নৌকা পেলেই জয় নিশ্চিত!

শিপার আহমেদ, বিয়ানীবাজার


এপ্রিল ০২, ২০২১
১২:০০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ০২, ২০২১
১২:০০ পূর্বাহ্ন



নৌকা পেলেই জয় নিশ্চিত!

তফসিল ঘোষণা হয়নি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের। তবুও চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা বসে নেই। নিজেদের নির্বাচনী মাঠ গোছাতে ব্যস্ত রয়েছেন বিরামহীন প্রচার ও উঠান বৈঠকে। গাছে গাছে ঝুলছে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ফেস্টুন ও ব্যানার। নির্বাচনী এসব তৎপরতা জানিয়ে দিচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আসন্ন।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এবার সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে তোড়জোড় চালাচ্ছেন প্রায় অর্ধশতাধিক সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী। তাদের ধারণা, দলের মনোনয়ন পেলেই জয় নিশ্চিত! এদিকে, প্রার্থীদের এমন মনোভাবের কারণে এবার আওয়ামী লীগের কয়েকটি ইউনিয়ন হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দলের শক্ত অবস্থান কিংবা দূর্গ বলে খ্যাত কয়েকটি ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় নেতা-কর্মীরা বিভক্ত, যা নির্বাচনে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। দলের পরীক্ষিতরা ছাড়াও অপেক্ষাকৃত কম পরিচিতরা চেষ্টা-তদবির করে মনোনয়ন বাগিয়ে নিতেই বেশি মনোযোগী। আর এ কারণে মাঠে শক্ত অবস্থান না থাকলেও তারা দলের কেন্দ্র ও জেলার হাইকমান্ডের সুনজরে পড়তে নানা কসরত অব্যাহত রেখেছেন।

আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক নেতা রয়েছেন, যারা মনোনয়ন নিশ্চিত করতে এখন তদবিরে ব্যস্ত। তবে মাঠের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান রয়েছে, মনোনয়নপ্রত্যাশী এমন নেতার সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। জেলা-উপজেলা নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিয়ানীবাজারের তৃণমূল আওয়ামী লীগের যেসব নেতা মনোনয়ন পাওয়ার আশা করছেন, তাদের বেশিরভাগেরই নিজ নিজ এলাকায় রাজনৈতিক অবস্থান সুসংহত নয়। কিন্তু মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে চেষ্টা ও তদবিরে পিছিয়ে নেই তারা। এই নেতারা নিজেদের অবস্থান তৈরি না করে আগেই মনোনয়ন নিশ্চিত করতে চান। তাদের ধারণা, মনোনয়ন পেলেই জিতে যাবেন প্রার্থী!

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে দলের স্থানীয় কার্যালয়, নেতাদের বাসা-বাড়ি ও ব্যবসায়িক কার্যালয়ে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে অনেক সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের। তাদের অনেকেই জানিয়েছেন, দলের মনোনয়ন পেতে অনেক কিছু 'মেইন্টেইন' করতে হয়। তাই মনোনয়ন নিশ্চিত করতে আগেভাগেই তদবির করতে হয়।

জানা গেছে, আলীনগর ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়ন চান সিলেট জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আহমেদুর রহমান শিশু। এর আগে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল জায়গীরদার নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনকে ঘিরে তার কোনো তোড়জোড় লক্ষ্য করা যায়নি। গত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন চারখাই ইউনিয়ন থেকে সাবেক ছাত্রনেতা মাহমদ আলী, শেওলা ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগ নেতা জহুর উদ্দিন ও দুবাগ ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস ছালাম। তারা তিনজনই এবারও দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। নির্বাচিত হয়ে নিজ নিজ এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন বলে জানিয়েছেন তারা।

