আদালত অবমাননা : বিচারককে কারাদণ্ড দেওয়ার তিন ঘন্টা পর জামিন দিলেন হাইকোর্ট

সিলেট মিরর ডেস্ক


অক্টোবর ১২, ২০২৩
১০:৫৪ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ১২, ২০২৩
১০:৫৪ অপরাহ্ন



আদালত অবমাননা : বিচারককে কারাদণ্ড দেওয়ার তিন ঘন্টা পর জামিন দিলেন হাইকোর্ট


আদালত অবমাননার দায়ে কুমিল্লার সাবেক মুখ্য বিচারিক হাকিম (সিজেএম) সোহেল রানাকে ৩০ দিনের কারাদণ্ড দেওয়ার ঘণ্টা তিনেক পর আবার জামিনও দিয়েছেন হাইকোর্ট। কারাদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার শর্তে তাঁকে ৩০ দিনের জামিন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

আজ বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বিচারপতি মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ও বিচারপতি মাসুদ হাসানের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ তিন ঘণ্টার ব্যবধানে এ দুই আদেশ দেন।

বিচারক সোহেল রানা বর্তমানে অতিরিক্ত জেলা জজ হিসেবে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আদালত অবমাননার দায়ে কোনো বিচারককে কারাদণ্ড দেওয়ার নজির এটিই প্রথম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

প্রথম আদেশে কারাদণ্ডাদেশের পাশাপাশি দণ্ডিত এই বিচারককে সাত দিনের মধ্যে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম (সিজিএম) আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া তাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানাও করেন হাইকোর্ট।

আদালতে বিচারক সোহেল রানার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।

আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী প্রণয় কান্তি রায়।

আইনজীবী প্রণয় কান্তি রায় সাংবাদিকদের বলেন, সোহেল রানা যে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছিলেন তা আদালত গ্রহণ না করায় তাকে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে তাঁকে ঢাকার সিজিএম-এ আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬(২-ক) ধারা অনুসারে এক বছরের কম সাজা হলে সংশ্লিষ্ট আদালত দণ্ডিতের জামিন মঞ্জুর করতে পারেন।

সে অনুসারে আদেশের পরপরই জামিন আবেদন করা হয়। কারাদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে বিচারক সোহেল রানা আপিল করবেন, তাই তাঁর জামিন আবেদনটি যেন মঞ্জুর করা হয়। হাইকোর্ট সন্তুষ্ট হয়ে আপিল করার শর্তে তাঁকে ৩০ দিনের জামিন দিয়েছেন। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করা হবে।

জ্যেষ্ঠ এ আইনজীবী বলেন, হাইকোর্ট ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১(ক) ধারা অনুসারে ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) সংক্রান্ত একটি মামলায় স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন।

সে স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে কুমিল্লার সাবেক সিজিএম সোহেল রানা মামলাটির অভিযোগ গঠন করেন। শুধু অভিযোগ গঠন করেই তিনি ক্ষান্ত ছিলেন না। এ মামলায় তিনি একাধিক আদেশ দেন। বিষয়টি নজরে আসার পর হাইকোর্ট তার কাছে ব্যাখ্যা চান। তিনি হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে ব্যাখ্যা দাখিল করেছিলেন। লিখিত ব্যাখ্যায় তিনি যে শব্দ চয়ন করেছিলেন তা আদালতের কাছে সন্তোষজনক ছিল না। তারপর হাইকোর্ট তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন। সে রুলে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু উচ্চ আদালত বলেছেন, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকার পর যেহেতু তিনি (ডেলিভারেটলি) ইচ্ছাকৃতভাবে বিভিন্ন আদেশ দিয়েছেন এবং এ বিষয়ে তিনি যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সে ব্যাখ্যার শব্দ চয়ন হাইকোর্টের মান-মর্যাদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সুতরাং তার এই নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহণযোগ্য নয়। যে কারণে হাইকোর্ট তাঁকে আদালত অবমাননার দায়ে সাজা দিয়েছেন।

হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের মধ্যে মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশ দেওয়ার পরই তাকে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয় বলে জানান আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।


এএফ/০৮