পশ্চিমা পোশাকে টিভি পর্দায় সাবেক জঙ্গিবধূ শামীমা

সিলেট মিরর ডেস্ক


সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১
০৯:০৯ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১
০৯:০৯ অপরাহ্ন



পশ্চিমা পোশাকে টিভি পর্দায় সাবেক জঙ্গিবধূ শামীমা

মাত্র ১৫ বছর বয়সে সিরিয়ায় পালিয়ে ইসলামিক স্টেটে যোগ দেয়া ব্রিটিশ-বাংলাদেশি মেয়ে শামীমা বেগম ব্রিটিশ টেলিভিশনের ক্যামেরার সামনে নতুন বেশভূষায় হাজির হয়েছেন।

২২ বছর বয়সী শামীমা বেগম আইটিভির গুড মর্নিং ব্রিটেন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন একেবারে পশ্চিমা ধাঁচের খোলামেলা পোশাক পরে, যে ধরণের পোশাকে তাকে আগে কখনো দেয়া যায়নি।

তার পরনে ছিল ধূসর রঙের স্লিভলেস ভি কাট ভেস্ট, মাথায় বেজ বল হ্যাট এবং আঙুলের নখে গোলাপি নেইল পলিশ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই অভিযোগ করছেন, শামীমা বেগম আসলে এখন ব্রিটেনে ফিরে আসার জন্য এবং মানুষের সহানুভূতি পাওয়ার উদ্দেশ্যেই ইচ্ছে করেই খোলামেলা পশ্চিমা পোশাকে এই টিভি অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।

সাক্ষাৎকারে শামীমা বেগমকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি বোরকা ছেড়ে যে এখন আবার পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক পরেছেন, তা এরকম একটা উদ্দেশ্যে কীনা?

জবাবে শামীমা বেগম বলেন, তিনি হিজাব পরা ছেড়ে দিয়েছেন প্রায় এক বছরেরও বেশি আগে, তিনি নিজেই হিজাব খুলে ফেলেছেন। কারণ তার মনে হচ্ছিল হিজাবের কারণে তিনি একটা গন্ডির মধ্যে বাঁধা পড়ে যাচ্ছেন। তিনি যদি হিজাব না পরেন তাতেই তিনি বেশি স্বস্তি বোধ করেন।

তিনি আরও বলেন, হিজাব না পরা অবস্থায় লোকজনকে তার ছবি তুলতে দেয়ার অনেক সুযোগ তার আগেও ছিল।

তার বেশ-ভূষা এবং চেহারায় এই নাটকীয় পরিবর্তন মানুষের মন জয় করার জন্য নয় বলে তিনি দাবি করেন।

প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে এই দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে শামীমা বেগম তার পালিয়ে গিয়ে আইসিসে যোগ দেয়া, সেখানে তার জীবন, এবং কেন এখন তিনি আবার ব্রিটেনে ফিরে আসতে চান তা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন।

শামীমা বেগম বলছেন, আইএস জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি বাকি জীবন গ্লানি বোধ করবেন। এবং এখন তিনি সন্ত্রাসবাদ দমনে ব্রিটিশ সরকারকে সহায়তা করতে চান।

শামীমা বেগম বুধবার সিরিয়ার এক শরণার্থী শিবির থেকে বিবিসি, বিবিসি ফাইভ লাইভ এবং আইটিভিকে পৃথক সাক্ষাৎকার দেন।

বিবিসির রিপোর্টার তাকে প্রশ্ন করেন, আইসিস তার খেলাফত কায়েম রাখতে পারেনি বলেই কি তিনি এখন তার মত পরিবর্তন করেছেন?

জবাবে শামীমা বেগম বলেন, বহু দিন আগেই তার ধারণা পরিবর্তন হয়েছিল, তবে এখন তিনি তা প্রকাশ করতে পারার মত মানসিক অবস্থায় পৌঁছেছেন।

ব্রিটিশ জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে তিনি বলেন, ‘আমি জানি ব্রিটিশ জনগণের পক্ষে আমাকে ক্ষমা করা কঠিন, কারণ তারা ইসলামিক স্টেটের হামলার ভয়ে দিন কাটিয়েছেন, অনেকে ইসলামিক স্টেটের কারণে তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। আমি জানি তাদের পক্ষে আমাকে ক্ষমা করা কঠিন’।

‘তারপরও আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে বলতে পারি, আমি যদি এখানে আসার কারণে কাউকে আহত করে থাকি, তার জন্য আমি সত্যি সত্যি দুঃখিত’।

শামীমা বেগম পূর্ব লন্ডনের সেই তিন কিশোরীর একজন, যারা ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারীতে সিরিয়ায় পাড়ি জমান ইসলামিক স্টেটে যোগ দেয়ার জন্য।

তার জন্ম লন্ডনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বাবা-মার ঘরে। যখন তিনি লন্ডন ছেড়ে যান তখন তার বয়স ছিল ১৫ বছর।

তিনি তুরস্ক হয়ে সিরিয়ার রাকায় পৌঁছান এবং সেখানে ইসলামিক স্টেটে যোগ দেয়া নেদারল্যান্ডসের এক যোদ্ধাকে বিয়ে করেন। এই ব্যক্তিই তার তিন সন্তানের পিতা।

২০১৯ সালে তাকে সিরিয়ার এক শরণার্থী শিবিরে নয় মাসের গর্ভবতী অবস্থায় খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে জন্ম নেয়া তার সন্তান পরে নিউমোনিয়ায় মারা যায়। এর আগেও তিনি তার আরও দুটি সন্তান হারিয়েছেন।

শামীমা বেগমকে খুঁজে পাওয়ার পর তৎকালীন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (এখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী) সাজিদ জাভিদ তার নাগরিকত্ব বাতিল করেন।

বি এন-০৭