ঢাকায় আদিবাসী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও ছাত্র-জনতার উপর পুলিশী নির্মমতার বিচার দাবিতে সিলেটে প্রতিবাদ সমাবেশ

সিলেট মিরর ডেস্ক


জানুয়ারি ২০, ২০২৫
০৯:৪৭ অপরাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ২০, ২০২৫
০৯:৪৭ অপরাহ্ন



ঢাকায় আদিবাসী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও ছাত্র-জনতার উপর পুলিশী নির্মমতার বিচার দাবিতে সিলেটে প্রতিবাদ সমাবেশ


রাজধানী ঢাকায় আদিবাসী শিক্ষার্থীদের উপর সন্ত্রাসী হামলা এবং সংক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার উপর পুলিশী হামলার নির্মমতার বিচার দাবিতে সিলেটে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

আজ সোমবার (২০ জানুয়ারি) বিকাল ৩টায় সিলেট নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সম্মুখে এ কর্মসূচি পালিত হয়। 

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন-সিলেট, খাসি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল , সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন. ছাত্র মৈত্রী, পাত্র সমাজ কল্যাণ পরিষদ (পাসকপ) যৌথভাবে এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। 

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম সিলেটের সভাপতি গৌরাঙ্গ পাত্রের সভাপতিত্বে ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল সভাপতি বিশ্বজিৎ শীলের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন-সিলেট এর সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম। 

প্রতিবাদ সমাবেশের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যেদিন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রের সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবনায় 'বহুত্ববাদ'কে অন্তর্ভুক্ত করে খসড়া জমা দেয়, ঠিক সেদিন ও পরের দিন এই রাষ্ট্রের তথাকথিত জাতিগরিমার বলি হয়েছেন বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠী। তাদের গণতান্ত্রিক নাগরিক অধিকারের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পরিকল্পিতভাবে নির্মম হামলা করে ভূঁইফোর একটি সংগঠনের সন্ত্রাসীরা। পরের দিন সেই ঘটনার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনী পুনরায় হামলা করে সেই সংগঠনের সঙ্গে সরকারের সম্পৃক্ততার প্রমাণ দেয়।’


সভায় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সিলেট এর সভাপতি সৈয়দা শিরিন আক্তার, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সিলেট জেলা শাখার আহবায়ক কমরেড আবু জাফর, খাসি স্টুডেন্ট ইউনিয়ন সিলেট এর সভাপতি এলিজাকে তাংসাং, সঞ্জয় বাসদ মার্কসবাদী সিলেট জেলা শাখার সমন্বয়ক সঞ্জয় কান্তি দাস, পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি রেজাউল কিবরিয়া, ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেট শাখার রোমেনা বেগম রোজী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সভাপতি মনীষা ওয়াহিদ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী সিলেট শাখার আহবায়ক সরফরাজ সানোয়ার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সিলেট জেলা শাখার সহ সভাপতি সুমিত কান্তি পিনাক প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতির পর বিগত কয়েক মাস ধরে যা চলে আসছিল, গত কয়েকদিনে রাষ্ট্রের এই স্বেচ্ছাচারী অপরিবর্তিত চরিত্র এবং সরকারের এই নিপীড়নমূলক ভূমিকা গণতন্ত্রকামী যেকোনো মানুষকে আশঙ্কাগ্রস্ত ও আতংকিত করে তুলেছে।’ তারা বলেন, ‘স্পষ্টত এই সরকার জাতি-ধর্ম-শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে শক্তিশালীর অন্যায়ের প্রতি দুর্বলতা ও শক্তিহীনের ক্ষোভের প্রতি কাঠিন্য পোষণ করছে। অথচ, গণতন্ত্রের জন্য আমাদের যে দীর্ঘ সংগ্রাম সেটারই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে আমরা সদ্যই সমতা, বৈষম্যহীনতা, সমঅধিকার আর সমমর্যাদার উদ্দেশ্যে সমবেত হয়েছিলাম চব্বিশের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে।’ বক্তারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘সেই সমবায়ের অংশীদার হয়েও, বিগত সময়ের মতো 'বৈষম্যহীন বাংলাদেশে'ও নিজেদের ‘ঝরা পাতা’ হিসেবে আবিষ্কার করা আদিবাসী শিক্ষার্থী-জনতা স্বভাবতই আজ ক্ষুব্ধ। তাদের এই ক্ষুব্ধতার সঙ্গে আমরাও সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশ করি এবং তাদের প্রতি রাষ্ট্র-সরকার ও সংখ্যাগুরুর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’


সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, ‘বহুত্ববাদী সংস্কৃতিতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি নির্বিশেষে পরিচিতির সম্মিলন বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য তৈরি করবে—এটিই হলো গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। বাংলাদেশেও এই গণআকাঙ্ক্ষা বিদ্যমান। সেই আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলণ হিসেবে বৈচিত্রের মধ্যে জাতীয় ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেয়া একটি বৃক্ষের ছবি জুলাই আন্দোলনের দেয়ালচিত্র (গ্রাফিতি) হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। এই 'ঐক্য-বৃক্ষে'র দেয়ালচিত্রটি যখন স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকের প্রচ্ছদে স্থান পেল, তখন আমরা আরও আশাবাদী হলাম। একেকটি পাতায় একেকটি পরিচয় সম্বলিত বৃক্ষটির শেকড়ের পাশে আদতেই একটি মঙ্গলবার্তা ছিল: 'পাতা ছেঁড়া নিষেধ'। কী চমৎকার বহুত্ববাদী বহিঃপ্রকাশ! অথচ, আমরা বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে আবিষ্কার করলাম, আমাদের ঐক্যের শেকড়ে কুঠারাঘাত করা হয়েছে!’

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘বৃক্ষের ‘আদিবাসী’ নামাঙ্কিত পাতাটির প্রতি ইঙ্গিত করে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ (সম্ভবত ফরাসি থেকে ইংরেজিতে আগত sovereignty শব্দটির অপভ্রংশ) নামক একটি ভুঁইফোঁড় সংগঠন আদিবাসীদের অবমাননাকর ‘উপজাতি’ তকমা দিয়ে সেই প্রচ্ছদটি অপসারণের অযৌক্তিক দাবি তোলে। এই সংগঠনের ন্যাক্কারজনক আপত্তির প্রতি সম্মতি জ্ঞাপন করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) দেয়ালচিত্রের প্রচ্ছদটি বাতিল করে ব্যাখ্যা দেয় যে, আদিবাসী শব্দটি সংবিধানসম্মত নয় বিধায় প্রচ্ছদটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।’ কী নিদারুণ বৈষম্যবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছে এ সরকার মন্তব্য করে তারা বলেন, ‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ২০১১ সালে অযৌক্তিকভাবে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ধারা ২৩(ক)-তে অত্যন্ত আপত্তিজনক "উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়" প্রপঞ্চগুলো সন্নিবেশিত করেছিল। পরিহাসের বিষয়, জুলুমশাহীর সংবিধানকে সংস্কারের লক্ষ্যে কমিশনের খসড়া প্রস্তাব যখন সামনে এসেছে, তখন সেই সংবিধানেরই দোহাই দিয়ে আদিবাসীদের 'অপর' করার পাঁয়তারা করছে সরকার!’

সরকারের এমন বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রকাশ করতে গত ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে এনসিটিবি কার্যালয়ের সামনে আদিবাসী শিক্ষার্থী-জনতা বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় জানিয়ে তারা বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে, কোনো ধরনের উস্কানি ছাড়াই তথাকথিত ‘সভারেন্টি’র গুণ্ডাবাহিনী লাঠি ও জাতীয় পতাকা মোড়ানো ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে আদিবাসী শিক্ষার্থী-জনতাকে দানবীয় কায়দায় গুরুতরভাবে আহত করে। পূর্বপরিকল্পিত এই একপাক্ষিক আক্রমণকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হিসেবে জনপরিসরে প্রচারের জঘন্য উদ্দেশ্য নিয়ে আক্রমণকারীরা নিজেরাই আহত হওয়ার নাটক মঞ্চস্থ করে। অথচ আমরা দেখেছি, কাদের আক্রমণে কারা আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রমণের শিকার আদিবাসী শিক্ষার্থী-জনতার একটি বড় অংশ মারাত্মকভাবে আহত হয়ে বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’



এএফ/০২