সিলেটে আইসিইউ’র সংকট তীব্র, ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক


এপ্রিল ০৯, ২০২১
০৭:১১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ০৯, ২০২১
০৭:১১ পূর্বাহ্ন



সিলেটে আইসিইউ’র সংকট তীব্র, ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা
# আইসিইউ মাত্র ১৯টি, # হবিগঞ্জ-সুনামগঞ্জে একটিও নেই

শ্বাসকষ্ট বাড়ায় শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে আসেন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার নিখিল রঞ্জন। তবে হাসপাতালে আইসিইউ খালি না থাকায় ফিরতে হয় তাকে।

সিলেট ও মৌলভীবাজারে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালগুলোতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সুবিধাসম্বলিত শয্যা রয়েছে মাত্র ১৯টি। বিভাগের অপর দুই জেলায় আইসিইউ সুবিধা নেই। এ অবস্থায় করোনা আক্রান্ত রোগীরা আইসিইউ সুবিধা পাচ্ছেন না।  

সরকার নির্ধারিত করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে ১৯টি আইসিইউর শয্যার মধ্যে ১৪টি রয়েছে সিলেট জেলায়। বাকি পাঁচটি মৌলভীবাজারে। সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে আইসিইউ শয্যা নেই। করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সিলেটের ১৪টি শয্যার মধ্যে সবগুলোই এখন রোগীতে পরিপূর্ণ। এ অবস্থায় অনেক রোগী আইসিইউ সুবিধা না পেয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরে যাচ্ছেন। তবে খালি রয়েছে মৌলভীবাজারের পাঁচটি আইসিইউ শয্যা।

শ্বাসকষ্টের কারণে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা থেকে নিখিল রঞ্জনকে বুধবার সকাল ১১টায় শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, রোগীর বর্তমান অবস্থায় আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন। কিন্তু হাসপাতালে কোনো আইসিইউ শয্যা খালি নেই।

রোগীর স্বজনরা জানান, গত মঙ্গলবার রাত থেকে নিখিল রঞ্জনের শ^াসকষ্ট শুরু হয়। গতকাল বুধবার সকালে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। ওসমানী হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা রোগীর লক্ষণ শোনে শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন। শামসুদ্দিন হাসপাতালে নেওয়া হলে তারা রোগীর অক্সিজেন সিচুয়েশন দেখে জানান রোগীর আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন। কিন্তু হাসপাতালে এখন কোনো আইসিইউ বেড খালি নেই। সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে তারা রোগীকে নিয়ে আইসিইউ’র খোঁজে বিভিন্ন হাসপাতালে যান।

শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সুশান্ত কুমার মহাপাত্র সিলেট মিররকে বলেন, ‘হাসপাতালের ১৪টি আইসিইউ বেডের মধ্যে একটিও খালি নেই। কিছুদিন ধরেই পরিপূর্ণ থাকছে আইসিইউ ইউনিট। হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য নির্ধারিত ওয়ার্ডও এখন পরিপূর্ণ।’

সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. শামস উদ্দিন বলেন, ‘সুনামগঞ্জে কোনো আইসিইউ বেড নেই। করোনা রোগীদের জন্য জেলায় ১৪৫টি আইসোলেশন শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে সদরে ১০০ এবং বিভিন্ন উপজেলায় ৪৫টি।’

বেসরকারিভাবে সিলেট নগরে দুইটি হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা চলছে। তবে স্বল্প আয়ের লোকেরা সরকারি হাসপাতালকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। কারণ বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় নিম্ন আয়ের মানুষের সাধ্যের বাইরে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে আইসিইউ রয়েছে ৮টি। এর মধ্যে খালি রয়েছে মাত্র একটি। এছাড়া নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ বেড রয়েছে।

নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ইনচার্জ ডা. নাজমুল হক সিলেট মিররকে বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত রোগীদের চাপ বেড়েছে। তাই আমরা আইসোলেশন শয্যা ও আইসিইউ বেডের সংখ্যাও বাড়িয়েছি। আমাদের ১০টি আইসিইউ বেড রয়েছে। এরমধ্যে কয়েকটি খালি আছে।’

সিলেটের সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ সুবিধা বাড়াতে মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. মো. নুরে আলম শামীম। তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘আইসিইউ সুবিধা বাড়াতে আমরা ইতোমধ্যে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। তবে আমরা হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা অক্সিজেনে জোর দিচ্ছি। কারণ অক্সিজেনের মাধ্যমে সাধারণ বেডেই অনেক রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব।’

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ যে হারে রোগী বাড়ছে তাতে যতই বেড বাড়াই তাতে রোগীর জায়গা দেওয়া সম্ভব হবে না।’

এনএইচ/আরসি-০১