মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক


ডিসেম্বর ২৪, ২০২০
০৭:০৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ২৪, ২০২০
০৭:০৭ পূর্বাহ্ন



মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন বেড়েছে

পৃথক দাবিতে পৃথক সংগঠনের ডাকা পরিবহন ধর্মঘটের চতুর্থ দিন পেরিয়েছে। টানা ধর্মঘটে সিলেটজুড়ে স্বল্প ও দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ রয়েছে। দূরপাল্লার যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে তাই ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবে যানবাহন বন্ধ থাকায় বেড়েছে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন সেবা। স্বল্প দূরত্বের পাশাপাশি দূরপাল্লার যাত্রীরাও এই সেবা পাচ্ছেন। এতে করে অনেক কর্মহীন তরুণের সাময়িক কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হয়েছে।

বুধবার সিলেটের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন সেবার দৃশ্য চোখে পড়ে। হুমায়ূন রশীদ চত্বর ও মেন্দিবাগ পয়েন্টে দলবেঁধে বসে থাকতে দেখা গেছে যাত্রীর অপেক্ষায়। যাত্রীরাও অন্য কোনো বাহন না পেয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে বেছে নেন দুই চাকার এই মোটরযানকে।   

নগরজুড়েই ছিল এমন চিত্র। দুর্ভোগের এই সময়ে এমন সেবায় অনেকেই উচ্ছ্বসিত। নগরের আম্বরখানা এলাকার বাসিন্দা সায়েম হোসাইন অফিসে যেতেও নিয়েছেন মোটরসাইকেল সেবা। সিলেট মিররকে তিনি বলেন, ‘অটোরিকশা বন্ধ থাকায় রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ এক মোটরসাইকেল চালক সামনে এসে ব্রেক কষে কোথায় যাব জানতে চাইলেন। ভাড়া কয়েকগুণ বেশি চাইলেও দর কষাকষি করে ভাড়া ঠিক করে গন্তব্যে এসেছি।’

তবে নগরের অভ্যন্তরে এই সেবা নেওয়া স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের অনেকের অভিযোগ, ভাড়া কয়েকগুণ বেশি হাকান রাইডাররা। নগরের চৌকিদেখি এলাকার ফরহাদ ইমরান বলেন, ‘জরুরি কাজে মিরবক্সটুলা যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেল চালককে বেছে নেই। অটোরিকশায় চড়ে গেলে মাত্র ২৫ টাকা লাগে। রিকশায় গেলেও সর্বোচ্চ ৪০ টাকার প্রয়োজন হয়। সেখানে সেই চালক ৭০ টাকা দাবি করে বসেন। পরে অনেক দর কষাকষি করে ৫০ টাকায় এসেছি।’

একইভাবে স্বল্প দূরত্বে পরিবহন হিসেবে মোটরসাইকেল সেবা নিয়েছেন আরও অনেকে। তবে দূরপাল্লার যানবাহন না থাকায় সেখানেও সেবা দিয়েছে দুই চাকার এই পরিবহন। নগরের মেন্দিবাগ থেকে হেতিমগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় যাত্রীসেবা পৌঁছে দেওয়া হয়। শুধু মেন্দিবাগ নয়, নগরের হুমায়ূন রশীদ চত্বরেও দেখা গেছে একইভাবে সেবা দিতে। সেখান থেকে যাত্রীরা মোটরসাইকেলে করে শেরপুর পর্যন্ত যেতে পেরেছেন। জনপ্রতি ভাড়া গুণতে হয়েছে ২০০ টাকা করে। এই সেবায় অবশ্য ভাড়া বেশি দিলেও গন্তব্যে পৌঁছানোটাই মুখ্য যাত্রীদের কাছে।

নগরের কুমারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মাহফুজ চৌধুরী গোলাপগঞ্জে পৌঁছেছেন একই সেবা নিয়ে। তিনি জানান, মেন্দিবাগ পয়েন্ট থেকে গোলাপগঞ্জের ভাড়া ছিল ১০০ টাকা। পরে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ভাড়া কমে আসে ৬০ টাকায়। এক মোটরসাইকেলে দুজন চড়ে তারা পৌঁছান নিজ গন্তব্যে।

মাহফুজ চৌধুরী বলেন, ‘জরুরি কাজে গ্রামের বাড়িতে যাব। কিন্তু কোনো গাড়ি না থাকায় সেটা সম্ভব হচ্ছিল না। মোটরসাইকেলে যাত্রী সেবা থাকায় শেষ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। দুর্ভোগের এই সময়ে ভাড়ার চেয়ে পৌছাতে পারাটাই বড় বিষয়।’

মোটরসাইকেল চালকদের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যায় পড়ুয়া শিক্ষার্থী। ধর্মঘটের সময়ে যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবের পাশাপাশি নিজেরাও করছেন অর্থ উপার্জন। অস্থায়ী এই উপার্জনেও খুশি বলে জানান চালকরা। তেমনই একজন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘জানি এটা অস্থায়ী উপার্জন। তবু আমি খুশি। জীবনে প্রথমবার নিজের উপার্জন। এটা আলাদা অনুভূতি। গত দুই দিনে অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি রাইড শেয়ার অ্যাপের প্রতি যে অনীহা ছিল সেটাও দূর হয়েছে।’

আরসি-০৬