উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর
মে ০১, ২০২১
০২:৩৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মে ০১, ২০২১
০২:৩৯ পূর্বাহ্ন
সিলেটের ওসমানীনগরে অনুমোদনবিহীন একটি ক্লিনিকে মা ও শিশুর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। উপজেলার তাজপুর কদমতলায় দীর্ঘদিন ধরে ‘মা ও শিশু ক্লিনিক’ পরিচালিত হলেও এ বিষয়ে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। চিকিৎসকবিহীন এ প্রতিষ্ঠানে একাধিকবার ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, উপজেলার তাজপুর কদমতলায় এনজিও সংস্থা সোসাইটি ফর সিলেট রিসোর্স অ্যাডভান্সড কমিউনিটি (স্র্যাক) এর তত্ত্বাবধানে একটি ভাড়া করা বাসায় মা ও শিশু ক্লিনিকটি পরিচালিত হচ্ছে। সেখানে দু’জন প্যারামেডিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীর মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে সন্তান প্রসব, মা ও শিশুর চিকিৎসা প্রদানসহ ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ বিক্রির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র থাকার বিধান থাকলেও তা তাদের কাছে নেই। নেই কোনো সনদধারী ডাক্তার। এমনকি ক্লিনিকে সরকারের ইপিআই (টিকা) কার্যক্রম পরিচালনার কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে এর কোনো অনুমোদন নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এস এম শাহরিয়ার।
এদিকে, ক্লিনিকে কর্তৃপক্ষের ভুলে একাধিক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের এখানে সম্প্রতি এক নবজাতক মৃত অবস্থায় জন্ম নিয়েছে। তবে আর কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। অবশ্য বাস্তবের সঙ্গে তাদের কথার কোনো মিল পাওয়া যায়নি।
বালাগঞ্জ উপজেলার রূপাপুর গ্রামের জিতু মিয়া জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্তান প্রসবের জন্য তার স্ত্রীকে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করেন। ওইদিন সন্ধ্যায় ডেলিভারির পর তার মৃত সন্তান জন্ম নিয়েছে বলে জানান ক্লিনিকের লোকজন। এরপর সবাই সটকে পড়ে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় ভূধরপুর গ্রামের বিষ্ণুগুণ জানান, গত বছরের ১৮ নভেম্বর তার বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে ভর্তি করা হলে ডেলিভারির সময় নবজাতকের মৃত্যু হয়। পরে গর্ভবর্তী নারীকে অন্যত্র নিয়ে চিকিৎসা দিতে হয়। অথচ ভর্তির এক ঘণ্টা পূর্বেও ডাক্তারের পরীক্ষায় সন্তান সুস্থ ছিল বলে জানান তিনি।
তাজপুর গুপ্তপাড়া এলাকার ফজলু মিয়া জানান, ৫-৬ মাস পূর্বে তার বোনকে সন্তান প্রসবের জন্য ওই ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ডেলিভারির পর নবজাতকের শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে নবজাতকের মৃত্যু হয়। শুধু ডেলিভারির জন্য চার্জ হিসেবে ওষুধ ছাড়া সাড়ে ৪ হাজার টাকা প্রদান করতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
ক্লিনিকে দায়িত্বরত ম্যানেজার ফজলু মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন এনজিও সংস্থার অধীনে গত প্রায় ২০ বছর ধরে ক্লিনিকটি পরিচালনা করছেন তারা। বিভিন্ন সময়ে এনজিও বদলানোর কারণে শুধু নাম পরিবর্তন করে একই টিম দ্বারা ক্লিনিকটি পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রতিমাসে গড়ে ২০-২৫টি ডেলিভারি তারা করে থাকেন। ডেলিভারি চার্জ হিসেবে ২ হাজার টাকা করে আদায় করছেন তারা। এক্ষেত্রে রোগীকে ওষুধ ও অন্যান্য খরচ আলাদাভাবে পরিশোধ করতে হয়। তাদের নিজস্ব ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে হয় রোগীদের।
ক্লিনিক পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন আছে কি না জানতে চাইলে ম্যানেজার ফজলু মিয়া প্রথমে অনুমোদন আছে দাবি করলেও পরবর্তীতে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বরাবরে ইপিআই কর্মসূচি বাস্তবায়নের আবেদন করা হয়েছে।
স্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক কয়েছ আহমদ বলেন, 'স্র্যাক পরিচালিত মা ও শিশু ক্লিনিক পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়ে আসছে। এটি পরিচালনার ফান্ড দেশের বাইরে থেকে আসে। এটা কোনো হাসপাতাল নয়, এটা একটা প্রজেক্ট। এর আওতায় গরিবদের স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়।'
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এস এম শাহরিয়ার বলেন, 'ওই ক্লিনিক পরিচালনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি আছে কি না আমার জানা নেই। ইপিআই কর্মসূচি পালনের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু অনুমোদন দেওয়া হয়নি।'
সিলেট জেলার সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল বলেন, 'যেকোনো ধরনের ক্লিনিক পরিচালনার জন্য ডাক্তার এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন রয়েছে। স্র্যাক মা ও শিশু ক্লিনিক কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে এ বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।'
ইউডি/আরআর-০১