সিলেট মিরর ডেস্ক
এপ্রিল ০৪, ২০২১
০৩:২৮ পূর্বাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ০৪, ২০২১
০৩:২৮ পূর্বাহ্ন
বিশ্বনাথ উপজেলায় কৃষক ছরকুম আলী দয়াল হত্যা মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন চাউলধনী হাওর রক্ষা ও কৃষক বাঁচাও আন্দোলন কমিটির নেতারা। একইসঙ্গে চাউলধনী হাওরের শত কোটি টাকার ফসল উৎপাদনে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ তুলে ইজারা বাতিল, কৃষকদের হয়রানি বন্ধ এবং সরকারি জলাশয়ের সীমানা নির্ধারণের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
শনিবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবে কৃষকদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি জানানো হয়। উপজেলার দৌলতপুর ও দশঘর ইউনিয়নের চাউলধনী হাওরপাড়ের প্রায় ২৫ গ্রামের কৃষক সমাজের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কৃষক বাঁচাও আন্দোলন কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আরিফ উল্লাহ সিতাব।
তিনি বলেন, এই হাওরপাড়ের প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কৃষক অত্যাচার-নির্যাতন এবং অবহেলার শিকার হচ্ছেন। কৃষকদের নিজের জমিতে স্বত্ব ভোগ করতে পারছেন না। ইজারাদার উচ্ছেদের হুমকি দিচ্ছেন। এমনকি ফসল উৎপাদন এবং মৎস্য উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করছে। এমতাবস্থায় হাওরের কৃষি-কৃষক রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রধানদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, চাউলধনী হাওরে সরকারি খাস খতিয়ানের ১৭৮ দশমিক ৯৬ একর ভ‚মি রয়েছে। এই জলাশয়ের সীমানা কোন দিন নির্ধারণ করা হয়নি। সিলেট জেলা প্রশাসন দশঘর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে পাঁচ বছরের জন্য জলাশয় লীজ প্রদান করা করেছে। তাতে কৃষকদের আপত্তি ছিল না। তবে লীজ গ্রহণের পরপরই লীজ গ্রহিতা সরকারের প্রদত্ত শর্তসমূহ অমান্য করে মেশিনের সাহায্যে পানি সেচ করে হাওর শুকিয়ে নেন। এর ফলে প্রায় ৪ হাজার একর বীজ তলা ও ফসলি জমিতে ধান চাষ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে এই বছরে প্রায় শত কোটি টাকার ফসল উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন কৃষকরা।
তারা আরও বলেন, আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কৃষকদের ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর, নালা, খাল থেকে মাছ ধরে নেওয়া হচ্ছে। এতে বাধা দিতে গেলে উল্টো কৃষকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কৃষকরা নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে বলেন, ধান উৎপাদনে ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে কৃষকদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, দশঘর মৎসজীবি সমিতির নামে অমৎসজীবিরাই মূলত হাওরে সশস্ত্র বাহিনী গঠন করে ত্রাস সৃষ্টি করছে। এর মূলে রয়েছে চৈতননগর গ্রামের মৃত আফতাব আলীর যুক্তরাজ্য প্রবাসী ছেলে সাইফুল আলম। তার কাছে একাধিক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রও রয়েছে। এসব আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের দাবিও করেন কৃষকরা।
জানা গেছে, গত ২০ জানুয়ারি কয়েক হাজার কৃষক বিশ্বনাথ উপজেলা সদরে লাঙ্গল, জোয়াল, মই, কুদাল হাতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। এসময় তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপিও দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষকরা জানান, এই প্রতিবাদে ক্ষিপ্ত হয়ে কৃষকদের হয়রানি এবং অত্যাচার শুরু করেছে প্রতিপক্ষরা। এমনকি উপজেলা মৎস কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ভিত্তিহীন প্রতিবেদনও তৈরি করা হয়েছ। কৃষকদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে; এবং নানাভাবে হুমকি ধমকি অব্যাহত রয়েছে।
গত ২৮ জানুয়ারি স্থানীয় কৃষক ছরকুম আলী দয়ালের মালিকানাধীন জমির পানি সেচ করছিল। দয়াল তার স্বজনদের নিয়ে পানি সেচে বাধা দেওয়ায় তাকে হত্যা করে সাইফুল বাহিনী। এতে বেশ কয়েকজনকে আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় দয়ালের ভাতিজা আহমদ আলী বাদি হয়ে বিশ্বনাথ থানায় মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলা প্রধান আসামি সাইফুল প্রতিদিন থানায় গেলেও তাকে গ্রেপ্তার করছে না থানা পুলিশ। কৃষকরা ছরকুম হত্যাকারী আসামিদের দ্রæত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে উর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কৃষক আনোয়ার হোসেন, নাজির উদ্দিন, বাবুল মিয়া, শফিকুর রহমান, হাজি মো. কুতুব আলী, আব্দুল মজিদ, মাওলানা ছমির উদ্দিন, আব্দুল কাইয়ুম, সামসুদ্দিন, আলাউদ্দিন, রুসন আলী, আওয়াল হোসাইন প্রমুখ।
এদিকে, গতকাল শনিবার দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবের সামনে একই দাবিতে মানববন্ধন করেছেন দৌলতপুর ও দশঘর ইউনিয়নের চাউলধনী হাওরপাড়ের কৃষকরা।
বিএ-০৫