উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর
এপ্রিল ১৫, ২০২১
০৩:১৬ পূর্বাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ১৫, ২০২১
০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন
দ্বিতীয়বারের মতো বিবর্ণ পহেলা বৈশাখ উদযাপন করলেন সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলাবাসী। প্রতিবছর এই দিনে উপজেলার সর্বত্র সাজ সাজ রব পড়ে যায়। উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে একাধিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনটিকে ঘিরে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কিন্তু করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে ২য় বারের মতো ওসমানীনগরে উচ্ছ্বাসবিহীন পহেলা বৈশাখ পালিত হয়েছে।
শত শত বছর ধরে ওসমানীনগরের সুপ্রাচীন ব্যবসাকেন্দ্র গোয়ালাবাজার ও তাজপুরের পাইকারি ব্যবসায়ীরা এই দিনে হালখাতা উৎসবও পালন করে আসছেন। রঙিন কাগজ অথবা ফুল দিয়ে দোকান সাজিয়ে ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করান ব্যবসায়ীরা। এই দিনে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়। বাদ্যকরদের ঢোলের তালে মুখরিত হয়ে উঠে উপজেলার প্রতিটি বাজার।
করোনার সংক্রমণ রোধে লকডাউন পরিস্থিতিতে বুধবার (১৪ এপ্রিল) উপজেলার বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র গোয়লাবাজারসহ তাজপুর, বেগমপুর, দয়ামীর ও উমরপুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ দোকান বন্ধ। কোথাও দু-একটি দোকান খোলা থাকলেও তাদের মধ্যে নেই বৈশাখী আমেজ। চারদিকে সুনশান নিরবতা।
গোয়ালাবাজার এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ী নুর মিয়া বলেন, 'সারা বছর আমরা খুচরা ও ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নগদ-বাকিতে লেনদেন করে থাকি। হালখাতার সময় সবাই পাওনা টাকা মিটিয়ে নতুন বছরের নতুন হিসাবের সূচনা করে। কিন্তু গত ২ বছর ধরে আমরা হালখাতা উৎসব করতে না পারায় লোকসানের মুখে রয়েছি। অনেক ছোট ছোট ব্যবসায়ী ইতোমধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ায় পাওনা টাকা আদায় করাও সম্ভব হচ্ছে না।'
তাজপুর এলাকার ব্যবসায়ী প্রবীর দেব বলেন, 'ব্যবসা মানে লাভ-লোকসান। আমরা ঢাকা-সিলেট থেকে অনেক সময় বড় বড় মহাজনদের কাছ থেকে বাকিতে মালামাল কিনি। হালখাতার সময়ে পাওনা টাকা উঠিয়ে মহাজনদের টাকা পরিশোধ করি। কিন্তু গত ২ বছর ধরে হালখাতা না হওয়ায় পাওনা টাকা আদায় করতে না পেরে মহাজনদের বাকির টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে মহাজনদের সঙ্গে আমাদের তিক্ত সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে।'
পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলার ঐতিহ্যবাহী সাজে সেজে শিক্ষার্থীরা মেতে উঠেন নানা ধরনের লোকজ উৎসবে। পান্তা-ইলিশ, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনে ভরা থাকে দিনটি। উপজেলার ৩টি স্থানে এদিন চড়কপূজার আয়োজন করা হয়। চড়কপূজাকে কেন্দ্র করে জমে উঠে মেলা। শিশুরা আনন্দে মেতে উঠে মেলাকে ঘিরে। করোনাকালে গৃহবন্দি শিশুরাও বঞ্চিত রয়েছে এসব লোকজ আয়োজন থেকে।
'আমরা বাঙালি' এর সভাপতি আব্দুল ওদুদ বলেন, 'উপজেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কুশলীরা পহেলা বৈশাখের জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন। এদিন তারা একাধিক মঞ্চে পরিবেশনা করে করে সুনাম কুড়িয়ে নেন। কিন্তু করোনার কারণে গত ২ বছর ধরে তারা পরিবেশনার কোনো সুযোগ না পেয়ে মুষড়ে পড়েছেন। করোনায় সাংস্কৃতিক অঙ্গণে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।
ইউডি/আরআর-০২