নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ১২, ২০২৪
০১:২৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট : আগস্ট ১২, ২০২৪
০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন
বিপ্লব আর দেশ সংস্কারের স্লোগান ও শিল্পকর্মে নগরের বিভিন্ন দেয়াল রাঙিয়েছেন সিলেটের শিক্ষার্থীরা। গতকাল রবিবার সকাল থেকে পুরোদমে দেশ সংস্কার ও নতুন দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কর্মযজ্ঞ চালান সিলেটে অবস্থানরত বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নগরের বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে চোখ বুলালে মনে হবে- এ যেন কোনো শিল্পের নগর।
নগরের স্টেডিয়াম এলাকা, রিকাবীবাজার, চৌহাট্টা, বন্দরবাজার, মহিলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, সিলেট আলিয়া মাদরাসা, মিরবক্সটুলা, নয়াসড়ক এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ব্যাপক উৎসাহ আর উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দেয়ালে নানা স্লোগান আর চিত্রকর্ম আঁকেন। গতকাল রবিবার সন্ধ্যার দিকে নগরের মিরবক্সটুলা এলাকার ইউনিভার্সেল কলেজের সামনে বৃষ্টি উপেক্ষা করে একদল শিক্ষার্থীকে গ্রাফিতি অঙ্কন করতে দেখা যায়।
কথা হলে তারা বলেন, ‘নতুন করে দেশ গড়ার প্রত্যয় আমাদের। পুরোদমে দেশ সংস্কার করতে হবে বলে মনে করি আমরা। গত কয়েকদিন দেশে যে সহিংসতা হয়েছে, তা ভুলে গিয়ে এগিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশে যেন আর এমন কোনো রক্তাক্ত ঘটনা না ঘটে। সেটাই প্রত্যাশা। এবং বাংলাদেশ যেন উন্নত-সমৃদ্ধ ও জনবান্ধব হয়, সেই মোতাবেক সংস্কার চাই।’
শিক্ষার্থীদের শিল্পকর্ম নজর কেড়েছে পথচারীদের। অনেকেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেন নানামুখী সৃজনশীল কর্মযজ্ঞ। এর মধ্যে রয়েছে ‘একতাই বল, বীর বাঙালির অহংকার, বাংলাদেশের মানচিত্র, সংগ্রাম, ঐক্য, দুর্নীতি, প্রাণ-প্রকৃতি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একাধিক মুহূর্তসহ নানা বিষয়।
শিক্ষার্থীরা নগরের চৌহাট্টা পয়েন্টের চত্বরের নাম দিয়েছেন বিজয় চত্বর। সেখানে বিজয়ের প্রতীকী নানা চিত্রও এঁকেছেন তারা। এ ছাড়াও নগরের বিভিন্ন সড়কের মধ্যেও এঁকেছেন নানা আল্পনা।
কিছুদিন আগেই রক্ত দিয়ে রাজপথ রাঙিয়েছেন যারা, সেই শিক্ষার্থীরাই এখন রং-তুলিতে দেয়াল রাঙান। দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি সিলেটের শোভা বর্ধন করেছে বলে জানান পথচারী আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা দেয়ালে ভালো ভালো কথাগুলো লিখেছেন। যেমন- ‘ধর্ম যার যার, দেশ সবার’, ‘বারবার এদেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে’, ‘তুমি যদি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাও তবে তুমি বাংলাদেশ’, ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’- ইত্যাদি স্লোগান মানুষকে অনুপ্রেরণা-উৎসাহ যোগাবে। সমাজের যেখানেই অন্যায়-অবিচার দেখবে, মানুষ রুখে দাঁড়ানোর সাহস দেখাবে। এই প্রজন্ম আমাদের গর্বের।’
মূলত জুলাই আন্দোলনের চিত্র আর ভবিষ্যত বাংলাদেশের রূপকল্প তুলে ধরা হচ্ছে এসব গ্রাফিতিতে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের ছবিও স্থান পাচ্ছে এসবে দেয়াল চিত্রে। রিকাবীবাজার এলাকার দেয়ালে শিল্পকর্ম আঁকা একদল শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি হলো ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, রক্ত ঝরিয়েছে, তাদেরকে ঘিরে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক স্লোগান, কথাবার্তা এবং উসকানিমূলক বাক্য লেখা ছিল, যা অশোভনীয়। তাই আমরা দলবদ্ধ হয়েছে দেয়াল রং করে দেশের ঐতিহ্য, শহীদদের স্মৃতি ও আন্দোলনের স্মৃতি ফুটিয়ে তুলছি।’
তৌহিদ আলম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে এই আন্দোলন করেছি। সাধারণ মানুষও যুক্ত হয়েছিলেন। নগরের দেয়ালগুলোতে নানা ধরনের লেখা ছিল, যা দৃষ্টিকটু ও সমীচীন নয়। তাই এসব লেখা মুছে নতুন করে রাঙানোর কাজ করছি। তুলে ধরছি আন্দোলনের নানা স্মৃতি। যাতে পথচলতি শিশু-কিশোর থেকে বয়স্ক সবাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি ভুলে না যান, সে জন্য গ্রাফিতি আঁকছি।’
নগরের তালতলা এলাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশে দেয়ালে একদল শিক্ষার্থীকে গ্রাফিতি অঙ্কন করতে দেখা যায়। তাদের একজন সানজিদা আলী নোপা নামে শিক্ষার্থী বলেন, ‘আন্দোলনকে ঘিরে কত স্মৃতি, অত আনন্দ-বেদনা, প্রাপ্তি-হারানোর বেদনা, ভয়, শঙ্কা, সাহসের গল্প ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সেই সব আমরা নগরের দেয়ালে দেয়ালে তুলে ধরতে গ্রাফিতি আঁকছি।’
আলোকচিত্রে নগরের দেয়ালে দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতি |