পিচ ঢালাইয়ের পরদিনই আবার খোঁড়াখুঁড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক


এপ্রিল ২১, ২০২১
০৬:৫৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২১, ২০২১
০৯:০৬ অপরাহ্ন



পিচ ঢালাইয়ের পরদিনই আবার খোঁড়াখুঁড়ি

সিলেট নগরে দীর্ঘদিন ধরে চলছে বিভিন্ন রাস্তার উন্নয়ন কাজ। এসব কাজে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ বেশ পুরোনো। নগরের পূর্ব জিন্দাবাজার-জেলরোডের উন্নয়ন কাজেও এমনটা ঘটেছে। গত শনিবার বিটুমিন, বালু-পাথর দিয়ে সড়কটি পিচ করা হয়। কিন্তু পরের দিনই পূর্ব জিন্দাবাজার এলাকায় সড়কটি খুঁড়ে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের লাইন টানতে দেখা গেছে।

জিন্দাবাজার পয়েন্ট থেকে নাইওরপুল পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কের প্রশস্তকরণ কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে । এই কাজ এখনও চলছে। গত বছর এই সড়কের বারুতখানায় কালভার্ট নির্মাণের জন্য বেশ কয়েকদিন যানচলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। এই কাজ শেষ হওয়ার পর গত শনিবার পূর্ব জিন্দাবাজার থেকে বারুতখানা পর্যন্ত সড়ক পিচ করা হয়। গতকাল রবিবার পূর্ব জিন্দাবাজার এলাকার আর বি কমপ্লেক্সের সামনে রাস্তার নতুন পিচ তুলে রাস্তা খুুঁড়ে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের লাইন টানতে দেখা যায়।

স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রায় এক বছর ধরে এই রাস্তার কাজ চলছিল। কখনও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে, কখনও রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছে। এতে আমাদের ভোগান্তি হয়েছে। কিন্তু উন্নয়নের স্বার্থে আমরা সব মেনে নিয়েছি। এক বছর পর যখন কাজ শেষ হয়ে রাস্তা পিচ হয়ে গেল, তখন আবার নতুন করে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করা হয়েছে। এভাবে ভালো রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি হলে রাস্তা বেশিদিন টিকবে না। পিচ করার আগে সব কাজ শেষ করা উচিত ছিল।’

এ বিষয়ে জানতে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরবর্তীতে সিসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী আলী

আকবরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘প্রায় ৬ মাস আগে এই রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু হয়। আমরা দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করেছিলাম ইন্টারনেট, ডিস টিভির লাইন, আন্ডারলাইন ক্যাবল সবকিছুর কাজ যাতে যথাসময়ে শেষ করা হয়। এজন্য মেয়র মহোদয় একাধিকবার তাদের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা যখন পিচ দিলাম তখন তারা আবার কাজ শুরু করেছেন।’

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে সিসিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা কাজ শেষ করে ফেলেছিলেন। হয়ত পরে কোনো সমস্যা হয়েছে। তাই আবার কাজ শুরু করতে হয়েছে। আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল তো আমাদের দেশে এই প্রথম, তাই হয়ত এরকম সমস্যা হচ্ছে। তবে তাদের কাজ শেষ হলে রাস্তা আবার ঠিক করে দেওয়া হবে।’ সড়কটি সংস্কারের বাজেট কত টাকা জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারেননি।  

এ বিষয়ে সিলেট বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হাসানকে একাধিকার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমরা সিসিককে বলেছিলাম রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক খুটি তোলার পর যেন তারা কাজ করেন। তখন সিসিক আমাদের জানিয়েছিল রাস্তা ও ড্রেনের পাশে তারা আরও কাজ করবেন। আর যেহেতু খুটিগুলো ড্রেনের পাশে আছে সেক্ষেত্রে আমরা কাজ করলে তাদের কোনো অসুবিধা হবে না। এ কথা বলেই তারা রাস্তার পিচ করার কাজ করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রাস্তার পাশে থাকা বৈদ্যুতিক খুটি তুলে ফেলব, তাই আন্ডারগ্রাউন্ডে টুকটাক কাজ রয়েছে। তবে এ কাজে রাস্তার কোনো ক্ষতি হবে না। হয়ত আগামীকালই কাজ শেষ হয়ে যাবে।’

এই সমন্বয়হীনতার ফলে একদিকে যেমন দুভোর্গ বাড়ছে অন্যদিকে অতিরিক্ত ব্যয়ও বাড়ছে বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ।

তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘মেয়র বলেছিলেন সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হবে। তাহলে এই সমন্বয়হীনতা কেন? এছাড়া নগরের যেসব সড়কে এখনও কাজ চলমান আছে তা দ্রুত শেষ করতে হবে। কারণ বর্ষা মৌসুম চলে এসেছে। নাহলে পরে বর্ষায় জনদুর্ভোগ আরও বাড়বে।’ 

এনএইচ/আরসি-০২