প্রস্তুত কমলগঞ্জের ১৫২টি পূজামন্ডপ, নেই উৎসবের আমেজ

সজীব দেবরায়, কমলগঞ্জ


অক্টোবর ২০, ২০২০
১১:০২ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ২০, ২০২০
১১:০২ অপরাহ্ন



প্রস্তুত কমলগঞ্জের ১৫২টি পূজামন্ডপ, নেই উৎসবের আমেজ

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় দেবী দুর্গাকে বরণ করতে প্রস্তুত পূজামন্ডপগুলো। আর মাত্র একদিন পরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। চারদিকে পূজা পূজা গন্ধ। চলমান করোনাভাইরাস মহামারিতে দুর্গাপূজাকে ঘিরে আগের সেই উৎসবের আমেজ না থাকলেও দুর্গোৎসবকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে মন্ডপগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে উপজেলার অধিকাংশ পূজামন্ডপে শেষ হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। এখন রঙ-তুলির আঁচড়ে সৌন্দর্যবর্ধণের কাজ চলছে। মাটির কাজ শেষ করে রঙ-তুলির খেলায় প্রতিমাকে সজ্জিত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মন্ডপগুলোর মৃৎশিল্পীরা।

এদিকে এবার করোনার কারণে পূজার আয়োজন সীমিত করতে বলা হয়েছে। আয়োজকদের ২৬টি নির্দেশনা অনুসরণ ও প্রতিপালনের কথা বলেছে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মহালয়ার অনুষ্ঠান সীমিত করা, নিচু শব্দে ভক্তিমূলক সংগীত ছাড়া অন্য সংগীত বাজানো থেকে বিরত থাকা, সবধরণের সাজসজ্জা ও মেলার আয়োজন বন্ধ রাখা, আরতি প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিহার করা।

এবারের পূজার প্রতিমায় ব্যতিক্রম ভাব আনার চেষ্টা করেছে বেশ কয়েকটি পূজামন্ডপ। তবে মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এবার মন্ডপগুলোতে তেমন আলোকসজ্জা দেখা যাবে না। সরকারি নির্দেশনা মেনে সাজানো হচ্ছে মন্ডপগুলো। পূজামন্ডপগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি বিভিন্ন নির্দেশনা মানতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার খরচ অনেকটা বেড়ে গেছে। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর ভিন্ন নির্দেশনা থাকায় অনেকটা হিমশিম খাচ্ছেন আয়োজকরা। এবারের পূজায় থাকছে না জাঁকজমকপূর্ণ কোনো অনুষ্ঠান। এরপরও থেমে নেই কোনো কাজ। সরকারি নির্দেশনা মেনে সাজানো হচ্ছে মন্ডপ ও এর আশপাশ। হাতে আর মাত্র একদিন বাকি। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাত-দিন চলছে পূজার প্রস্তুতি।

কমলগঞ্জ উপজেলায় এবার মোট পূজামন্ডপের সংখ্যা ১৫২টি। তার মধ্যে কমলগঞ্জ পৌরসভায় ৭টি, ১ নম্বর রহিমপুর ইউনিয়নে ১৯টি, ২ নম্বর পতনউষার ইউনিয়নে ১৬টি, ৩ নম্বর মুন্সীবাজার ইউনিয়নে ১৫টি, ৪ নম্বর শমসেরনগর ইউনিয়নে ১৪টি, ৫ নম্বর কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নে ৭টি, ৬ নম্বর আলীনগর ইউনিয়নে ২০টি, ৭ নম্বর আদমপুর ইউনিয়নে ১৩টি, ৮ নম্বর মাধবপুর ইউনিয়নে ১৮টি ও ৯ নম্বর ইসলামপুর ইউনিয়নে ১০টি পূজামন্ডপ রয়েছে। আর মোট ১৩টি ব্যক্তিগত মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। 

কমলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, 'স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারি স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত গাইড লাইন মেনে দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য কমলগঞ্জ উপজেলার প্রত্যেকটি পূজামন্ডপকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। দুর্গাপূজা সার্বিক তদারকির জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কন্টোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। পূজামন্ডপগুলোতে যাতে একত্রে বেশি জনসমাগম না হয়, সেদিকে বিশেষ নজরদারির জন্য মন্ডপ কমিটিগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'করোনার কারণে প্রতিটি মন্ডপে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। দর্শনার্থী, ভক্ত, পুরোহিতসহ সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। মন্ডপে নারী ও পুরুষদের যাতায়াতের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকতে হবে। আতশবাজি ও পটকা ব্যবহার করা যাবে না।' 

কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান ও ওসি (তদন্ত) সুধীন চন্দ্র দাস জানান, কমলগঞ্জের ১৫২টি পূজামন্ডপে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সবক'টি পূজামন্ডপ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা জোরদার করা হয়েছে। পূজামন্ডপগুলোর নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশের ১০টি মোবাইল টিম পূজা চলাকালীন সময়ে সার্বক্ষণিক কাজ করবে। এবার পূজা চলাকালীন সময়ে মন্ডপগুলোতে নিরাপত্তা রক্ষায় স্থায়ীভাবে আনসার বাহিনী না থাকায় মন্ডপ কমিটিগুলোকে বিভিন্ন শিফটের মাধ্যমে অধিক সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'

কমলগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র দাস বলেন, 'শারদীয় দুর্গাপূজা আনন্দঘন পরিবেশে ও শান্তিপূর্ণভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উদযাপনের লক্ষ্যে আমরা সর্বপ্রকার সতর্কতা অবলম্বন করছি। সার্থকভাবে পূজা করার জন্য মন্ডপ কমিটিগুলোকে অভিহিত করেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি অধিকতর নিরাপত্তা জোরদারের জন্য প্রত্যেক মন্ডপে মন্ডপ কমিটির উদ্যোগে অধিক সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে আয়োজকদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।'

 

এসডি/আরআর-০৭