চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডারের

নিজস্ব প্রতিবেদক


এপ্রিল ১৩, ২০২১
০৭:১৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ১৩, ২০২১
০৭:১৪ পূর্বাহ্ন



চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডারের

করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেটে হাসপাতালগুলোতে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে চাপ বেড়েছে হাসপাতালের আইসিইউতে। তাই অনেকেই বাজার থেকে অক্সিজেন কিনে মজুত করছেন বাসায়। অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেড়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডারের দামও। যদিও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বাসায় অক্সিজেন ব্যবহার করা উচিত নয় বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে শ্বাসকষ্ট অন্যতম। যেসব রোগীর শ্বাসকষ্ট সহনীয় মাত্রায় থাকে, তাদের শ্বাস গ্রহণের জন্য অক্সিজেন নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যাদের শ্বাসকষ্টের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়, তাদের শ্বাসযন্ত্র সচল রাখতে বাইরে থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়। কেবল করোনায় আক্রান্ত রোগী নন, আরও অনেক গুরুতর রোগীর জন্য অক্সিজেন সরবরাহ জরুরি হয়ে পড়ে।

সিলেটে করোনার রোগীদের জন্য বিশেয়ায়িত শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ১৬টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি রয়েছে ডায়ালাইসিস রোগীদের জন্য। করোনার রোগীদের জন্য রয়েছে ১৪টি আইসিইউ শয্যা। গত ১৫ দিন ধরেই হাসপাতালের আইসিইউ শয্যা পরিপূর্ণ। কোনো রোগী মারা গেলে বা সুস্থ হলেই মিলছে আইসিইউ শয্যা। এছাড়া নগরের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা থাকলেও ব্যয় চিন্তা করে সরকারি হাসপাতালেই ভরসা সাধারণ মানুষের। হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ও আইসিইউ সঙ্কট থাকায় সাধারণ মানুষ বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত করছেন।

নগরের বিভিন্ন অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে অক্সিজেন সিলিন্ডারের পুরো সেট ১০ থেকে ১১ হাজার টাকায় বিক্রি হত। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। কিছু প্রতিষ্ঠানে এর চেয়ে কম দামে সিলিন্ডার পাওয়া গেলেও অনেক প্রতিষ্ঠান ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকাও আদায় করছে ক্রেতাদের কাছ থেকে। বিক্রেতারা বলছেন, অনেক মানুষ অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনতে আসছেন। হঠাৎ চাহিদা বাড়ায় সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে, তাই দামও বেড়েছে।

নগরের মীরবক্সটুলা এলাকায় মেডিকেল সামগ্রী বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান মেডিমার্টের রুপেন চন্দ্র দাস সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমরা নতুন করে সিলিন্ডার দোকানে তুলিনি। তবে বাজারে সিলিন্ডারের দাম বেড়েছে। আমরা যে সিলিন্ডার ১১ হাজার টাকায় বিক্রি করছি, তা বাজারে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

নগরে চৌহাট্টা এলাকায় চিকিৎসাসামগ্রী বিক্রেতা আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, ‘বাজারে এখন সিলিন্ডারের খুব চাহিদা। চাহিদা বাড়ায় দামও বেড়েছে। আমরা এখন ১৩ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকায় সিলিন্ডার বিক্রি করছি। প্রতিদিন অনেক মানুষ অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনতে দোকানে আসছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের সঙ্গে ট্রলি, ফ্লো মিটার, ক্যানোলা ও মাস্ক দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে ফ্লো মিটারের সরবরাহে সঙ্কট রয়েছে। আমি ১০ দিন আগে অর্ডার দিয়েও ফ্লো মিটার পাচ্ছি না।’

এদিকে, অক্সিজেন সিলিন্ডারের সঙ্গে দাম বেড়েছে পালস অক্সিমিটারেরও। চৌহাট্টা এলাকার চিকিৎসাসামগ্রী বিক্রেতা মেডি সাইন্সের রুবেল মিয়া জানান, তারা যে অক্সিমিটার ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে বিক্রি করতেন। তা এখন কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। বিক্রি করতে হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায়।

নগরের মীরবক্সটুলা এলাকার মিজান চৌধুরী বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে সিট মিলবে কি না তা নিয়ে সংশয় আছে। আমার বাবা-মা দুইজনই শ^াসকষ্টের রোগী। তাই সাধারণ সময়ের চেয়ে দাম বেশি দিয়েই বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে নিয়ে যাচ্ছি।’

ঘরে সিলিন্ডার ব্যবহারের ঝুঁকিও আছে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সিলিন্ডারের ব্যবহার এমনকি মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে মনে করেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কাউকে অক্সিজেন দেওয়া উচিত নয়। শুধুমাত্র অক্সিমিটারে সিচুরেশন কম দেখলেই যে রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া যাবে বিষয়টি এমন না। একজন চিকিৎসকই বুঝতে পারবেন কোন রোগীর কখন অক্সিজেন লাগবে।’

ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কারো কাছে অক্সিজেন বিক্রি না করার আহ্বান জানিয়ে বিক্রেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘কেউ যদি তার বাসায় একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত করে রাখে, তাহলে প্রয়োজনের সময় একজন রোগী হয়ত অক্সিজেন পাবেন না। এ বিষয়ে প্রশাসনেরও নজর দেওয়া উচিত।’

আরসি-০১