আমির হোসাইন, শাল্লা
                        মার্চ ২৩, ২০২১
                        
                        ১১:৩৭ অপরাহ্ন
                        	
                        আপডেট : মার্চ ২৪, ২০২১
                        
                        ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন
                             	
                        
            
    সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধে চলছে দুর্নীতির মচ্ছব। ভেসে উঠেছে অক্ষত বাঁধে কাজের অনুমোদন দিয়ে টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়ার চিত্র। প্রকৃত কৃষকদের মাধ্যমে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণকল্পে ২০১৮ সাল থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) প্রথা চালু করার ফলে গত ৩ বছর যাবৎ বাঁধগুলোতে প্রচুর পরিমাণ মাটি পড়েছে। এতে অনেকগুলো বাঁধ এখনও অক্ষত রয়েছে। যে কারণে বাঁধের কাজের সংখ্যা কমে যাওয়ার কথা। কিন্ত তা না হয়ে হয়েছে উল্টো।
গতবছর শাল্লায় ১৩৭টি বাঁধের কাজ হলেও এ বছর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ১৫৬টি বাঁধের কাজ। আর এখানে রয়েছে অনেক অক্ষত বাঁধ। এই অক্ষত বাঁধগুলোতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মোটা অংকের টাকা এবং প্রতিটি বাঁধ থেকে দেড় লাখ টাকা করে অগ্রিম ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন কোনো বাঁধ নেই যে বাঁধের কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা দুর্নীতি করেননি। আর পিআইসি সভাপতিরাও নামমাত্র কাজ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
শাল্লা এখন সরগরম এসব দুর্নীতির আলোচনায়। কিন্তু তাতেও টনক নড়ছে না দুর্নীতিবাজদের। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসও) আবদুল কাইয়ূমের সঙ্গে আলাপ করতে চাইলে তিনি ব্যস্ততার অজুহাত দেখান।
সরেজমিনে বাঁধে গিয়ে দেখা যায়, পিআইসি সভাপতিরা যার যার ইচ্ছামতো কাজ করছেন। কেউ বাঁধের গোড়া কেটে মাটি তুলছেন, কেউ বালি মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করছেন, আবার কেউ দুরমুজ ছাড়াই বাঁধ নির্মাণ করছেন। কিন্ত এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলীর কোনো খেয়াল নেই। এমন কিছু অক্ষত বাঁধের সন্ধান পাওয়া গেছে, যে বাঁধগুলোতে নামমাত্র কাজ করেই দায় সারছেন পিআইসি সভাপতিরা। বাঁধগুলোর মধ্যে রয়েছে ৬, ৮, ২০, ২৩, ১০৫, ১০৬, ১০৭, ১২৯, ১৩০ এবং ১৩২ নম্বর বাঁধ। এগুলোতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৩৮ লাখ ২২ হাজার টাকা। এছাড়া আরও অনেক অক্ষত বাঁধে কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
২০ নম্বর বাঁধ এলাকার কৃষক হরিনগর গ্রামের রাজু দাস ও শাওন দাসসহ অনেকেই বলেন, এটি একটি অক্ষত বাঁধ। এ বছর এই বাঁধে কাজের কোনো প্রয়োজন ছিল না। মাটি তোলার গর্তগুলো দেখলেই বোঝা যায় কতটুকু মাটি ওঠানো হয়েছে। পিআইসি সভাপতি কোনো জায়গায় ৫ ইঞ্চি, কোনো জায়গায় ৬ ইঞ্চি মাটি ফেলেই পুরো বাঁধে প্রলেপ দিয়েছেন। নামমাত্র কাজ করেই হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রায় ১৩ লাখ টাকা।
১০৬ নম্বর বাঁধ এলাকার কৃষক খল্লি গ্রামের রঞ্জিত দাসসহ অন্য কৃষকদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ১০৫, ১০৬ এবং ১০৭ নম্বর প্রকল্পের বাঁধ তিনটি সম্পূর্ণ অক্ষত। সাধারণ বর্ষায় এগুলো পানিতে ডুবে না। এই বাঁধগুলোর মধ্যে কিছুটা মাটি ফেলার একমাত্র জায়গা ১০৬ নম্বর বাঁধের ক্লোজার শাউরির খাল এলাকার পিআইসি সভাপতি অরিন্দম চৌধুরীকে এই বাঁধের গোড়া থেকে মাটি উঠাতে আমরা নিষেধ করেছি। কিন্ত তিনি নিষেধ না মেনে রাতের বেলা লুকিয়ে এক্সকেভেটর দিয়ে বাঁধের গোড়া কেটে মাটি তুলেছেন। এখন অক্ষত বাঁধকে ক্ষত করে ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছেন। পিআইসি সভাপতিরা এই পুরাতন বাঁধগুলো কেটে কেটে নামমাত্র মাটি দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পিআইসি সভাপতি অরিন্দম চৌধুরী বলেন, 'রাতে নয়, আমরা দিনেই মাটি কেটেছি।'
আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবদুল কাইয়ূমের মুঠোফোনে কল দিয়ে বাঁধ সম্পর্কে কথা বলতে চাইলে তিনি কল কেটে দেন। এরপর বার বার চেষ্টা করার পরও তিনি কল ধরেননি।
এএইচ/আরআর-০১