উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর
সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০
১০:৪৯ অপরাহ্ন
আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০
১০:৪৯ অপরাহ্ন
সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ ভবনের আধা কিলোমিটার দূরের ইলাশপুর গ্রামে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রণজিৎ ভট্টাচার্য্যের বাড়িতে ভাড়া থাকেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের নাজির প্রভাংশু শেখর দাস। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাব খাটিয়ে ওই প্রবাসীর বাড়িতে সরকারি টিউবওয়েল স্থাপন করে দিয়েছেন প্রভাংশু শেখর। শুধু তাই নয়, সরকারি সোলার প্যানেলও স্থাপন করা হয়েছে ওই বাড়িতে। এগুলো কিভাবে করা হয়েছে তা জানা না গেলও ওই বাড়ির পার্শ্ববর্তী এক ধনাঢ্য ব্যক্তির বাড়িতে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে সম্প্রতি একটি সরকারি টিউবওয়েল স্থাপন করে দিয়েছেন ওই প্রভাংশু শেখর।
জানা যায়, উপজেলা নন-গেজেটেড এমপ্লয়িজ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক প্রভাংশু শেখর দাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের নাজির হলেও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন প্রকল্প।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, হতদরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতদের নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে উপজেলা পর্যায়ে এডিবি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, সিলেট জেলা পরিষদ ও এলজিএসপি’র মাধ্যমে সরকারি টিউবওয়েল স্থাপন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা। কিন্তু তাদের পাশ কাটিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মচারী প্রভাব খাটিয়ে টিউবওয়েল স্থাপন করাচ্ছেন। দীর্ঘদিন একই উপজেলায় কর্মরত থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের নাজির প্রভাংশু শেখর দাস ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত একাধিক কর্মচারী সরকারি সৌর বিদ্যুৎ ও টিউবওয়েল নিয়ে শুরু করেছেন অনৈতিক বাণিজ্য। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে সিন্ডিকেট।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, একইভাবে উপজেলার ইলাশপুর গ্রামের দুইজন শিক্ষকের বাড়িতেও বসেছে সরকারি ডিপ টিউবওয়েল। একজনের ঘরে আবার লাগানো হয়েছে সৌর বিদ্যুৎ। গুপ্তপাড়া গ্রামের এক শিক্ষকও প্রভাংশু শেখর দাসের সঙ্গে সখ্যতা থাকায় লাভবান হয়েছেন। যদিও তারা কেউই সরকারি এসব সুবিধা ভোগ করার মতো অস্বচ্ছল বা সুবিধাবঞ্চিত নন।
এমন অভিযোগের ব্যাপারে ওসমানীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের নাজির প্রভাংশু শেখর দাস বলেন, 'এসব আমার জানা নেই। এটি আমার ডিপার্টমেন্ট নয়। তাই মন্তব্য করা ঠিক হবে না।'
ওসমানীনগরে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. লায়েছ মিয়া তালকুদার বলেন, 'উপজেলা পর্যায়ে এডিবি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, জেলা পরিষদ ও এলজিএসপির মাধ্যমে টিউবওয়েল স্থাপন বাস্তবায়িত হয়। আমরা শুধু জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন টিউবওয়েলগুলো অত্যন্ত স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করি। আমার জানামতে শুধু জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বরাদ্দকৃত টিউবওয়েল স্থাপনে কোনো অনিয়ম হয়নি। তারপরও খোঁজ নেব। অনিয়ম পেলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাহমিনা আক্তার বলেন, 'সরকারী টিউবওয়েল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায়। সেগুলো জনপ্রতিনিধিরা বিতরণ করে থাকেন। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের কারও হাত নেই বা এখানকার কেউ জড়িত থাকার কথাও নয়। তারপরও কেউ অভিযোগ দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।'
ইউডি/আরআর-০৩