দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে ১৬ ডিসেম্বর আসে বাঙালির নতুন প্রভাত : আহমেদ নূর

সিলেট মিরর ডেস্ক


ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩
০৫:৫৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩
০৫:৫৬ পূর্বাহ্ন



দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে ১৬ ডিসেম্বর আসে বাঙালির নতুন প্রভাত : আহমেদ নূর


সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আহমেদ নূর বলেছেন, ‘১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি পরাধীনতার শেকল ভেঙে প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করে। ২৪ বছরের নাগপাশ ছিন্ন করে জাতির ভাগ্যাকাশে দেখা দেয় এক নতুন সূর্যোদয়।’

শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সপ্তদশ কেমুসাস বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বইমেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরীর পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বইমেলা উদযাপন কমিটির আহবায়ক অধ্যক্ষ ছয়ফুল করিম চৌধুরী হায়াত, কেমুসাসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী, অ্যাডভোকেট কামাল তৈয়ব।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে আহমেদ নূর বলেন, আদি বাঙালির সাংস্কৃতিক ও আর্থ-সামাজিক জীবন এবং ক্রমবিকাশের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে বাঙালির শৌর্য-বীর্য যেন আর একবার ধপ করে জ্বলে উঠে। প্রথম আগুন জ্বলে '৫২-র একুশে ফেব্রুয়ারি। ফাগুণের আগুনে ভাষা আন্দোলনের দাবি আর উন্মাতাল গণমানুষের মুষ্টিবদ্ধ হাত একাকার হয়ে যায় সেদিন। ভাষার জন্য প্রথম বলিদান বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করে। সেই থেকে শুরু হয়ে যায় বাঙালির শেকল ভাঙার লড়াই। পাকিস্তানিদের সঙ্গে হিসেব-নিকেশের হালখাতার শুরুতেই রক্তের আঁচড় দিয়ে বাঙালি শুরু করে তার অস্তিত্বের লড়াই। পলাশীর আম্রকাননে হারিয়ে যাওয়া সেই সিরাজদ্দৌলা আবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রূপে এ লড়াইয়ে সেনাপতি হিসেবে আবির্ভূত হন। '৫২ সালে যে আগুন জ্বলেছিল রাজধানী ঢাকা শহরে সে আগুন যেন ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে দেশের আনাচে-কানাচে সবখানে। যে আগুন জ্বলেছিল মোর প্রাণে, সে আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে সবখানে সবখানে। বাঙালির বুকের ভেতর জ্বলে উঠা আগুন যেন সহস্র বাঙালির মধ্যে প্রবাহিত হতে থাকে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী বলেন, ‘২৫ মার্চের কালো রাত্রির নিকষ আঁধার থেকে জেগে উঠে হিরণ্ময় হাতিয়ার। ৭ মার্চ একাত্তরের বিশাল জনসমুদ্র থেকে যুগের কবি, মহাকাব্যের প্রণেতা বঙ্গবন্ধু বজ্রকন্ঠ ঘোষণা দেন 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। রক্ত যখন দিয়েছি তখন আরও দেব, তবুও এদেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।' এই একটি মাত্র উচ্চারণে যেন বাঙালি সত্যিকার দিক-নির্দেশনা পেয়ে যায়। চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকে বাঙালি। বাঙালি বুঝে যায় শেষ কামড় দেওয়ার সময় আসন্ন। পাকিস্তানিরাও আর বসে নেই। পুরো জাতিকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে মারাত্মক মারণাস্ত্র নিয়ে ২৫ মার্চ একাত্তর ঘুমন্ত জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় বাঙালি নিধনযজ্ঞ।’

প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘নয় মাসের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে ১৬ ডিসেম্বর আসে নতুন প্রভাত। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সূচিত হলো মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্য বিজয়। এর মধ্য দিয়ে এলো হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। বাঙালি জাতি এদিন অর্জন করে তার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের অধিকার। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর ২ লাখ ধর্ষিতা মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতা ধরা দেয় বাঙালির জীবনে।’

এদিকে বইমেলার সমাপনী ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বইমেলা প্রাঙ্গণে নানা কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ নজরুল সঙ্গীত শিল্পী পরিষদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, মুক্তাক্ষরের নৃত্যানুষ্ঠান, তারুণ্যের আবৃত্তি অনুষ্ঠান ও বাউল সঙ্গীতের আসর।

সিলেটের বিশিষ্ট শিল্পীদের একক  পরিবেশনা ও ভবসাগর শিল্পী গোষ্টির দলীয় পরিবেশনা শ্রোতাদের মুগ্ধ করে আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহনকারীদের মাঝে  পুরস্কার বিতরণ করা হয় ।


এএফ/০২