দ. সুনামগঞ্জে নদীভাঙন : চলছে ৩ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ

সোহেল তালুকদার, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ


আগস্ট ২৮, ২০২০
১২:৩৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ২৮, ২০২০
১২:৩৭ পূর্বাহ্ন



দ. সুনামগঞ্জে নদীভাঙন : চলছে ৩ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে দফায় দফায় বন্যায় সারাদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেই সঙ্গে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন সরকারি অবকাঠামো ও মানুষের বাড়িঘর বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। তবে সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের একান্ত প্রচেষ্টায় সুরমা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের পুরাতন সুরমা নদীর তীরে অবস্থিত সুরমা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ, পাথারিয়া ভূমি অফিস, পাথারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাথারিয়া পোস্ট অফিসসহ সরকারি ও বেসরকারি বেশ কিছু অবকাঠামো। সেই সঙ্গে রক্ষা পেয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি। 

জানা যায়, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের আন্তরিক প্রচেষ্টায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও অবকাঠামো রক্ষায় পুরাতন সুরমা নদীর তীরের স্থাপনাগুলো নদীভাঙন থেকে রক্ষার জন্য সুরমা নদীর তীর সংরক্ষণ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

পাউবো সুনামগঞ্জ পওর বিভাগ-২ অফিস সূত্রে জানা যায়, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের একাধিক ডিও লেটারের মাধ্যমে ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুনামগঞ্জ পওর বিভাগ-২ এর আওতায় জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের পুরাতন সুরমা নদীর ডান তীরে সুরমা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ, পাথারিয়া ভূমি অফিসসহ সরকারি ও বেসরকারি অবকাঠামো ও স্থাপনা নদীভাঙন থেকে রক্ষার জন্য ২২৩ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ শীর্ষক ২ কোটি ৯৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরে প্রকল্প হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পটির কাজ ২০১৯ সালের ১ জুলাই শুরু হয় এবং ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২২৩ মিটার প্রকল্পটির মাধ্যমে নদীর একেবারে তলদেশে ডাম্পিং ব্লক বসিয়ে স্লোপ আকারে নদীর তীরের একেবারে উপর পর্যন্ত ব্লক বসানো হবে। একটি ব্লকের আকার ৪০/৪০/২০ সেন্টিমিটার। এ আকারের ব্লক ব্যবহার হবে ১৯ হাজার ৪০০টি। আরেকটি ব্লকের আকার হবে ৩৫/৩৫/৩৫ সেন্টিমিটার, যার সংখ্যা ৩১ হাজার ২২৭। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাথারিয়া বাজারের পাশে পুরাতন সুরমা নদীর তীরে এই এলাকার সর্ববৃহৎ বিদ্যাপীঠ সুরমা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ, পাথারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাথারিয়া পোস্ট অফিস ও পাথারিয়া ভূমি অফিসটি একেবারেই নদীর তীরে অবস্থান করছে। সেই সঙ্গে পাথারিয়া বাজার ও স্থানীয় অনেকের বাড়িঘর নদীর একেবারে তীরে রয়েছে। প্রকল্পটি না হলে এই স্থাপনাগুলো যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেত। প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে এই স্থাপনাগুলো ও সাধারণ মানুষের বাড়িঘর নদীভাঙন থেকে রক্ষা পাবে। প্রকল্প এলাকার চারপাশে ব্লকের স্তুপ দেখা যায়। করোনা ও বন্যার কারণে প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন জানিয়েছেন, বন্যা ও করোনা পরিস্থিতির কারণে শ্রমিকরা কাজ করছেন না। তবে কয়েকদিনের মধ্যেই কাজ শুরু করে অবশিষ্ট কাজ সমাপ্ত করবেন বলে জানিয়েছেন তারা। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে দেখে এলাকাবাসী আনন্দিত। 

