বিআরটিসি বাস নিয়েও আপত্তি পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক


ডিসেম্বর ২৬, ২০২০
০১:৩৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ২৬, ২০২০
০৩:১৩ পূর্বাহ্ন



বিআরটিসি বাস নিয়েও আপত্তি পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের

পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে গতকাল পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ৭২ ডাকা পরিবহন ধর্মঘট শেষ হয়েছে। এবার সিলেট-মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গল এবং সিলেট-হবিগঞ্জ রুটে বিআরটিসি বাস চলাচল বন্ধ করার তৎপরতা চালাচ্ছেন মালিক-শ্রমিকরা।

তারা বলছেন, এসব রুটে পর্যাপ্ত বাস রয়েছে, নতুন বাসের প্রয়োজন নেই। আর বিটিআরটিসি বলছে, যাত্রীদের দাবির প্রেক্ষিতেই এসব রুটে বাস সেবা চালু করা হয়েছে। এসব রুটের যাত্রীরাও বিআরটিসির বাস চলাচলকে স্বাগত জানিয়েছেন। 

গত মঙ্গলবার সকালে সিলেট থেকে মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল রুট ও হবিগঞ্জ রুটে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) ১২টি বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রথম পর্যায়ে এই দুই রুটে চারটি করে মোট আটটি গাড়ি চলাচল করবে। পরবর্তীতে একে একে ১২টি গাড়ি চলাচল করা হবে। প্রাথমিক অবস্থায় চালু হওয়া সবগুলো বাসই শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। এ নিয়ে সিলেট বিভাগের সব জেলায় চালু হয়েছে বিআরটিসি বাস সার্ভিস। 

এর আগে সিলেট সুনামগঞ্জ রুটে বাস সার্ভিস চালু হয়। এছাড়া সিলেট-ভোলাগঞ্জ রুটেও বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। তবে সুনামগঞ্জ ও ভোলাগঞ্জ রুটে বাস সার্ভিস চালু করার পর বিক্ষোভের মুখে পড়ে বিআরটিসি বাস। সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিআরটিসির বাস চালু হয়েছিল গেল বছরের ৩ জুন। এর প্রতিবাদে ওই দিনই সুনামগঞ্জ-সিলেট পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নামে বাস ধর্মঘট হয়। এরপর আবার ২৪ জুন সিলেট বিভাগ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়া হয়। ধর্মঘট ঘোষণার পরই এটিকে ‘অযৌক্তিক’ দাবি করে সুনামগঞ্জ ও সিলেটে আন্দোলন শুরু হয়। এছাড়া গত বছরের ৯ নভেম্বর সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়কে বাস সেবা চালু করে বিআরটিসি। ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট এবং নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে পর্যটকদের যাতায়াত সহজতর করতে এ বাস সার্ভিস চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। বাস সেবা চালুর সিদ্ধান্তকে স্থানীয় বাসিন্দারা স্বাগত জানান। কিন্তু শুরু থেকেই বাস সার্ভিস বন্ধ করার পাঁয়তারা শুরু করে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-গোয়াইনঘাট-হাদারপার বাস-মিনিবাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। 

এবার সিলেট-মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল ও সিলেট হবিগঞ্জ রুটে বিআরটিসির বাস সার্ভিস চালু হওয়ার পর তৎপর হয়েছেন তারা। তবে যাত্রীরা বিআরটিসি বাস সেবাকে স্বাগত জানিয়েছেন। বিআরটিসি বাস চালুর ফলে তারা বেসরকারি বাসের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হচ্ছেন বলে মনে করেন তারা।

সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকার বাসিন্দা দেবাশীষ রায় শুভ সিলেট মিররকে বলেন, ‘বিআরটিসি বাস চালু হওয়ায় এবার বেশ আরামেই বাড়িতে যাওয়া যাবে। এতদিন হবিগঞ্জ রুটে যে বাসগুলো চলত সেগুলো যাত্রীদের কোনো স্বার্থ দেখত না। এসব বাস অত্যন্ত নিম্নমানের।’

মৌলভীবাজার জেলার বাসিন্দা মুর্শেদ হোসেন বলেন, ‘এই রুটে বিআরটিসি বাস চালুর দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। এতদিন আমরা একটা গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি ছিলাম। আশাকরি বিআরটিসি তাদের বাসের সংখ্যা আরও বাড়াবে।’

তবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বলছেন এই দুই রুটে পর্যাপ্ত বাস রয়েছে। আর যে বাসগুলো ছিল সেগুলো বিআরটিসি বাসের চেয়ে ভাল যাত্রীসেবা দিয়ে এসেছে। এছাড়া বিআরটিসি বাস তাদের নীতি না মেনেই বাস চালায়। ফলে এসব রুটে বিআরটিসি বাস চলতে দেওয়া হবে না। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মো. জিয়াউল কবির পলাশ বলেন, ‘বিআরটিসি বাস নিজস্ব তত্ত¡াবধানে চলে না, চলে লিজে। ফলে মালিক-শ্রমিকদের ক্ষতি হয়। আমরা তাদের বলেছিলাম সুনামগঞ্জ রুটে ১২টি ট্রিপ দিতে। কিন্তু তারা ১৮ থেকে ২০টি ট্রিপ দিচ্ছে।’ এসব রুটে পর্যাপ্ত বাস রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হবিগঞ্জ মালিক সমিতির প্রায় ১১৫টি গাড়ি আছে। কিন্তু ট্রিপ হচ্ছে মাত্র ৮০টি। ফলে বাকি গাড়িগুলো এমনি পড়ে আছে। সেখানে নতুন বাসের কোনো প্রয়োজন নেই।’ বিআরটিসির বাস সার্ভিস বন্ধ না করলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। 

পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের এই দাবিকে জনগণের স্বার্থবিরোধী বলে মনে করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মালিক-শ্রমিকদের নামে সিলেটে যে নৈরাজ্য চলছে তার নিন্দা জানাই। তবে যারা এ কাজ করছে তারা সরকারের একটি অংশ। মুজিব বর্ষ ও বিজয়ের মাসে তাদের এসব কর্মকাÐকে সরকারের অগ্রগতিকেই বাধা দিচ্ছে।’

এ ব্যাপারে সিলেট বিআরটিসি বাস ডিপোর ব্যবস্থাপক (অপারেশন) জুলফিকার আলী সিলেট মিররকে বলেন, ‘বিআরটিসি বাস লিজে চলার কোনো প্রশ্নই আসে না। আর আমাদের ওপর নির্দেশ আছে যত বেশি সম্ভব ট্রিপ পরিচালনার। তারপরও আমরা পরিবহন শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে নির্দিষ্ট সংখ্যক ট্রিপ দিচ্ছি। তাতেও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন মালিক-শ্রমিকরা। অপরদিকে যাত্রীরা আমাদেরকে বেশি বাস নামানোর অনুরোধ করছেন।’ আগামী রবিবার থেকে মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জ রুটে বিআরটিসির বাস চলাচল শুরু হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিআরটিসি বাস পরিচালনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুবই আন্তরিক। তাই আশা করি বাধা এলেও আমরা বাস চালাতে পারব।’ 

এনএইচ/বিএ-০৮