পরিবহন সেক্টরে জিম্মি সিলেটবাসী!

নিজস্ব প্রতিবেদক


ডিসেম্বর ২৪, ২০২০
০৬:৫৩ অপরাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ২৪, ২০২০
০৬:৫৩ অপরাহ্ন



পরিবহন সেক্টরে জিম্মি সিলেটবাসী!

দাবি আদায়ে বারবার ধর্মঘটকেই বেছে নিচ্ছেন সিলেটের পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন জনসাধারণ। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের এই কৌশলে ক্ষোভ বিরাজ করছে জনমনে। তাদের দাবির যৌক্তিকতা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।  

পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে সিলেট বিভাগে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট ডাকে গণপরিবহন, পণ্যপরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠন। ঠিক আগের দিন সোমবার থেকে গাড়িতে গ্রিল লাগানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ধর্মঘট শুরু করে সিলেট জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন।

লাগাতার ধর্মঘটের ফলে সিলেট অঞ্চলের প্রায় এক কোটি মানুষ পরিবহন সেক্টরের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। রোগী পরিবহন, জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়েও যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। জরুরি প্রয়োজনে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে রাস্তায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনেকে।

গতকাল বুধবার দুপুরে জরুরি কাজে সিলেট নগরের উদ্দেশে বের হন কানাইঘাট উপজেলার গাছবাড়ী এলাকার বাসিন্দা কামরুল ইসলাম। একটি গাড়ির ব্যবস্থা করে শহরে পৌঁছার পথে তিনি অন্তত পাঁচটি জায়গায় বিড়ম্বনার শিকার হন। পয়েন্টে পয়েন্টে পরিবহন শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়েন। প্রতিটি জায়গায় অনেক আকুতির পর শ্রমিকরা তার গাড়ি ছাড়েন। এভাবে দেড় ঘণ্টার সড়ক পাড়ি দিতে চারঘণ্টা সময় লেগেছে।

সিলেট নগরে রিকশা ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলই ছিল যাত্রীদের অন্যতম ভরসা। তবে, মানুষের প্রয়োজনের চেয়ে এসব পরিবহনের সংখ্যা ছিল নগণ্য। সিলেট থেকে মৌলভীবাজারের বড়লেখায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেছেন মারইয়াম নামের একজন গৃহবধূ। তিনদিন ধরে তিনি বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন। কিন্তু, ধর্মঘটের কারণে আটকা পড়েছেন।

একইভাবে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন অনেকে। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছিল সাধারণ রোগী পরিবহনের অন্যতম বাহন। চিকিৎসা নিতে অটোরিকশাযোগে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী নগরে আসেন। কিন্তু পরিবহন ধর্মঘটের কারণে তিনদিন ধরে সিলেটের হাসপাতাল ও চিকিৎসক চেম্বারের রোগীর সংখ্যা ছিল একেবারে নগণ্য।

সিলেট নগরের মিরের ময়দানস্থ মেডি এইড-এ চিকিৎসা নিতে যাওয়া শুভ্রাংশু দেব সিলেট মিররকে জানান, দুই সপ্তাহ আগে চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ক্লিনিকে মারাত্মক ভিড় লক্ষ্য করেছেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি আবারও চিকিৎসকের কাছে যান। তখন হাসপাতালে রোগী ছিলেন হাতেগোনা কয়েকজন।

দুই সংগঠনের আন্দোলনের মূল দাবির ব্যাপারেও প্রশ্ন রয়েছে। পরিবেশ সুরক্ষায় সরকার সারাদেশে পাথর কোয়ারি বন্ধ করেছে। অথচ, কেবল সিলেটে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। 

আন্দোলনকারীদের নিবৃত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় প্রশাসন। নিজেদের দাবিতে অটল থেকে গত মঙ্গলবার থেকে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন গণপরিবহন, পণ্যপরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। আগামীকাল শুক্রবার ভোর ৬টায় তাদের ধর্মঘট শেষ হবে। অথচ, আন্দোলনকারীদের মধ্যে কেবল ট্রাক ছাড়া অন্য সব পরিবহন শ্রমিকের পাথর কোয়ারির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই।

সিলেট জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, সভায় আন্দোলনকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন জেলা প্রশাসক। তিনি ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে পরিবহন নেতাদের বলেন, ‘পাথর কোয়ারি বন্ধ করা হয়েছে সরকারের সিদ্ধান্তে। এই সিদ্ধান্ত কেবল সিলেট অঞ্চলের জন্য নয়, সারাদেশের পাথর কোয়ারি এখন বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় আন্দোলন করলেও সরকারের সিদ্ধান্ত ছাড়া পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু তাতেও থামেননি পরিবহন নেতারা।

অন্যদিকে, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় গ্রিল লাগানোর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন। যাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সিলেট মহানগর পুলিশ গত নভেম্বরে গ্রিল লাগানোর আদেশ জারি করলে অটোরিকশা মালিক-শ্রমিকরা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। গত সোমবার থেকে চলা ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘটে সিলেট জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের বলেন, ‘সারাদেশেই সিএনজিচালিত অটোরিকশায় গ্রিল লাগানো আছে, কেবল সিলেটে নয়। এসএমপি কমিশনার যোগদানের পর জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিএনজি অটোরিকশায় গ্রিল লাগানোর নির্দেশ দেন। অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়েছেন। কিন্তু এরই মধ্যে তারা ধর্মঘট শুরু করেছেন।’

এসএইচ/বিএ-০২