নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ২৩, ২০২০
০৭:২২ অপরাহ্ন
আপডেট : ডিসেম্বর ২৩, ২০২০
০৭:২৪ অপরাহ্ন
পৃথক দাবিতে পরিবহন সংশ্লিষ্ট দুই সংগঠনের লাগাতার ধর্মঘটে সিলেটজুড়ে জনভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। ধর্মঘটের কারণে সিলেট সদরের সঙ্গে বিভাগের তিন জেলা ও উপজেলা এবং রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য এলাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ প্রায় বন্ধ রয়েছে।
পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে গণপরিবহন, পণ্যপরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের ডাকে গতকাল মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু হয়েছে। এছাড়া অটোরিকশায় গ্রিল লাগানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত সোমবার থেকে সিলেট জেলায় ধর্মঘট শুরু করেছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিক-শ্রমিকরা।
ধর্মঘটের কারণে গতকাল সকাল ৬টা থেকে সিলেট অঞ্চলের সড়কগুলোতে বাস, ট্রাক, লেগুনা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করেনি। সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পরিবহন শ্রমিকরা পিকেটিং করেছেন। মাঝেমধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে বাস, লেগুনা ও ব্যাটারিচালিত টমটম-অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা গেলেও শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে। জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া যাত্রীরা এ কারণে চরম ভোগান্তির মুখোমুখি হন।
তবে, ধর্মঘটের মধ্যে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল ও রিকশা ছিল যাত্রীদের অন্যতম ভরসা। নগর ও নগরের বাইরের সড়কগুলোতে সহস্রাধিক মোটরসাইকেল যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। এসব ছোট পরিবহনের চালকদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে।
পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে ডাকা ধর্মঘট আগামী শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত চলবে। অটোরিকশা মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘট আজ ভোর ৬টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আগামী বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।
একই সময়ে সিএনজি অটোরিকশা মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়ন এবং যাত্রী ও পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের পৃথক কর্মসূচি চলায় যাত্রীভোগান্তির পাশাপাশি ব্যবসার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ধর্মঘট চলতে থাকলে নিত্যপণ্যের দামও বাড়তে পারে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে শ্রমিকদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে শ্রমিকরা গাড়ি চলাচলে বাধা সৃষ্টি করেন। তবে, কোনো ধরনের সংঘাত কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
সকাল ১০টায় নগরের হুমায়ুন রশীদ চত্বরে একদল শ্রমিকের শান্তিপূর্ণ অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। একই সময়ে পয়েন্টে কয়েকশ সাধারণ যাত্রী দাঁড়িয়ে ছিলেন। গাড়ির অপেক্ষায় দীর্ঘক্ষণ থাকার পর অনেকে পায়ে হেটে অফিস কিংবা গন্তব্যে ছুটেন।
বিশৃঙ্খলা এড়াতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে আইনশৃংখলা বাহিনী। সকাল সোয়া ১১টার দিকে আর্মড পারসোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি) সহ আইনশৃংখলা বাহিনীর অন্তত ১০টি গাড়ির একটি টহল দল নগর প্রদক্ষিণ করে।
বেলা ১টার দিকে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে একাধিক বাস চলাচল করতে দেখা গেলেও আন্দোলনকারীদের আপত্তিতে তা বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যার ঠিক আগে সিলেট-তামাবিল সড়কের পীরের বাজার এলাকায় শ্রমিকরা ব্যাটারিচালিত একাধিক টমটম-অটোরিকশা আটকে দেন। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের তেমুখী, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের চন্ডিপুল ও তেলিবাজার পয়েন্টসহ বিভিন্ন সড়কে শ্রমিকদের পিকেটিং করতে দেখা যায়।
সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবিরা পায়ে হেটে অথবা মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গন্তব্যে গেলেও অনেকে ঘর থেকে বের হননি। যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি নেই তারা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েন।
টিলাগড় এলাকার বাসিন্দা মঞ্জুরুল ইসলাম সিলেট মিররকে বলেন, ‘সিএনজি অটোরিকশা ধর্মঘট শেষ হলে নিজের প্রয়োজন সেরে নেব এই আশায় সারাদিন ঘর থেকে বের হইনি। কিন্তু রাতেই জানতে পারি বুধবারও সিএনজি অটোরিকশা ধর্মঘট চলবে।’
শুধু জনভোগান্তি নয়, ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও। গতকাল নগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, চৌহাট্টা, লামাবাজারসহ ব্যস্ত সড়কগুলো ফাঁকা ছিল। শপিংমল, বিপণিবিতানগুলো অনেকটা ক্রেতাশূন্য ছিল। সন্ধ্যায় জিন্দাবাজার পয়েন্ট এলাকার ব্যবসায়ী মোহন রায় জানান, সারাদিন দোকান খোলা থাকলেও মাত্র চারজন ক্রেতা পেয়েছেন তিনি।
সিলেট জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাকারিয়া আহমদ জানান, দাবি আদায় না হওয়ায় ধর্মঘট আরও ২৪ ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে। একইসঙ্গে গণপরিবহন, পণ্যপরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের ডাকা ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘটেও তাদের নৈতিক সমর্থনের কথা জানান এই শ্রমিক নেতা।
এসএইচ/আরসি-১৩