দুবাগ ইউনিয়ন থেকে দলের মনোনয়ন চান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ব্যবসায়ী আব্দুল কাদির ও সাধারণ সম্পাদক তাওফিক মাহমুদ চৌধুরী, দুবাগ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা পলাশ আফজাল। একইভাবে শেওলা ইউনিয়ন থেকে নৌকা প্রতীক চান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল বাছিত মারুফ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ী মাসুদ হোসেন খান। 

কুড়ারবাজার ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন চান উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ফুটবলার তুতিউর রহমান তোতা, সাবেক ছাত্রনেতা ও সমাজসেবক আলী যাকের সিদ্দিকী, প্রবাসী বদরুজ্জামান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খালেদ আহমদ। মাথিউরা ইউনিয়ন থেকে গত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন শিহাব উদ্দিন। তিনি এবারও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। বিগত দিনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখানোর পাশাপাশি অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তে পুনরায় নির্বাচিত হতে চান তিনি। এছাড়া এই ইউনিয়ন থেকে দলীয় মনোনয়ন চান উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও শহীদ পরিবারের সন্তান আলমগীর হোসেন রুনু এবং সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ আমান উদ্দিন।

তিলপাড়া ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চান আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান এমাদ উদ্দিন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসলাম উদ্দিন এবং ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ছায়াদ উদ্দিন। মোল্লাপুর ইউনিয়নের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এম এ কাদির, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সাব্বির হোসেন হীরা, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য দেলোয়ার হোসেন, যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও সাবেক ছাত্রনেতা শামীম আহমদ এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাহেল আহমদ।

মুড়িয়া ইউনিয়নে দলের সমর্থন চান মুড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন কবির, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল ওয়াহিদ তারেক, বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাব্বির উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা শফিউর রহমান এবং সাবেক ছাত্রনেতা কাওছার আহমদ।

গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লাউতা ইউনিয়ন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সাবেক চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ জলিল। তবে নির্বাচনে তাকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গৌছ উদ্দিন। তারা দু'জনেই এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। এছাড়াও দলীয় মনোনয়ন চান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ডা. পি এম পাল, আওয়ামী লীগ নেতা সার্জেন্ট তাজ উদ্দিন ও লুৎফুর রহমান ফয়ছল।

মনোনয়নপ্রত্যাশী কয়েকজন নেতা বলেন, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের সম্ভাবনা কম। ফলে দলের মনোনয়ন পাওয়া এখন বড় চ্যালেঞ্জ। আবার কারও মতে, নৌকার টিকিট পেলে মাঠের অবস্থান এমনিতেই হয়ে যাবে। মনোনয়নপ্রত্যাশী বেশিরভাগ নেতার এমনই ধারণা। আবার অনেক ছাত্রনেতা দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতামত তুলে ধরেছেন। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন তারা ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আর দল টানা ১২ বছর ক্ষমতায়। এখনই নিজেকে উপস্থাপন করার সেরা সময়। মনোনয়ন পেলে জয়ের সম্ভাবনাও বেশি। আর না পেলেও ভবিষ্যতে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। এসব কারণেই একেক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী চার-পাঁচজন।

বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল বলেন, 'দলের প্রার্থী নির্ধারণ করার বিষয়ে হাইকমান্ডের নির্দেশনা রয়েছে। সে নির্দেশনা মেনে প্রত্যেক ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে। এখানে চেষ্টা-তদবির করে মনোনয়ন বাগিয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই। তৃণমূলে যার অবস্থান সুসংহত, তাকেই দলের নির্ধারিত ফোরাম মনোনীত করবে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান খান বলেন, 'দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী দলের তৃণমূলের দায়িত্বশীলরাই নির্ধারণ করবেন। এখানে যাদের অবস্থান সুসংহত, ইউনিয়নের দায়িত্বশীলরা দলীয় ফোরামে তাদেরকে বেছে নেবেন। কেন্দ্রে নূন্যতম তিনজনের নাম ও জীবনবৃত্তান্ত পাঠানোর নির্দেশনা রয়েছে।'

 

এসএ/আরআর-০২