নিজস্ব প্রতিবেদক
জানুয়ারি ১৯, ২০২১
০৫:৫১ অপরাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ১৯, ২০২১
০৫:৫১ অপরাহ্ন
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আলোচিত সিলেট তারাপুর চা বাগানের দায়িত্ব ব্যবস্থাপনা কমিটির হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। সম্প্রতি বাগানের সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত কমিটির সদস্যদের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। এখন থেকে বাগানের দেখভাল করবে এই কমিটি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ জিউর দেবোত্তর সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শান্তনু দত্ত সনতু। তিনি জানান, ১৪ জানুয়ারি কমিটির ৮ সদস্যের উপস্থিতিতে এই হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১১ জানুয়ারি থেকে আগামী পাঁচবছরের জন্য এই কমিটি তারাপুর চা বাগানের দায়িত্ব পালন করবে।
এর আগে গত বছরের ৬ অক্টোবর দেবোত্তর সম্পত্তি ঘোষিত এই বাগান পরিচালনার লক্ষ্যে ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। এতে বলা হয়, সভাপতি এই কমিটির নির্বাহী প্রধান হিসেবে থাকবেন। সভাপতির নির্দেশে সচিব/সেক্রেটারি সার্বিক দায়িত্ব পালন করবেন। ব্যবস্থাপনা কমিটিই শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণ জিউ দেবতার পূজারীসহ অন্যান্য সেবায়েত নিয়োগ করবেন। ব্যবস্থাপনা কমিটির সচিব/সম্পাদক তারাপুরের দেবোত্তর সকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব ও দলিলাদি সংরক্ষণ করবেন এবং অপদখলীয় সম্পত্তির তালিকা প্রস্তুত করে দেবোত্তর সম্পত্তির একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা সিলেটের জেলা জজ এর কাছে জমা দেবেন।
ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমোদন ছাড়া তারাপুরের দেবোত্তর সম্পত্তির বিক্রয়, লিজ বা হস্তান্তর করা যাবে না। ওই রায়ে তারাপুর চা বাগান থেকে জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সব স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ারও নির্দেশ দেন আদালত।
এ নির্দেশনার প্রেক্ষিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নারায়ণ চন্দ্র সাহাকে সভাপতি করে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত সন্তু।
কমিটির অন্যান্য সদস্য হলেন, সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলেন্দু দে, সহ-সাধারণ সম্পাদক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জকিগঞ্জ সার্কেল) সুদীপ্ত রায়, কোষাধ্যক্ষ শ্রী শ্রী জগৎবন্ধু সুন্দর ধাম-এর অধ্যক্ষ বন্ধুপ্রতীম ব্রহ্মচারী, সদস্য সিলেট যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র সহকারি জজ নির্জন কুমার মিত্র, জেলা পরিষদের প্রতিনিধি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের সাবেক পরিচালক ডা. বনদ্বীপ লাল দাস, চৈতন্য কালচারাল সোসাইটির অধ্যক্ষ শ্রীমদ ভক্তি অদ্বৈত্য নবদ্বীপ স্বামী মহারাজ, সিলেট মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অধ্যাপক নন্দলাল শর্মা। এছাড়াও প্রয়াত বৈকুণ্ঠ চন্দ্র গুপ্তের একজন উত্তরাধিকারী (এখনো নাম জানা যায়নি), সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির একজন সদস্য কমিটিতে রাখতে বলা হয়েছে। তবে, নির্বাচনের কারণে আইনজীবী সমিতির কোনো সদস্য এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।
গত ১৪ জানুয়ারি কমিটির সদস্যরা সরেজমিনে সিলেট তারাপুর চা বাগানের দেবোত্তর সম্পত্তি ঘুরে দেখেন এবং হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এ ব্যাপারে শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ জিউ দেবোত্তর সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শান্তনু দত্ত সন্তু জানান, কমিটির তৃতীয় সভা আগামী ২৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।
দেবোত্তর সম্পত্তি হস্তান্তর প্রসঙ্গে তারাপুর চা বাগানের সাবেক সেবায়েত পঙ্কজ কান্তি গুপ্ত জানান, ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সেবায়েত হিসেবে তার কাছে দেবোত্তর সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয়। রিভিউ পিটিশন রায়ে অনেক কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। এ রায়ে হঠাৎ করে পারিবারিক দেবোত্তর সম্পত্তিকে পাবলিক দেবোত্তর সম্পত্তি বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তাকে সেবায়েত হিসেবে বলা হলেও সম্প্রতি গঠিত ১১ সদস্য বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা কমিটিতে তাকে রাখা হয়নি। এ বিষয়ে আইনি লড়াইয়ে যাবেন।
প্রসঙ্গত, তারাপুর চা বাগানের মালিক বৈকুণ্ঠ চন্দ্র গুপ্ত ১৯১৫ সালের ২ জুলাই তারাপুর চা বাগানসহ তার সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ জিউর দেবতার নামে রেজিস্ট্রি দানপত্র দলিল করে দেন। তার ছেলে রাজেন্দ্র গুপ্তসহ তিন নাতি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। তার তিন মেয়েকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে পাক সেনারা। ১৯৮২ সালে রাজেন্দ্র গুপ্তের ছেলে পঙ্কজ গুপ্ত ভারতে চলে যান। এ সময় পার্শ্ববর্তী মালনীছড়া চা বাগানের স্ব্যত্ত্বধিকারী রাগীব আলীকে তারাপুর চা বাগান দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে যান। এরপর পাওয়ার অব অ্যাটর্নিমূলে দেবোত্তর সম্পত্তির সেবায়েত বনে যান দেওয়ান মোস্তাক মজিদ। তিনি রাগীব আলীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। তিনি রাগীব আলীকে ৯৯ বছরের জন্য বাগানটি লিজ প্রদান করেন। ১৯৯০ সালে বাগানটির দখল নেন রাগীব আলী। আদালতের রায়ে ওই দখলকে প্রতারণামূলক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
বিএ-০৩