গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি
মে ২৪, ২০২১
১২:১৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মে ২৪, ২০২১
০২:৪০ পূর্বাহ্ন
বর্ষাকাল সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রাতারগুল ভ্রমণের জন্য দারুন সময়। বর্ষায় যেন নিজের আসল রূপ ও আভিজাত্য নিয়ে হাজির হয় রাতারগুল। এই সময়ে জায়গাটি ফিরে পায় তার রূপ-যৌবন। করোনার কারণে দীর্ঘদিন থেকে এখানে মানুষের যাতায়াত নেই। নিষেধাজ্ঞার আগে পর্যটকরা ভ্রমণে এসে বনের ভেতরে নৌকায় ঘুরে খাবারের প্যাকেট, চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতলসহ নানান রকম ময়লা-আবর্জনা পানিতে ফেলে গিয়েছিলেন। চারপাশে এসব ময়লা-আবর্জনা জমেছিল, যা বনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বর্ষা আসার আগেই এ সকল বর্জ্য পরিষ্কার না করলে যত্রতত্র ফেলে রাখা এসব ময়লা-আবর্জনা পানির স্রোতে ছড়িয়ে পড়বে পুরো বনজুড়ে।
বিষয়টি নজরে আসে গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তাহমিলুর রহমানের। এরপর পর্যটকদের ফেলে যাওয়া আবর্জনা পরিষ্কারের উদ্যোগ নেন তিনি। এ লক্ষ্যে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নিতে আগ্রহীদের প্রতি তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আহ্বান জানান। তার আহ্বানে সাড়া দেন একদল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ ও উপজেলার বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক। তাদের সঙ্গে স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরাও অংশ নেন।
শনিবার (২২ মে) আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবসে ইউএনও তাহমিলুর রহমানের নেতৃত্বে জলারবন রাতারগুলে দিনব্যাপী চলে পরিচ্ছন্নতা অভিযান। বন থেকে পর্যটকদের ফেলে যাওয়া প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন, চকলেট ও চিপসের প্যাকেট এবং সিগারেটের খালি প্যাকেটসহ নানা আবর্জনা কুড়িয়ে নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বনবিট কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ ৭টি নৌকায় করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় অর্ধশতাধিক লোক এ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নেন।
ইউএনও তাহমিলুর রহমান বলেন, রাতারগুলে অনেক ময়লা ও বর্জ্য জমে আছে খবর পেয়ে পরিষ্কার করার জন্য উদ্যোগ নিই। পরে আগ্রহী সকলকে এ কাজে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানাই। এতে অনেক মানুষই অংশগ্রহণের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী, স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয়দের নিয়ে বনের বর্জ্য পরিষ্কার করি। এ বনের প্রতি মানুষের ভালোবাসায় আমরা মুগ্ধ।
অংশগ্রহণকারী সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বন বিভাগকে এ বিষয়ে তদারকি বৃদ্ধি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বনের সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির কার্যক্রম আরও বাড়াতে বলা হয়েছে। যে সকল মাঝি পর্যটকদের বনের ভেতরে নিয়ে যান, তাদের এ সকল বর্জ্য যাতে পানিতে না ফেলা হয় এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যটন উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বনের ভেতরে পর্যটকদের খাবার গ্রহণ নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ বন রক্ষায় সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণ ও প্রশাসন ছাড়াও পর্যটকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাদের কাছ থেকে নাগরিক দায়িত্বপালন প্রত্যাশা করি।
প্রসঙ্গত, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে অবস্থিত সোয়াম ফরেস্ট রাতারগুল। ৫০৪ দশমিক ৫০ একর আয়তনের এ বনকে ১৯৭৩ সালে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিশাল এ বনে রয়েছে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ। একসময় এই স্থানটি ছিল নির্জন। পরে ২০১২ সালে গণমাধ্যমে রাতারগুলের সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। এরপর এখানে বাড়তে থাকে পর্যটকদের আগমন।
এমএম/আরআর-০৬