সিলেটে অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় সাড়া কম

নাবিল হোসেন


ডিসেম্বর ২৩, ২০২০
০৬:৫৩ অপরাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ২৩, ২০২০
০৬:৫৮ অপরাহ্ন



সিলেটে অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় সাড়া কম

দ্রুত ও সহজে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার ফল জানতে সিলেটে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালু করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১৭ দিনে সিলেট জেলায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ১১৮টি। বিভাগের অন্যান্য জেলায়ও অ্যান্টিজেন পরীক্ষার একই অবস্থা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যাদের করোনার উপসর্গ রয়েছে, শুধু তাদেরই অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হচ্ছে। ফলে পরীক্ষার সংখ্যা সেভাবে বাড়েনি। প্রচার কম হওয়ার কারণেও উপসর্গ নিয়ে কম সংখ্যক মানুষ পরীক্ষাগারে যাচ্ছেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে সিলেটে নমুনা পরীক্ষার কোনো ল্যাব ছিল না। সে সময় সিলেট থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার আইইডিসিআরসহ বিভিন্ন ল্যাবে পাঠানো হত। তাতে রিপোর্ট আসতে বিলম্ব হত। পরবর্তীতে গত ৭ এপ্রিল থেকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে করোনার পরীক্ষা শুরু হয়। তখন বিভাগের চার জেলার নমুনা পরীক্ষা করা হত এই ল্যাবে।

করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে ওসমানীর ল্যাবে এক সময় নমুনা জট লাগে। এ অবস্থায় গত ১৯ মে থেকে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের ল্যাবেও শুরু হয় করোনা পরীক্ষা। দ্রুত পরীক্ষার ফল পাওয়া এবং পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে গত ৫ ডিসেম্বর সিলেটসহ দেশের ১০ জেলায় র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট চালু করে সরকার। গত ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর থেকে বিভাগের অন্য তিন জেলায়ও শুরু হয় অ্যান্টিজেন টেস্ট। কিন্তু অ্যান্টিজেন টেস্টে যে হারে রোগী শনাক্ত হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল সেভাবে হচ্ছে না। প্রচারের অভাব ও উপসর্গজনিত শর্তের কারণে মানুষ অ্যান্টিজেন টেস্ট করাতে পারছে না। তাই রোগীও শনাক্ত হচ্ছে তুলনামূলক কম।

সিলেটে করোনা পরীক্ষার অ্যান্টিজেন টেস্ট হচ্ছে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে। হাসপাতালের ল্যাব ইনচার্জ বেনু ভূষণ দাস জানান, গত সোমবার পর্যন্ত ১১৮টি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে পজেটিভ এসেছে ৩১টি। অর্থাৎ দিনে গড়ে টেস্ট হয়েছে মাত্র ৭টি করে। আর আক্রান্তের হার ২৬ শতাংশ।

সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানা যায়, গত সোমবার পর্যন্ত টেস্ট হয়েছে ২৫টি। এর মধ্যে সবগুলোরই ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ১০টি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে, শনাক্ত নেই। আর হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত অ্যান্টিজেন টেস্ট হয়েছে মাত্র ৪টি।

সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সুশান্ত কুমার মহাপাত্র সিলেট মিররকে বলেন, ‘অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য আমাদেরকে একটি গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। যে কেউ চাইলেই অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করাতে পারবেন না। উপসর্গ দেখা দেওয়ার ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে এই পরীক্ষা করাতে হয়। আর যাদের উপসর্গ নেই, তাদের ক্ষেত্রে নমুনা নিয়ে আরটি পিসিআরে টেস্ট করতে পাঠানো হচ্ছে। এটিই অ্যান্টিজেন পরীক্ষা কম হওয়ার বড় কারণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ফলাফল নেগেটিভ এলে সার্টিফিকেট দেওয়া হয় না। ফলে অনেকেই এই টেস্ট করাতে কম আগ্রহী।’ অ্যান্টিজেন পরীক্ষা নিয়ে প্রচার কম হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রচার কিছুটা কম হয়েছে, ফলে মানুষ কম আসছেন টেস্ট করাতে।’

মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক পার্থ সারথী দত্ত বলেন, ‘অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করাতে হলে কিছু ক্রাইটেরিয়া অনুসরণ করতে হয়। এসব ক্রাইটিয়ার জন্যই কম রোগীকে টেস্ট করা যাচ্ছে।’  অ্যান্টিজেন নিয়ে ব্যাপক আকারে প্রচার হয়নি বলেও জানান তিনি।

এন্টিজেন পরীক্ষাকাজে নিয়োজিতরা বলছেন, অ্যাটিজেন টেস্টে নেগেটিভ ফল পাওয়াদের মধ্যেও পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় কারো কারো ফলাফল পজিটিভ আসছে। সরকারের কোভিড-১৯ পরীক্ষা নীতিমালায় বলা হয়েছে, অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় কোভিড-১৯ সংক্রমিত ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ ফলও পাওয়া যেতে পারে। উপসর্গ থাকার পরও অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় নেগেটিভ এলে আরটি-পিসিআর বা জিন এক্সপার্ট পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে। আর অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় পজিটিভ হলে ওই ব্যক্তি নিশ্চিত পজিটিভ হিসেবে গণ্য হবেন। সিলেট শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় নেগেটিভ আসা বেশ কয়েকজনের আরটি পিসিআর ল্যাবে পজিটিভ এসেছে।

এ বিষয়ে হাসপাতালের আরএমও সিলেট মিররকে বলেন, ‘অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় আমরা একজন ব্যক্তির দুটি নমুনা সংগ্রহ করি। একটি অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য এবং অন্যটি আরটি-পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষার জন্য। যাদের অ্যান্টিজেনে নেগেটিভ আসে তাদের নমুনা পাঠানো হয় আরটি-পিসিআর ল্যাবে। আমার জানামতে অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় নেগেটিভ আসা ৪-৫ জনের আরটি-পিসিআর ল্যাবে পজিটিভ এসেছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান সিলেট মিররকে বলেন, ‘অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয় যাদের মধ্যে উপসর্গ রয়েছে। কারণ উপসর্গ ছাড়া অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় পজিটিভ আসবে না। আর পরীক্ষায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হচ্ছে।’

অ্যান্টিজেন টেস্টের কিটের কোনো সংকট আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে অ্যান্টিজেন কিটের সংকট নেই।’

আরসি-১০