সিলেটে সপ্তাহের ব্যবধানে করোনায় মৃত্যু বেড়েছে আড়াই গুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক


এপ্রিল ৩০, ২০২১
০৭:১২ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ৩০, ২০২১
০৭:৩০ পূর্বাহ্ন



সিলেটে সপ্তাহের ব্যবধানে করোনায় মৃত্যু বেড়েছে আড়াই গুণ

সিলেটে করোনভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা কয়েকদিন ধরে কমলেও বাড়ছে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা। গত ৭ দিনে সিলেট বিভাগে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা আগের ৭ দিনের থেকে আড়াই গুণ বেশি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার এবারের ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ফুসফুস ড্যামেজ করে দিচ্ছে। তাই মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৩ এপ্রিল থেকে বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) সকাল ৮টা পর্যন্ত বিভাগে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ২৪ জনই সিলেট জেলার বাসিন্দা। বাকিদের মধ্যে ১ জন সুনামগঞ্জ এবং ২ জন মৌলভীবাজার জেলার বাসিন্দা। এর আগে ৭ দিন অর্থাৎ গত ১৬ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত মারা যান ১১ জন। এ পর্যন্ত চলতি মাসে ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৫০ জন, সুনামগঞ্জে ১ জন, হবিগঞ্জে ১ জন এবং মৌলভীবাজার জেলায় ৪ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত এক মাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে গত বছরের জুলাইয়ে। এ মাসে মৃত্যু হয়েছিল ৬৯ জনের। গত বছরের ১৫ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ওইদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন। এর পর থেকেই প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। গত বছরের এপ্রিলে মৃত্যু হয় ৩ জনের, মে মাসে মৃত্যু হয় ১৬ জনের, জুনে মৃত্যু হয় ৫৮ জনের, জুলাই মাসে মৃত্যু হয় ৬৯ জনের, আগস্ট মাসে মৃত্যু হয় ৪১ জনের, সেপ্টেম্বরে মৃত্যু হয় ৩১ জনের, অক্টোবরে মৃত্যু হয় ১৩ জনের, নভেম্বরে মৃত্যু হয় ১৩ জনের, ডিসেম্বরে মৃত্যু হয় ১৯ জনের। এ বছরের জানুয়ারিতে মৃত্যু হয় ১২ জনের, ফেব্রুয়ারিতে মৃত্যু হয় ৩ জনের এবং গত মার্চে মৃত্যু হয় ১২ জনের।

দ্রুত মৃত্যু বাড়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় সিলেট মিররকে বলেন, ‘করোনার এবারের ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ফুসফুস ড্যামেজ করে দিচ্ছে। অসুস্থতা বুঝে ওঠার আগেই রোগীকে নিতে হচ্ছে আইসিইউতে কিংবা লাইফ সাপোর্টে। অনেককে আবার হাসপাতালে নেওয়ার সুযোগও মিলছে না। ফলে এবার মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর আমরা দেখেছি মানুষের শরীরে করোনা উপসর্গ যেমন, জ্বর-সর্দি, হাঁচি ছিল। তবে এবার অনেকের শরীরে কোনো উপসর্গ নেই। ফুসফুসেই প্রথম আঘাত করছে করোনা। তাই শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তি হচ্ছেন বেশি। তাদের অক্সিজেন বা আইসিইউ সাপোর্টও লাগছে বেশি।’

তবে মৃত্যু বাড়লেও মানুষের মাস্ক পরার প্রবণতা কম। মাস্ক নিয়ে বের হলেও অনেকে থুতনিতে বা গলায় ঝুলিয়ে রাখছেন। অনেকেই পুলিশকে দেখলে পকেট থেকে মাস্ক বের করে পরছেন। তবে গত কয়েকদিন ধরে পুলিশ বা প্রশাসনেরও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে অভিযানের সংখ্যা কমে এসেছে। বিশেষ করে শপিংমল ও মার্কেট খোলার ঘোষণার পর নগরে স্বাভাবিক হতে চলেছে মানুষের উপস্থিতি। তবে মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে আবারও কঠোর হতে যাচ্ছে সরকার।

করোনা থেকে বেঁচে থাকতে হলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে বলে জানিয়েছেন ডা. হিমাংশু লাল রায়। তিনি বলেন, ‘করোনা থেকে বাঁচতে চাইলে মাস্ক ব্যবহারের বিকল্প নেই। নিজের সুরক্ষা নিজেকেই নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (সাধারণ শাখা, কোভিড-১৯ মিডিয়া সেল) শাম্মা লাবিবা অর্ণব সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমাদের অভিযান চলমান আছে। তবে এখন আমরা সচেতনতা বৃদ্ধিতেই কাজ করছি বেশি।’

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২০ হাজার ৫৭২ জন। এখন পর্যন্ত করোনাভারাইরাসে আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন ৩৪৬ জন। মৃতদের মধ্যে সিলেট জেলায় সর্বোচ্চ ২৭৩ জন, সুনামগঞ্জে ২৭ জন, হবিগঞ্জে ১৮ জন এবং মৌলভীবাজার জেলায় ২৮ জন রয়েছেন। বিভাগে এ পর্যন্ত ১৯ হাজার ২১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়েছেন।

এনএইচ/আরসি-০১/বিএ-০১