কুশিয়ারায় সেতুর দাবি উপেক্ষিত, ফেরি চালুর আশ্বাস

বালাগঞ্জ প্রতিনিধি


সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২৫
০২:৩৮ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২৫
০২:৪২ অপরাহ্ন



কুশিয়ারায় সেতুর দাবি উপেক্ষিত, ফেরি চালুর আশ্বাস

কুশিয়ারায় সেতুর দাবি উপেক্ষিত, ফেরি চালুর আশ্বাস


দুই উপজেলার মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে খরস্রোতা কুশিয়ারা নদী। এই নদী পাড়ি দিয়েই প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষকে চলাচল করতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে নদীতে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসলেও সুফল পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। তাই যুগের পর যুগ ধরে নদী পারাপারে খেয়া নৌকাই একমাত্র ভরসা। বালাগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর ওপরে যত দ্রুত সেতু নির্মাণ করা হবে, তত দ্রুত পাল্টে যাবে এখানকার মানুষের জীবনমান।

একটি সেতুতে আটকে আছে দুই উপজেলার মানুষের নাগরিক সুবিধাগুলো। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে এখানকার মানুষের ভাগ্যের চাকা বদলে যাবে। সেতু নির্মাণ হলে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা ও মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলবাসীর শিক্ষা, বাসস্থান, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব কিছুর উন্নয়ন সাধিত হবে। সেতু না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দুই উপজেলার কয়েক লক্ষাধিক মানুষ। আর এই সেতুটি নির্মিত হলে বালাগঞ্জ ও  রাজনগর উপজেলার মধ্যে সরাসরি ‘সেতু বন্ধন’ এর দ্বার উন্মোচিত হবে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর, উত্তরভাগ, পাঁচগাঁও, মুন্সিবাজার, রাজনগর সদর ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগ বালাগঞ্জের দিকে। তেমনি বালাগঞ্জের মানুষেরও রাজনগরের দিকে যোগাযোগ রয়েছে। রাজনগরের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা নদী পার হয়ে বালাগঞ্জের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ালেখা করে আসছে। কিন্তু সেতু বা ফেরি না থাকায় দুর্ভোগ চরম ধারণ করেছে। আপাতত একটা ফেরি হলেও দুর্ভোগ লাঘব হত। 

২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর মৌলভীবাজার-৩ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি এম সাইফুর রহমান অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী হন। সরকারের শেষ দিকে এসে কুশিয়ারা নদীতে একটি সেতু নির্মাণের দাবি উঠে। এম সাইফুর রহমান আশ্বাস দিলেও বিএনপি ক্ষমতা হারায়। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ও সেতুর দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। এনিয়ে জাতীয় সংসদে উভয় এলাকার এমপিরা দাবি উত্থাপন করেন। বারবার আশ্বাস ও সমীক্ষা হলেও সেতু নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

রাজনৈতিক নেতাদের শুধু আশ্বাস শুনতে হচ্ছে প্রায় তিন দশক ধরে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নদীতে সেতুর দাবি দীর্ঘদিনের হলেও তা বাস্তবায়নে দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে প্রাথমিকভাবে ফেরি চালুর অনুমোদন হয়। কিন্তু অনুমোদনের পর ফেরি চালু না হওয়ায় দুর্ভোগ যেন কাটছেই না দুই উপজেলার মানুষের।

২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের একপত্রে উল্লেখ করা হয়- মৌলভীবাজারের রাজনগর ও সিলেটের বালাগঞ্জ জেড-২০১৭ সড়কের ১৭তম কিলোমিটারে কুশিয়ারা নদীর উপর সড়ক ও জনপথের আওতাধীন একটি নতুন ফেরিঘাট স্থাপনের নিমিত্ত প্রশাসনিক অনুমোদন নির্দেশক্রমে জ্ঞাপন জারি করা হলো।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব টিনা পাল স্বাক্ষরিত পত্রে সড়ক ও জনপথের প্রধান প্রকৌশলীকে এআদেশ দেয়া হয়। এই আদেশের পর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও ফেরি স্থাপনের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এদিকে, দীর্ঘ বিলম্বের পর ফেরি সার্ভিস চালুর লক্ষ্যে ৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে বালাগঞ্জ বাজার এলাকায় স্লুইস গেইটের নিকটে ও রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের খেয়াঘাট বাজার এলাকায় প্রস্তাবিত ফেরি ঘাটের স্থান ঘুরে দেখেছেন মৌলভীবাজার সড়ক বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার হামিদসহ সড়ক ও সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা।

এসময় বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজিত কুমার চন্দ, বালাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মুনিম, বালাগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মকবুল মিয়াসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। সরজমিন পরির্দশনকালে সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার হামিদ সাংবাদিকদের জানান, ফেরি সার্ভিস চালুর জন্য পাঠানো প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদন হলেই টেন্ডার পক্রিয়া সম্পন্ন করে কাজ শুরু করা হবে, এতে প্রায় মাস দেড়েক সময় লাগবে।

জিসি / ০১