে। ৪ দশমিক ৭৩ গড়ে উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ২৮ হাজার ৭৪৩ মেট্রিক টন। উফসি জাতের ধান আবাদ হয়েছে ৭৩ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে। ৩ দশমিক ৯২ গড়ে উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৪১৫ মেট্রিক টন। স্থানীয় জাতের ধান আবাদ হয়েছে মাত্র ৯০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ১৫৭ মেট্রিক টন চাল।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, অনুকূল পরিবেশ, সঠিক পরিচর্যা ও সময়মতো ঘরে ধান তুলতে পারায় এবার অতীতের চেয়ে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। প্রতি বছর পতিত থাকা জমির ৫০ শতাংশও আবাদের আওতায় আনা গেলে সিলেট অঞ্চলে আরও ৩ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে।
আরসি-০১