পাথারিয়া বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, 'আমরা পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি আমাদের এলাকার একমাত্র বিদ্যাপীঠ সুরমা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজসহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা রক্ষায় এই প্রকল্প দিয়েছেন। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলে এবারের বন্যায় আমাদের এই জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো হয়তো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেত। যেভাবে এবার দফায় দফায় বন্যা হয়েছে, সেই বন্যায় অনেকেই নদীভাঙনে নিঃস্ব হয়েছেন। কিন্তু আমাদের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় অনেকের ঘরবাড়িসহ সরকারি স্থাপনাগুলো রক্ষা পেয়েছে।'

সুরমা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম বলেন, 'আমিসহ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও এলাকার মানুষ বার বার পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের কাছে এই স্থাপনাগুলো নদীভাঙন থেকে রক্ষার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলাম। মন্ত্রী মহোদয় অনেক ডিও লেটার দিয়ে এবং নিজে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে এই প্রকল্পটি পাস করিয়েছেন। তাই আমরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি মহোদয়কে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তিনি এই প্রকল্পটি না দিলে আজ আমার বিদ্যালটি হয়তো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেত। প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে আমাদের এলাকার সর্ববৃহৎ বিদ্যাপীঠ সুরমা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ, পাথারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাথারিয়া পোস্ট অফিস ও পাথারিয়া ভূমি অফিস, অসংখ্য মানুষের বাড়িঘর, দোকানপাট, পাথারিয়া খেয়াঘাট নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে।'

পাথারিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আমিনুর রশিদ আমিন বলেন, 'আমি প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানাই এই এলাকার কৃতী সন্তান ভাটিবাংলার উন্নয়নের রূপকার, আমাদের হাওররতœ মাননীয় পরিকল্পানামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি মহোদয়কে। এই প্রকল্পটির জন্য আমরা বার বার দাবি জানিয়ে আসছিলাম। আজ তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। মন্ত্রী মহোদয় আমাদেরকে অনেককিছু দিয়েছেন। সেই সঙ্গে পাথারিয়া ইউনিয়নের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প পাথারিয়া ব্রিজটিও আমাদের এনে দিয়েছেন। তাই আমরা ইউনিয়নবাসী মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।'

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর-২) মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, 'মামননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি স্যারের ডিও লেটারের মাধ্যমে অগ্রধিকারভিত্তিতে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। মন্ত্রী মহোদয় নিজে তদবির করে এই প্রকল্পটি পাস করিয়েছেন। এই প্রকল্পের প্রায় ৮৫ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই বাকি কাজগুলো সম্পন্ন হবে। আমার চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে করে পরিকল্পনামন্ত্রী মহোদয়ের এই কাজটি দ্রুত সময়ে স্বচ্ছভাবে শতভাগ সম্পন্ন করতে পারি।'

তিনি বলেন, 'এই কাজে অনিয়ম বা গাফিলতি করার কোনো সুযোগ নেই। প্রকল্পটির কাজ চলতি বছরের জুন মাসের ১৫ তারিখে শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু করোনাভাইরাস ও বন্যার কারণে আমাদের এই প্রকল্পটির বাকি কাজগুলো সম্পন্ন হতে বিলম্ব হচ্ছে। আশা করি আগামী কিছুদিনের মধ্যেই অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন হবে।'

প্রকল্পটির ব্যাপারে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি সিলেট মিররকে বলেন, 'এই প্রকল্পটি একটি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এখানে সরকারি-বেসরকারি অনেক স্থাপনা রয়েছে। প্রকল্পটি না হলে নদীর তীরে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেত।'

তিনি বলেন, 'দেশে এখন উন্নয়নের সুবাতাস বইছে। চারদিকে শুধু নতুন নতুন অবকাঠামো, রাস্তা, ব্রিজ, স্কুল, কলেজ স্থাপন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। পাথারিয়ায় এই নদীর উপরে আরও দু'টি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। একটির কাজ শুরু হয়েছে। আরেকটির কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সেই সঙ্গে সুনামগঞ্জে মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়, টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের কাজও চলমান রয়েছে। কি হচ্ছে না এই দেশে? আমরা আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় মানুষের কল্যাণে, দেশের কল্যাণে কাজ করি।'

 

এসটি/আরআর-০৬