সিলেট মিরর ডেস্ক
অক্টোবর ২৫, ২০২৩
০৫:২৬ অপরাহ্ন
আপডেট : অক্টোবর ২৫, ২০২৩
০৫:২৬ অপরাহ্ন
বিধিনিষেধ ও ডলার সংকটের কারণে বিভিন্ন পণ্যের আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলা কমছেই। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ভোগ্যপণ্যের এলসি খোলা কমেছে ৪৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে ভোজ্য তেলের আমদানি ঋণপত্র। একই সময়ে শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য এবং জ্বালানি তেল সবকিছুরই এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি আগের চেয়ে কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা কমেনি, বরং ডলারের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানান সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে অস্বাভাবিক মূল্যে পণ্য কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ডলার সংকটসহ নানা কারণে ভোগ্যপণ্যের আমদানি ব্যাপক হারে কমে গেছে। এর ফলে সংকট তৈরি হতে পারে, যা পণ্যের দাম আরও বাড়াবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন পণ্যের এলসি খোলা হয়েছে ১ হাজার ৫৮৯ কোটি ডলারের। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ দশমিক ৪০ শতাংশ বা ৩৪৫ কোটি ডলার কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বিভিন্ন পণ্যের এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯৩৮ কোটি ডলার।
শুধু এলসি খোলা নয়, ডলার সংকটের কারণে পুরনো এলসির দায় পরিশোধও পিছিয়ে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আগের এলসি নিষ্পত্তি কমেছে প্রায় ২৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে এলসি নিষ্পত্তি ১৮ শতাংশ কমেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ভোগ্যপণ্যের আমদানি ঋণপত্র খোলা হয়েছে ১৪২ কোটি ডলারের। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ২৭২ কোটি ডলারের ঋণপত্র খোলা হয়েছিল। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে আমদানি ঋণপত্র খোলা কমেছে ৪৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। একই সময়ে ভোগ্যপণ্যের ঋণপত্রে নিষ্পত্তি কমেছে ১৫ দশমিক ৯১ শতাংশ।
তথ্য বলছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর ভোগ্যপণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণপত্র (এলসি) খোলা কমেছে অপরিশোধিত ভোজ্য তেলের। এ সময় অপরিশোধিত ভোজ্য তেলের আমদানি ঋণপত্র খোলা কমেছে ৮৭ দশমিক ৪০ শতাংশ। পণ্যটির ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে ৭২ দশমিক ৭১ শতাংশ। একই অবস্থা পরিশোধিত ভোজ্য তেলেরও। আলোচিত সময়ে পরিশোধিত ভোজ্য তেলের ঋণপত্র খোলা কমেছে ৬৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এ পণ্যের ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে ৫৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
খাদ্য আমদানির মধ্যে এরপরের অবস্থান চাল ও গমের। আলোচিত সময়ে চাল ও গম আমদানি কমেছে ৬৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ডাল আমদানি কমেছে ৪১ শতাংশ আর ওষুধ ও ওষুধজাত দ্রব্য আমদানি কমেছে ৩৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
ব্যাংকাররা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে যেভাবে আমদানি ঋণপত্র খোলা কমেছে, ঠিক একইভাবে কমেছে ঋণপত্র নিষ্পত্তিও। ডলার সংকটের কারণে আগের খোলা এলসিগুলোর অর্থও পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এতে এলসি ডেফার্ড করতে হচ্ছে।
চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট অনিশ্চয়তায় আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের পণ্যের মূল্য ও জাহাজ ভাড়া বেড়ে যায়। এর সঙ্গে যোগ হয় ডলারের উচ্চমূল্য। এসব কারণে ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি খরচ অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। একই কারণে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে পড়ে। অন্যদিকে করোনা-পরবর্তী সবকিছু খুলে যাওয়ায় হুন্ডি তৎপরতা ব্যাপকভাবে বেড়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ নিম্নমুখী হয়ে পড়ে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার আয় ও ব্যয়ে পার্থক্য বেড়ে দেশে ডলারের সংকট তৈরি হয়। গত বছর এপ্রিল থেকে এ সংকট তীব্র হয়। এতে কমতে থাকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এ অবস্থায় ডলার সাশ্রয়ের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে গত বছর এপ্রিলে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য সব ধরনের পণ্য আমদানিতে শতভাগ এলসি মার্জিন আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পাশাপাশি বিদেশি বাণিজ্যে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিং হচ্ছে কি না, সেটিও নিয়মিত যাচাই শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে আমদানি ঋণপত্র খোলার পরিমাণ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।
তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছর জুড়েই এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির হার ছিল নিম্নমুখী। গত অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্যের এলসি খোলা হয়েছিল ৬ হাজার ৯৩৬ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের। এটি তার আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ২৬ দশমিক ৪১ শতাংশ কম। কড়াকড়ির আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্যের এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৪২৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার। এটি তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি ছিল। শুধু এলসি খোলাই নয়, গত অর্থবছর জুড়ে বিভিন্ন পণ্যের এলসি নিষ্পত্তিও কম হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্যের এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ২১৯ কোটি ডলার। এটি তার আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৩ শতাংশ কম। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়েছিল প্রায় ৩৬ শতাংশ। ওই অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ২৪৯ কোটি ডলার।
আরসি-০১