জকিগঞ্জ প্রতিনিধি
এপ্রিল ০৯, ২০২১
০২:১৮ পূর্বাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ০৯, ২০২১
০২:১৮ পূর্বাহ্ন
সিলেটের জকিগঞ্জে ১০ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার (৫ এপ্রিল) রাতে। তবে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ কয়েকজন প্রভাবশালীর চাপ সৃষ্টির কারণে তা তাৎক্ষণিক প্রকাশ করেনি নির্যাতিতার পরিবার।
মেয়েটির পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সোমবার রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে বের হয় স্থানীয় জোবেদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই ছাত্রী। এ সময় পাশের বাড়ির মৃত আকতার আলীর ছেলে সালমান আহমদ (১৮) ও তার সহযোগীরা তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরদিন মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) সকালে অচেতন অবস্থায় সালমানের বাড়ির লোকজন মেয়েটিকে তার বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ ঘটনার পর বিষয়টি গোপন রাখতে চাপ সৃষ্টি করেন ওই গ্রামের ইউপি সদস্যসহ কয়েকজন প্রভাবশালী। তারা নির্যাতিতার পরিবারকে আইনের আশ্রয় নিতে বাধা দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালান। প্রভাবশালীরা একাধিকবার নির্যাতিতার পরিবারকে ডেকে নিয়ে বিচারের নামে উল্টো নির্যাতিতার বোনের স্বামীকে মারধর ও হয়রানি করেন।
নির্যাতিতার মা ও বাবাসহ তাদের বাড়ির নারীরা অভিযোগ করে বলেন, ঘটনা ঘটার পর সেনাপতিরচক গ্রামের মৃত ফজই মিয়ার ছেলে হেলাল আহমদ, স্থানীয় ওয়ার্ডের সদস্য সামছুল হক ও রারাইগ্রামের মৃত আব্দুল জলিল টরইর ছেলে হাফিজ খালেদ ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে নিজেরা 'বিচার' করে দিতে চান। প্রভাবশালীদের ভয়ে তাৎক্ষণিক মুখ খোলেনি নির্যাতিতার পরিবার। কিন্তু মেয়েটির অধিক রক্তক্ষরণের কারণে পরে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন তারা। এতে ওই প্রভাবশালীরা ক্ষেপে গিয়ে নির্যাতিতার বোনের স্বামীকে স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্যের বাড়িতে ডেকে নিয়ে মারধর করেন। পরে আবার প্রভাবশালীরা ধর্ষকের পরিবার দিয়ে নির্যাতিতার পরিবারের বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগ দায়ের করেন।
নির্যাতিতা মেয়েটির মা ও বাবা কান্নাজড়িত কন্ঠে ঘটনার জন্য দায়ীসহ ধামাচাপায় জড়িতদের বিচার চেয়ে জানান, তারা গরিব বলে বিচার পাচ্ছেন না। শুধু প্রভাবশালীদের কথা না মেনে মেয়েকে হাসাপাতালে পাঠানোর কারণে এখন বিচারের বদলে তারা উল্টো হয়রানির শিকার হচ্ছেন। প্রভাবশালীদের ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না তারা। প্রভাবশালীরা তাদেরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। হেলাল ও খালেদ খুবই প্রভাবশালী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের কথায় চলে বলে নির্যাতিতার বাবা-মা দাবি করেন।
এদিকে, স্কুলছাত্রীকে ধরে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় এলাকায় চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। স্কুলের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তারা ধর্ষণে জড়িত ব্যক্তি ও তার সহায়তাকারীসহ ধামাচাপায় জড়িতদের বিচার দাবি করেছে।
এলাকার একাধিক বাসিন্দা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হোক। যারা ধর্ষকের পক্ষে দাঁড়িয়ে নির্যাতিতার পরিবারকে হুমকি, মামলা ও মারধর করেছে, তাদেরকেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান তারা।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সামসুল হক দাবি করেন, তিনি ঘটনা ধামাচাপা দিতে চাননি। তবে তার বাড়িতে ঘটনাটি নিয়ে দু'টি বৈঠক হয়েছে। কিন্তু নির্যাতিতাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর কারণে আর কোনো বৈঠক হয়নি। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন সেনাপতিরচক গ্রামের মৃত ফজই মিয়ার ছেলে হেলাল আহমদ ও রারাইগ্রামের মৃত আব্দুল জলিল টরইর ছেলে হাফিজ খালেদ।
বৈঠকে নির্যাতিতার পরিবারকে মারধর করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, 'নির্যাতিতাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে মাত্র।' মেয়েটির পরিবারকে আইনি সহায়তা না দিয়ে কেন ধামাচাপার চেষ্টা ও হয়রানি করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'যারা ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল তারাই ভালো জানে কী কারণে নির্যাতিতার পরিবারকে হয়রানি করা হচ্ছে।'
এ প্রসঙ্গে জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাসেম জানান, 'মেয়ের পরিবার অভিযোগ নিয়ে থানায় আসবে। এ ব্যাপারে কথা হয়েছে। যারা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা ও নির্যাতিতার পরিবারকে উল্টো হয়রানি করছে, তাদের কাউকেও ছাড় দেওয়া হবে না। থানায় ধর্ষকের পরিবার নির্যাতিতার পরিবারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দিয়েছে বলে আমার জানা নেই।'
ওএফ/আরআর-০৮