সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
                        জুন ২৬, ২০২১
                        
                        ০২:০৫ পূর্বাহ্ন
                        	
                        আপডেট : জুন ২৬, ২০২১
                        
                        ০২:০৫ পূর্বাহ্ন
                             	
 
                        
             
    সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জে মন্দিরে ঢুকে সনাতন ধর্মালম্বীদের বিগ্রহের উপরে পা রেখে ছবি তোলে তা ফেসবুকে পোস্ট করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে আলিয়া মাদরাসায় পড়ুয়া এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযুক্তের নাম মো. ফাহিম আহমেদ (১৭)। সে ছাতক উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়নের সিংচাপইড় গ্রামের মো. রিপন মিয়ার ছেলে।
যদিও তার বাবা জানিয়েছেন, তারাই ফাহিমকে পুলিশে কাছে সোপর্দ করেছেন। ফাহিম আহমেদ সিংচাপইড় আলিয়া মাদরাসার ১০ম শ্রেণির ছাত্র বলে জানিয়েছেন তার বাবা মো. রিপন মিয়া।
ফাহিমের ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট শুক্রবার সুনামগঞ্জ জেলায় ভাইরাল হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন। শুক্রবার দুপুরে ছাতকের জাউয়াবাজার অভিযোগ কেন্দ্রের পুলিশ ফাহিম আহমেদকে গ্রেপ্তার করতে সিংচাপইড় গ্রামে অভিযান চালায়। তাকে না পেয়ে তার পরিবার ও গ্রামের লোকজনকে ফাহিমকে দ্রুত পুলিশের কাছে সোপর্দ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। এরপর তার আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের লোকজন তাকে পার্শ্ববর্তী জগন্নাথপুর থেকে ডেকে এনে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় ছাতক-দোয়ারাবাজার সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার বিল্লাল হোসেনের কাছে সোপর্দ করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে অভিযুক্ত ফাহিম আহমেদের পিতা মো. রিপন মিয়া বলেন, আমরা পরিবারের সকলে ফাহিমকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছি। এ ঘটনায় আমরা নিজেরা দুঃখিত এবং মর্মামহত। আল্লাহ-রাসুলের নিষেধ আছে অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার ব্যাপারে। যার যার ধর্ম সে পালন করবে। ফাহিম অপরাধ করেছে, তাই আমরাই তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি।
প্রসঙ্গত, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামের শ্রীশ্রী লোকনাথ মন্দিরের ভেতরে ঢুকে বিগ্রহের উপরে পা রাখা অবস্থায় একাধিক ছবি তোলে ফাহিম। এরপর এসব ছবি সে ফেসবুকে পোস্ট করলে ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামে মামা জিল্লুল হকের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল ছাতকের সিংচাপইড় গ্রামের ফাহিম আহমেদ। এরপর আরও দুইজনকে সঙ্গে নিয়ে একই গ্রামের শ্রীশ্রী লোকনাথ মন্দিরে যায় সে। তারা মন্দিরের ভেতরে ১৫/২০ মিনিট সময় অবস্থান করে। মন্দিরের পুরোহিত অদ্বৈত চক্রবর্তী তাদের বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে তারা নিজেদের বাড়ি ছাতক বলে জানায়। এ সময় ফাহিম মন্দিরের ভেতরে শ্রী ণৃসিংহ দেব এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কালীয়দমন বিগ্রহের উপরে পা রেখে ছবি তোলে। কিন্তু মন্দিরের সিসি ক্যামেরা নষ্ট থাকায় এবং পুরোহিত বা অন্য কারও নজরে আসেনি বিষয়টি। পরে ফাহিম আহমেদ বিগ্রহের উপরে পা রাখার ছবি নিজের ফেসবুকে পোস্ট করে। ফাহিমের ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়লে পোস্টটি মুছে ফেলে সে। এ ঘটনায় ফাহিমের বিরুদ্ধে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করে ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামের শ্রীশ্রী লোকনাথ মন্দির পরিচালনা কমিটি।
সিংচাপইড় আলিয়া মাদরাসার কম্পিউটার শিক্ষক মো. খালেদুল ইসলাম বলেন, ফাহিম আহমেদ মাদরাসার ১০ম শ্রেণির ছাত্র। শুনেছি সে না কি ফেসবুকে কি একটা পোস্ট দিয়েছিল। পরে সেটা ডিলিট করে ক্ষমা চেয়েছে ও দুঃখ প্রকাশ করেছে। শুক্রবার বিকেলে তার পরিবারের লোকজন তাকে পুলিশের কাছে দিয়েছেন।
পাগলা গ্রামের বাসিন্দা দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুরঞ্জিত চৌধুরী টপ্পা বলেন, ফাহিমের মামা জিল্লুল হক আমাদের জানিয়েছেন, তাদের ভাগ্নে ফাহিম বৃহস্পতিবার তাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। এ ঘটনায় তার মামা দুঃখ প্রকাশ করেছেন ও মর্মাহত হয়েছেন।
ব্রাহ্মণগাঁও শ্রীশ্রী লোকনাথ মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি নান্টু দাস বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে তিন যুবক মোটরসাইকেলযোগে মন্দির দেখতে এসেছিল। মন্দিরের পুরোহিতকে তারা জানিয়েছে তাদের বাড়ি ছাতকে। তারা মন্দিরে ১৫/২০ মিনিট সময় ছিল। এ সময় তারা ছবি তুলেছে কি না কেউ দেখতে পায়নি। শুক্রবার সকালে হঠাৎ করে ফেসবুকে ছবি প্রচার হওয়ার পর বিষয়টি দেখতে পাই। কেউ মন্দির পরিদর্শন করতে এসে এভাবে আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করবে এটা আমরা কল্পনাও করিনি।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মুক্তাদির আহমদ বলেন, লোকনাথ মন্দিরের বিগ্রহের উপরে পা রাখার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার ঘটনায় থানায় অভিযোগ হয়েছে। ফেসবুকে ছবি পোস্টকারী ফাহিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এএম/আরআর-০৭