শিপার আহমেদ, বিয়ানীবাজার
এপ্রিল ১৩, ২০২১
১২:০০ পূর্বাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ১৩, ২০২১
১২:০০ পূর্বাহ্ন
একসময় বাংলাদেশের মসলার বাজারে একাধিপত্য ছিল সিলেট অঞ্চলে উৎপাদিত তেজপাতার। যার সিংহভাগই সংগ্রহ করা হতো বিয়ানীবাজার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে। উঁচু-নিচু টিলাবেষ্টিত এ অঞ্চলের মাটি তেজপাতা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। প্রাকৃতিক কারণে এখানে উৎপাদিত তেজপাতা অত্যন্ত সুগন্ধযুক্ত। তাই দেশ ছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে এই জনপদে উৎপাদিত তেজপাতার ছিল যথেষ্ট কদর। তবে সেই কদর এখন আর নেই।
তেজপাতা চাষের জন্য বিয়ানীবাজার উপজেলার মোল্লাপুর ও লাউতা ইউনিয়নের সবক'টি গ্রাম এবং পৌরসভার সুপাতলা, নিদনপুর, খাসাড়িপাড়া ও চন্দগ্রাম এলাকার মাটি বেশ উর্বর। পূর্বে এসব এলাকার প্রায় সবকটি উঁচু-নিচু টিলা, বাড়ির আঙিনা কিংবা সামান্য উঁচু পতিত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে তেজপাতা উৎপাদন করা হতো। কিন্তু গত ৫-৬ বছর ধরে তেজপাতা চাষ থেকে নিজেদের অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছেন এখানকার বাগান মালিকরা। তবুও বর্তমানে প্রতিবছর অন্তত ৭-৮ হেক্টর জমিতে তেজপাতা উৎপাদন করেন তারা।
উর্বর মাটিতে মসলা জাতীয় তেজপাতার ভালো উৎপাদন হলেও বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবে হোঁচট খাচ্ছে সম্ভাবনাময় এই খাত। আগে তেজপাতার আবাদ করে চাষিরা লাভবান হলেও এখন দাম না পেয়ে হতাশ। তবে পারিবারিক চাহিদা মেটাতে এখানকার প্রতিটি বাড়িতে দুই-চারটি তেজপাতা গাছ রেখে এখনও চাষ করেন অনেকেই। আবার অনেকে ঝুঁকছেন বিকল্প চাষের দিকে। আর তাই সম্ভাবনাময় এই খাত রক্ষায় সরকারের হস্তক্ষেপ চান বাগান মালিকরা।
বাগান মালিক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, একটি মাঝারি গাছ থেকে ২০-২৫ কেজি ও বড় গাছ থেকে ৩০-৩৫ কেজি তেজপাতা পাওয়া যায়। প্রতি কেজি তেজপাতা ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চাষিদের কাছ থেকে তেজপাতা কিনে নিয়ে শুকানো ও বাছাইয়ের পর বস্তায় বা বাঁশের তৈরি খাঁচায় ভর্তি করে রাখেন। পরে সিলেট ও ঢাকার পাইকাররা এ তেজপাতা কিনে নিয়ে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করেন। কাঁচা পাতা ১২০-১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও বাছাই করে ঢাকার পাইকারদের কাছে তা ২০০-২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এছাড়া খুচরা বাজারে প্রতি আঁটি তেজপাতা ২০-৪০ টাকা করে বিক্রি হয়। এক আঁটিতে পাতাভর্তি ছোট দু'টি ডাল থাকে। মৌসুমে একেকটি গাছ থেকে ২০০-২৫০ আঁটি তেজপাতা পাওয়া যায়।
লাউতা ইউনিয়নের জলঢুপ গ্রামের তেজপাতা চাষি আব্দুল হামিদ বলেন, 'বর্তমানে তেজপাতার দাম অত্যন্ত কম। কিন্তু ৫ বছর আগেও আমাদের বাগান থেকে প্রতিবছর লক্ষাধিক টাকার তেজপাতা বিক্রি করেছি। এখন চাহিদা কমে যাওয়ায় দেশীয় তেজপাতায় অনেকেরই আগ্রহ নেই।' তেজপাতার চাষ ও দেশীয় বাজার বাড়াতে আমদানি বন্ধের দাবি জানান তিনি।
লাউতা ইউনিয়নের কালাইরা গ্রামের তেজপাতা চাষি টিপু আহমদ বলেন, 'আগে তেজপাতার ভালো দাম পেতাম। বর্তমানে বাজারে বিদেশি তেজপাতা বেশি। পাইকারি বিক্রেতারা এখন আর আমাদের কাছ থেকে তেজপাতা কিনতে চান না। অনেকে কিনলেও ন্যায্য মূল্য দিতে চান না। তাছাড়া তেজপাতার বাগানে যা খরচ হয়, তার অর্ধেক দামও পাওয়া যায় না। দাম না পেয়ে তেজপাতার গাছ কেটে ফেলছেন এখানকার অনেক চাষি।'
তেজপাতা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাংলাদেশে যে পরিমাণ তেজপাতা উৎপাদন হচ্ছে তা দিয়ে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। তবুও বিদেশ থেকে কম মূল্যে তেজপাতা আমদানি করা হচ্ছে। পাশাপাশি নানা ধরনের জটিলতার কারণে বাগান ক্রয় বন্ধ করে দিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী।
ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে দেশীয় বাজারে তেজপাতা সরাসরি বিক্রির মাধ্যম চালু করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিছুজ্জামান। তিনি জানান, বিয়ানীবাজার উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া তেজপাতা চাষের উপযোগী। সে কারণে তেজপাতা চাষে এখানকার কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। চাষিদের একত্রিত করে শুকনো পাতা প্যাকেটজাতের মাধ্যমে তেজপাতার বাণিজ্যিকভাবে বিপণন সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
এসএ/আরআর-০১