নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ২৮, ২০২১
০১:৪৮ পূর্বাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ২৮, ২০২১
০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন
ছবি- সংগৃহীত
সিলেটে প্রতিদিন বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। শনাক্ত রোগীর সঙ্গে সিলেট করোনা আইসোলেশন হাসপাতাল শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। এদের অনেকের প্রয়োজন হচ্ছে অক্সিজেনের। ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন আমদানি করতে পারছে না। তাই সংকটের শঙ্কা থেকে অক্সিজেন ব্যবহারে মিতব্যয়ী হয়েছেন শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে তরল অক্সিজেন সরবরাহ করে এক্সপেকট্রাঅক্সিজেন নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তারা ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি করেন। সম্প্রতি যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা তরল অক্সিজেন আসা বন্ধ হয়ে গেছে। গত ২১ এপ্রিলের পর থেকে আর কোনো অক্সিজেনবাহী গাড়ি স্থলবন্দরটি দিয়ে দেশে আসেনি। বাংলাদেশে করোনার চিকিৎসার কাজে তরল অক্সিজেন ব্যবহৃত হয়। বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্র জানায়, লিন্ডে বাংলাদেশ, এক্সপেকট্রা, পিওর অক্সিজেনসহ পাঁচটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে তরল অক্সিজেন আমদানি করে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল ও বাংলাদেশের বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে ওই অক্সিজেন বাংলাদেশে আসে। ২১ এপ্রিলের আগে এক সপ্তাহে ৪৯৮ মেট্রিক টনের বেশি তরল অক্সিজেন ভারত থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে দেশে আসে। যার আমদানিমূল্য প্রতি মেট্রিক টন ১৬৫ মার্কিন ডলার। ২৯টি ট্যাংকারে এই তরল অক্সিজেন বাংলাদেশে আসে। দুটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান লিন্ডে বাংলাদেশ ও এক্সপেকট্রা ওই অক্সিজেন আমদানি করে।
বর্তমানে শামসুদ্দিন হাসপাতালে চাহিদামতো অক্সিজেন মজুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত রোগীর চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ করছে এক্সপেকট্রাঅক্সিজেন লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া ভবিষ্যতেও করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে সর্বোচ্চ সরবরাহ নিশ্চিত করবে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে প্রতিদিন তরল অক্সিজেনের চাহিদা দেড় হাজার লিটার থেকে ১ হাজার ৮শ লিটার পর্যন্ত। যার পুরোটাই সরবরাহ করে এক্সপেকট্রাঅক্সিজেন লিমিটেড। গত বছরের ডিসেম্বরে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সেবা নিশ্চিত করতে সিলেটে এই হাসপাতালটিতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট বসায় কোম্পানিটি। যার ধারণ ক্ষমতা ১০ হাজার লিটার।
এ বিষয়ে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র সিলেট মিররকে বলেন, ‘সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে অক্সিজেন না পাওয়ায় চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে এনে আমাদের অক্সিজেন সরবরাহ করে যাচ্ছে। বর্তমানে আমাদের চাহিদা মাফিক অক্সিজেন পাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি আমাদের অক্সিজেন যতটুকু সম্ভব কম ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছিল। আমরা বলেছি যেহেতু আমাদের হাসপাতালটি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল, তাই এখানে অক্সিজেন নিয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ করা যাবে না। রোগীর যতটুক অক্সিজেন প্রয়োজন ততটুক রোগীকে দিতে হবে। পরে অবশ্য তারা আমাদের প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পেরে অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক রাখবে বলেছে। তবে আমরা এখন অক্সিজেন ব্যবহারে মিতব্যয়ী হচ্ছি। নার্সদেরও বলেছি কোনোভাবেই যাতে অক্সিজেন অপচয় না হয়।’
জানা যায়, দেশের চিকিৎসা খাতে অক্সিজেনের চাহিদার বড় একটি অংশ আমদানি হয় ভারত থেকে। প্রতি মাসে ভারত থেকে শুধু বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন অক্সিজেন আমদানি হয়ে থাকে। গত বছরের তুলনায় এ বছর করোনা সংক্রমণ অনেক বেশি হওয়ায় করোনার নতুন ধরন (স্ট্রেইন)
অতি মাত্রায় সংক্রামক হওয়ায় রোগীদের ফুসফুস মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকেরই তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই করোনায় সংক্রমিত রোগীদের জীবন বাঁচাতে সম্প্রতি দেশে অক্সিজেনের চাহিদাও বেড়েছে।
এনএইচ/আরসি-১১