করোনামুক্ত হলেন কণ্ঠযোদ্ধা সুজেয় শ্যাম

সিলেট মিরর ডেস্ক


জুন ১৩, ২০২০
১২:০৯ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ১৩, ২০২০
১২:০৯ পূর্বাহ্ন



করোনামুক্ত হলেন কণ্ঠযোদ্ধা সুজেয় শ্যাম

করোনাভাইরাসমুক্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা সুজেয় শ্যাম। করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর ৩০ মে থেকে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

পরপর দুইবার নমুনা পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ’ আসায় মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রেজা।

তিনি বলেন, তিনি এখন ভাইরাসমুক্ত। তার শারীরিক অবস্থা বেশ ভালো। সুস্থ হওয়ার পরও নিয়ম অনুযায়ী বাসায় তাকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ১১ দিনের লড়াই শেষে মঙ্গলবার কলাবাগানের বাসায় ফিরেছেন ৭৪ বছর বয়সী এ সুরকার।

দুঃসময়ে তার পাশে থাকার জন্য কুর্মিটোলা হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, শিল্পীসহ শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান সুজেয় শ্যাম।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর বুঝেছি, মানুষ আমাকে কতটা ভালোবাসে। সবার দোয়া আর আশির্বাদে সুস্থ হয়ে উঠেছি। সবার প্রতি আমি আজীবন ঋণী থাকব।

দুই বছর ধরে মূত্রনালীর ক্যানসারে ভুগছেন এই সুরকার ও সংগীত পরিচালক; ১৫ মে চেকআপের জন্য বেঙ্গালুরুতে যাওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে যাওয়া হয়নি বলে জানান তার মেয়ে রূপমঞ্জুরী শ্যাম।

১৯৪৬ সালে সিলেটে জন্ম নেওয়া সুজেয় শ্যামকে সংগীতে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে একুশে পদক দেওয়া হয়। তার আগে ২০১৫ সালে শিল্পকলা পদক পান তিনি।

গিটার বাদক ও শিশুতোষ গানের পরিচালক হিসেবে ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান চট্টগ্রাম বেতারে কর্মজীবন শুরু হয় সুজেয় শ্যামের। পরে তিনি ঢাকা বেতারে যোগ দেন।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে থাকাকালে মোট নয়টি গানে সুর করেছিলেন সুজেয় শ্যাম, যেগুলো একাত্তরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গাওয়া হয়েছিল।

এর মধ্যে রয়েছে ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’, ‘ওরে শোনরে তোরা শোন’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আজ রণ সাজে বাজিয়ে বিষাণ’। ছিল বিশ্বপ্রিয়র লেখা ‘আহা ধন্য আমার’, কবি দিলওয়ারের লেখা ‘আয়রে চাষী মজুর কুলী’।

তার সুর করা গানের মধ্যে ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’ এবং ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গান দুটি যে কোনো জাতীয় দিবসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে।

১৯৬৯ সালে চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন সুজেয় শ্যাম। ঢাকাই চলচ্চিত্র সংগীতে অবদানের জন্য তিনবার শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

বাংলাদেশ বেতারের প্রধান সঙ্গীত প্রযোজক পদ থেকে ২০০১ সালে অবসরে যান সুজেয় শ্যাম।

এরপর ২০০৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত ৪৬টি গানের সংকলন নিয়ে ‘স্বাধীন বাংলা বেতারের গান’ শিরোনামে একটি অ্যালবামের সঙ্গীত পরিচালনা করেন তিনি।

এর ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে আরও ৫০টি গানের সংকলন নিয়ে ‘স্বাধীন বাংলা বেতারের গান-২’ নামে আরেকটি অ্যালবামের সঙ্গীত পরিচালনা করেন শিল্পী।

‘টুনাটুনি অডিও’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবেও কাজ করছেন তিনি।

বিএ-০৮