ঝরে গেল ২৬৩ প্রাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক


ডিসেম্বর ৩১, ২০২০
০৬:১৭ অপরাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ৩১, ২০২০
০৬:২৬ অপরাহ্ন



ঝরে গেল ২৬৩ প্রাণ

পরিসংখ্যানটা মোটেই কম নয়। চলতি বছর এক করোনাভাইরাসই কেড়ে নিয়েছে বৃহত্তর সিলেটের চার জেলার ২৬৩ জনের প্রাণ। এটা সরকারি হিসেবে পাওয়া তথ্য। এর বাইরেও জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট আর করোনার উপসর্গ নিয়ে সিলেটের প্রচুর মানুষ মারা গিয়েছেন, যাঁদের করোনার পরীক্ষা পর্যন্ত করা হয়নি। তবে সরকারি হিসেবে মৃত্যুর পরিসংখ্যানও কিন্তু উদ্বেগজনক। মৃত্যুর তালিকায় সমাজ ও রাষ্ট্রে অবদানকারী পরিচিত ব্যক্তি যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিও। তাই প্রতিটি মৃত্যুই ভুক্তভোগী পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। সেসব পরিবারে এখনো চলছে আহাজারি, হাহাকার আর আর্তনাদ।

আজ বৃহস্পতিবার সিলেটের বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কার্যালয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ১০ মার্চ থেকে আজ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিলেটের চার জেলায় ২৬৩ জন ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে সিলেট জেলায়। এখানে ১৯৯ জন ব্যক্তি মারা গেছেন। মৃত্যুর হারের দিক দিয়ে এরপরই রয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা। এ জেলায় সর্বমোট ২৬ জন মারা গিয়েছেন। এরপর পর্যায়ক্রমে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় মারা গিয়েছেন ২২ জন ও ১৬ জন। এ পর্যন্ত চার জেলায় ১৫ হাজার ৪৭৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৪ হাজার ৫১৮ জন। এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২ হাজার ৫৫ জন। 

একই সূত্রে জানা গেছে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত সবচেয়ে বেশি হয়েছেন সিলেট জেলায়। এখানে ৯ হাজার ১৩২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এরপরই বেশি আক্রান্ত হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলায়। এখানে ২ হাজার ৫১১ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তের দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে হবিগঞ্জ জেলা। এ জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯৫৩ জন। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে মৌলভীবাজার জেলা। এখানে আক্রান্ত হয়েছেন সর্বমোট ১ হাজার ৮৭৮ জন। সিলেটের বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কার্যালয়ের পরিসংখ্যানবিদ মতিউর রহমানের প্রেরিত তথ্যের সূত্রে এসব পরিসংখ্যান জানা গেছে। 

সিলেটের বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কার্যালয়ের বিভাগীয় পরিচালক ডা. সুলতানা রাজিয়া জানান, গত মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে গতকাল বুধবার সকাল আটটা, অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সিলেট জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তবে বিভাগের অপর তিন জেলায় ওই সময়ে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। একই সময়ের মধ্যে নতুনভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১০ জন এবং সুনামগঞ্জ জেলায় ২ জন রয়েছেন। এর বাইরে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ জন করোনা-আক্রান্ত রয়েছেন। তবে ওই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে নতুন করে কেউ আক্রান্ত হননি। এ সময়ের মধ্যে ২৫ জন রোগী নতুন করে সুস্থ হয়েছেন। 

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমাতে স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্টরা প্রতিনিয়ত বছরজুড়ে প্রচারণা চালিয়েছে। এক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় বাসার বাইরে বের না হওয়া এবং জরুরি প্রয়োজনে বের হলেও সার্বক্ষণিক মাস্ক ব্যবহারের বিষয়টিকে চিকিৎসকেরা গুরুত্ব দিয়ে প্রচার দিয়েছেন। সবসময় সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলার আহŸানও জাননো হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, মাস্ক পরার পাশাপাশি বার বার হাত ধোয়া এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পারলে করোনাভাইরাস রোধ করা অনেকটাই সম্ভব। 

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সিলেটের যে ২৬৩ জন ব্যক্তি মারা গিয়েছেন, এঁদের মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরানও রয়েছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী দেশের প্রথম চিকিৎসক ডা. মো. মঈন উদ্দিনও সিলেটের। তিনি সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও রাজনীতিতে সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে সুপরিচিত এম এ হকও করোনা-আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা-আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নর্থইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সদ্যবিদায়ী উপাচার্য ড. আতফুল হাই শিবলী মারা যান। এঁদের বাইরেও সিলেটের অনেক বরেণ্য ব্যক্তিরা করোনা-আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। 

এএন/বিএ-০৫