নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ১৪, ২০২০
১০:৪৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ১৪, ২০২০
১১:০৫ পূর্বাহ্ন
‘তাপস নিঃশ্বাস বায়ে/মুমূর্ষরে দাও উড়ায়ে.../বৎসরের আবর্জনা/দূর হয়ে যাক যাক যাক.../এসো এসো.../এসো হে বৈশাখ...’। কেবল পয়লা বৈশাখের কারণেই নয়, এমনটি নিশ্চয়ই এখন সকলেরই মনের প্রত্যাশা। সবাই মনেপ্রাণে চাইছেন, নতুন বছরের সঙ্গে দূর হয়ে যাক করোনাকালের সংকট, নির্মল হোক বসুন্ধরা। অমানিশা শেষে জাগ্রত হোক নতুন এক পৃথিবী, নতুন বাংলাদেশ। করোনাকালের বৈশাখ তাই আসুক শান্তির বারতা নিয়ে।
বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ। আজ মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেল নতুন এক বছর। ১৪২৭ বঙ্গাব্দের এই সূচনালগ্নে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও দাঁড়িয়ে রয়েছে এক গভীর সংকটে। মানুষের মৃত্য-শোক-জ্বরা কাটিয়ে প্রকৃতই এক নতুন দিন আসুক, সবাই এটা খুব করে চাইছেন। অন্যান্য বছর বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটিতে বাঙালি মেতে উঠে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেরোয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। পান্তা ভাত-ইলিশ মুখে পুরে বাঙালি নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনে মেতে উঠে। এবার আর চিরপরিচিত এ দৃশ্য চোখে পড়বে না। সবখানেই কেবল থাকবে সুনশান নীরবতা। কোথাও নেই বৈশাখী মেলা কিংবা সাংস্কৃতিক আয়োজন।
বাঙালির কাছে নববর্ষ মানেই এক আন্দোৎসব। কেননা, তা আসে নতুন আশা, স্বপ্ন আর প্রত্যয় নিয়ে। ফেলে আসা দিনের ব্যর্থতা ও হতাশার বিপরীতে সাফল্যের বারতা ও প্রেরণা নিয়ে হাজির হয় পয়লা বৈশাখ। নতুন শপথে দীপ্ত প্রত্যয়ে মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেতনায় উদ্ভাসিত করে নতুন বছরের প্রথম দিন। এই উৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য এর সর্বজনীনতা। তাই এটি বাঙালির প্রাণের উৎসব। পৃথিবীর প্রায় সবকটি বর্ষপঞ্জির উৎপত্তি কোনো না কোনো ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত, কিন্তু বাংলা নববর্ষের কোনো ধর্মীয় অনুষঙ্গ নেই, এই উৎসব একান্তই সাংস্কৃতিক ও বৈষয়িক। এই উৎসব শুধু গ্রামাঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, দিনে দিনে শহরাঞ্চলেও বিস্তৃত হয়েছে। গ্রাম-শহর মিলিয়ে পয়লা বৈশাখ এখন সব বাঙালির সর্বজনীন সাংস্কৃতিক আনন্দ-উৎসব। ধর্ম-সম্প্রদায়নির্বিশেষে বাংলা ভূখ-ের সব মানুষের প্রাণের উৎসব। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। বিশ্বজুড়ে চলমান করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ হতে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান না-করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ অবস্থায় এবার বাংলা নববর্ষ ঘিরে বহুদিনের চলমান মঙ্গল শোভাযাত্রা কিংবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে না। তবে কিছু কিছু সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে লাইভের মাধ্যমে শিল্পীদের একক গান, নৃত্য ও আবৃত্তি পরিবেশন দিনব্যাপী সম্প্রচার করবে। পত্রপত্রিকাগুলো প্রকাশ করেছে ক্রোড়পত্র আর টিভি চ্যানেলগুলোতেও থাকবে নানা আয়োজন। এককথায়, ঘরে বসেই বাঙালি এবার বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন করবে।
সিলেটে পাঠশালা, শ্রুতি ও একদল ফিনিক্স নামের তিনটি সংগঠন বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন করবে। নিজেদের ফেসবুক পেজ থেকে তারা তাদের অনুষ্ঠানগুলো সম্প্রচার করবে। এতে দেশ-বিদেশের প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরা পরিবেশনায় অংশ নেবেন। সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীরা জানিয়েছেন, নতুন পরিস্থিতিতে নতুন মাধ্যমেই পয়লা বৈশাখের বারতা এবার ছড়িয়ে পড়বে সর্বত্র। নতুন আশা, সংকল্প আর স্বপ্ন নিয়ে বাঙালি করোনোভাইরাসের বিস্তার ঠেকিয়ে চলতি বছরেই নতুন এক উচ্চতায় বিশ্বে আসীন হবে বলে তাঁরা মনে করছেন।